মহামারীকালে ভারতীয় নারীরা ঝুঁকছেন পুঁজিবাজারের দিকে

কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্যে নিজেদের আয় বাড়াতে ভারতের ‍অনেক নারী তাদের জমানো অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেছেন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Nov 2020, 10:15 AM
Updated : 28 Nov 2020, 10:16 AM

বিবিসি শনিবার প্রকাশিত তাদের এক প্রতিবেদনে এমন নারীদের গল্প তুলে এনেছে।

এমনই এক নারী ৩১ বছরের সকিনা গান্ধী। যিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে জনসংযোগ (পিআর) কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত আছেন।

সকিনা এ বছরের আগ পর্যন্ত নিজের জমানো অর্থ শুধুমাত্র মিচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করতেন। পুঁজিবাজারে সরাসরি বিনিয়োগ না করে মিচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ তার কাছে অনেক বেশি নিরাপদ মনে হত।

কিন্তু গত মার্চে করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিস্তার রোধে ভারতে যখন কঠোর লকডাউন শুরু হয় তখন হঠাৎ করেই হাতে প্রচুর সময় পেয়ে যান সকিনা। এই সময়ে ঘরে চুপচাপ বসে না থেকে তিনি পুঁজিবাজারে নজর রাখা শুরু করেন।

সকিনা বলেন, ‘‘আমার হাতে পুঁজিবাজারে নজর দেওয়ার মত সময় ছিল। প্রথম ১৫ দিন আমি শুধু মনযোগ দিয়ে বাজার লক্ষ্য করেছি। আমি বেশ কিছু শেয়ারের তালিকা করি এবং সেগুলো কী ধরনের আচরণ করছে সেটা পর্যবেক্ষণ করতে থাকি। পরে কয়েকজন সহকর্মীর সঙ্গে পরামর্শ আমি কিছু শেয়ার কিনি।”

সকিনার এই বিনিয়োগ লাভজনক বলে প্রমাণিত হয়েছে। কারণ, জনমনে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আতঙ্ক এবং লকডাউনের ধাক্কায় ভারতের অর্থনীতি নিম্নমুখী হয়ে পড়ায় ওই সময় শেয়ারের দামও পড়ে যায়। 

কিন্তু ওই অবস্থা খুব বেশিদিন থাকেনি। বাজারে আবার বিনিয়োগকারীরা ফিরতে শুরু করে। বাড়তে থাকে শেয়ারের দাম। এছাড়া নির্ভরযোগ্য শেয়ার বাজারে ওঠা পতনের ঝড় সাহসের সঙ্গে মোকাবেলা করে। কিছু কিছু কোম্পানির শেয়ারের দাম যথেষ্ট বেড়ে যায়।

এখন ভারতে কোভিড-১৯ সংক্রমণ এবং মৃত্যু দুটোই কমতে শুরু করেছে। শিগগির টিকা পাওয়ার প্রতিশ্রুতিও পাওয়া গেছে। ফলে শেয়ার বাজারের দাম বৃদ্ধি অব্যাহত আছে।

মহামারীতে ভারতের প্রচুর মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে নেতিবাচক ধারা দেখা দিয়েছে। এছাড়াও আরো নানা কারণে ভারতের অর্থনীতিতে ভারসাম্যহীনতা দেখে দিলেও পুঁজিবাজারে ক্ষুদ্র বিনিয়োগ কিন্তু বাড়ছে।

সকিনার মত নারীরা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে নিজেদের সঞ্চয় বাড়িয়ে নিতে চাইছেন।

ছবি: সকিনা গান্ধী

একটি স্টকব্রোকিং ফার্মের সহ প্রতিষ্ঠাতা নিখিল কামাথ বলেন, ‘‘পুঁজিবাজারে উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় নতুন নারী বিনিয়োগকারী বেড়েছে।”

তিনি জানান, এ বছরের শুরুতে ভারতে কোভিড-১৯ মহামারীর প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর থেকে তাদের ফার্মে ১৫ লাখের বেশি নতুন গ্রাহক যুক্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে দুই লাখ ৩৫ হাজারের বেশি নারী বিনিয়োগকারী। যা তাদের ফার্মের সঙ্গে যুক্ত থাকা মোট নারী বিনিয়োগকারীর প্রায় অর্ধেক। তাদের ফার্মে নতুন করে যুক্ত হওয়া নারী বিনিয়োগকারীদের গড় বয়স ৩৩ বছর।

আরেক স্টকব্রোকিং ফার্মের এক কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেন, মহামারী কালে তাদের ফার্মে নারী বিনিয়োগকারীর সংখ্যা তিনগুণ বেড়েছে।

বিবিসি জানায়, গত এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে ভারত প্রায় ৬৩ লাখ নতুন ‘ডিমেট একাউন্ট’ খোলা হয়েছে। গত বছর একই সময়ের তুলনায় যা প্রায় দ্বিগুণ। নতুন করে যারা একাউন্ট খুলছেন তাদের অনেকেই তরুণ নারী বিনিয়োগকারী।

এরকম একজন ৩৬ বছরের ঋতিকা শাহ। ঋতিকার পরিবার দীর্ঘদিন ধরেই পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে। কিন্তু তিনি নিজে কখনো এর আগে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের আগ্রহ পাননি।

তিনি বলেন, ‘‘আমি পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য সঠিক সময়ের অপেক্ষা করছিলাম। এই মহামারীর কারণে নিজের অর্থ কোথায় বিনিয়োগ করবো তা নিয়ে পরিকল্পনা করার সময় আমি পেয়েছি। আমি পুঁজিবাজার নিয়ে গবেষণার, বাজার পর্যবেক্ষণ করার এবং সেটি অনুসরণ করার সময় পেয়েছি।”

ভারতীয় নারীরা সাধারণ তাদের জমানো অর্থ ব্যবসায় বিনিয়োগ না করে সোনা কেনা বা অর্থ কোথাও ‘ফিক্সড’ রাখার মত নিরাপদ বিনিয়োগে বেশি আগ্রহী থাকে।

কিন্তু এখন ‘ফিক্সড ডিপোজিট’ বা ‘মিচুয়াল ফান্ডে’ বিনিয়োগ  আর অতটা লাভজন নেই। ফলে নিরাপদ বিনিয়োগ হলেও মানুষ এই খাতের উপর থেকে আগ্রহ হারাচ্ছে। যে কারণে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ বাড়ছে। সোনার বাজার চড়া।

প্রযুক্তগত উন্নয়নের কারণে ঘরে বসেই এখন শেয়ার বাজারে বিনেয়োগ এবং সরাসরি বাজার পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ তৈরি হওয়ায় এবং বিনিয়োগ ও লেনদেন প্রক্রিয়া সহজ হয়ে যাওয়াও ক্ষুদ্র বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে সহায়তা করেছে।

স্টকব্রোকিং ফার্মগুলোও এখন বিনিয়োগকারীদের বাজার সম্পর্কে সঠিক তথ্য ও ধারণা দিচ্ছে। তাদের ওয়েবসাইটে গ্রাহকদের অবাধ প্রবেশের সুযোগ দেওয়াও এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে বলে মনে করে ভারতের শেয়ার বাজারের উপর নজরদারি করা প্রতিষ্ঠান এসইবিআই।

এসইবিআই ‘ডিমেট একাউন্ট’ খোলার প্রক্রিয়াও অনেক সহজ করে দেওয়ায় বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে উৎসাহিত হচ্ছেন। এখন ই-সাক্ষর করেই একাউন্ট খোলা যায় এবং ডিজিটাল লকারের ব্যবস্থা হয়েছে। ফলে কাগজপত্রের আনুষ্ঠানিকতা ঘরে থেকেই দ্রুত সম্পন্ন করা সম্ভব হচ্ছে।

সকিনা বলেন, তিনি নিয়মিত পত্রিকায় শেয়ার বাজারের খবর রাখেন। এছাড়া পছন্দের কোম্পানির যেকোনো খবর সঙ্গে সঙ্গে জানতে ‘গুগল এলার্ট’ ব্যবহার করেন।

‘‘এটা আমার অর্থ। তাই আমার স্বামী বা অন্য কারো এটা নিয়ে কিছু বলার নেই। আমি ভাবলাম, একটু ঝুঁকি নিয়ে দেখাই যাক কি হয়। এবং আমার ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি লাভজনক হয়েছে।