কোভিড-১৯: কেরালায় সরকারি হিসাবের ‘দ্বিগুণ’ মৃত্যু

গত মার্চ থেকে স্বেচ্ছাসেবকদের একটি দল ভারতের দক্ষিণের রাজ্য কেরালার স্থানীয় পত্রিকা ও নিউজ চ্যানেলে কোভিড-১৯ এ মৃত্যুর খবর এবং প্রশাসন থেকে এই সময়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর একটি তালিকা তৈরি করেছে।

নিউজডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Nov 2020, 06:13 AM
Updated : 20 Nov 2020, 06:13 AM

আর তাতেই এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর প্রকৃতি সংখ্যার সঙ্গে সরকারি হিসাবে বড় ধরনের গোলমালের চিত্র বেরিয়ে আসে।

বিবিসি শুক্রবার এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

ডা. অরুণ মাধভন নামে একজন চিকিৎসক ওই স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তারা গত মার্চ থেকে প্রতিদিন স্থানীয় সাতটি পত্রিকার জেলা সংস্করণ এবং পাঁচটি নিউজ চ্যানেলের খবর দেখে সেখান থেকে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তির সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে থাকেন।

এছাড়াও তারা এ সময়ে মারা গেছেন এমন সব ব্যক্তি এবং রাজ্যে কোভিড-১৯ মৃত্যুর দৈনিক তালিকাও খুঁটিয়ে পরীক্ষা করেন।

গত বুধবার তারা এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী, কেরালায় বুধবার রাত পর্যন্ত কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে তিন হাজার ৩২০ জন মারা গেছেন।

অথচ সরকারি হিসাবমতে সেখানে মোট মৃত্যু এক হাজার ৯৪২ জন।

গত জানুয়ারিতে কেরালায় প্রথম কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়। প্রথম মৃত্যু হয় মার্চে।

এ নিয়ে ইউনিভার্সিটি অব টরেন্টোর গবেষক প্রভাত ঝা বলেন, ‘‘এটা কোনো কিছু গণনার খুবই কার্যকর পদ্ধতি।”

প্রভাত ঝার নেতৃত্বেই ভারতের ‘মিলিয়ন ডেথ স্টাডি’ চলছে। এটি বিশ্বে অকাল মৃত্যু নিয়ে হওয়া গবেষণাগুলোর অন্যতম।

বিবিসিকে প্রভাত ঝা বলেন, ‘‘ডা. মাধভন আমাকে বলেছেন সেখানে অনেক মৃত্যু হচ্ছে যেটা আমরা জানতে পারছি না। সরকারি হিসাবে মৃত্যুর সংখ্যা প্রকৃত মৃত্যুর অর্ধেকের সামান্য বেশি। বাকিদের মৃত্যুর জন্য অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদী রোগের কথা বলা হয় বা মৃত্যুর কারণ উল্লেখ করা হয় না।”

ভারতে কোভিড-১৯ শনাক্তের সংখ্যা প্রায় ৯০ লাখ, যা যুক্তরাষ্ট্রের পর সর্বোচ্চ। দেশটিতে এখন পর্যন্ত এ রোগে এক লাখ ৩১ হাজার ৫৭৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।

সংক্রমণ বিবেচনায় ভারতে মৃত্যুর হার অনেক কম। সেখানে মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫ শতাংশের নিচে, যা বিশ্বে থেকে কম।

কয়েকজন বিশেষজ্ঞ মনে করেন, ভারতে এত নিম্ন মৃত্যুহার আসলে দেশটির প্রকৃত চিত্র তুলে ধরছে না। বেশিরভাগ রাজ্যে অনেক মৃত্যু গণনার বাইরে থেকে যাচ্ছে।

তারা বলেন, কোভিড-১৯ আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা সন্দেহভাজন আক্রান্তরা শেষ পর্যন্ত গণনায় আসছেন না। এছাড়া অবহেলায় অনেক মৃত্যুর প্রকৃত কারণ উল্লেখ করা হচ্ছে না।

ভারতে এই যখন অবস্থা তখন শুরু থেকেই কেরালা রাজ্য সরকার কোভিড-১৯ নিয়ে তথ্য সরবরাহে স্বচ্ছতা দেখাচ্ছেন বলে দাবি করা হচ্ছিল। অথচ সেখানেই এখন তথ্যের এতটা গড়মিল পাওয়ার যাচ্ছে।

ডা. মাধভনের বিশ্বাস, সেখানে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে অনেক মৃত্যুই এভাবে খবরের আড়ালে রয়ে গেছে।

তিনি বলেন, গত অক্টোবরে ৬৫ থেকে ৭৮ বছরের তিন বৃদ্ধ কোভিড-১৯ এর সব উপসর্গ নিয়ে তার ক্লিনিকে ভর্তি হয়েছিলেন এবং চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

‘‘অথচ কোনো সংবাদমাধ্যমে বা সরকারি হিসাবে তাদের মৃত্যুর খবর আসেনি। আমরা সবাই আসলে অনেক মৃত্যু সম্পর্কে জানতে পারছি না, সরকারের অজানা থাকছে সবচেয়ে বেশি।”

এ বিষয়ে রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের শীর্ষ আমলা রাজিভ সদানন্দন ‘কিছু মৃত্যু তালিকার বাইরে’ রয়ে যাচ্ছে বলে স্বীকার করেন।

তবে তিনি এও বলেন, ‘‘অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদী রোগে ভোগা ব্যক্তি যাদের কোভিড-১৯ সংক্রমণও ধরা পড়েছে তাদের মৃত্যু আমরা গণনা করছি না বলে বলা হচ্ছে। এটা আসলে ভুল। কিভাবে অন্যান্য মৃত্যু থেকে এ রোগে মৃত্যু আলাদা করা হবে সে বিষয়ে খুব স্পষ্ট দিকনির্দেশনা দেওয়া আছে।”

ডা. ঝা বলেন, ‘‘প্রায় সারা দেশেই করোনাভাইরাসে মৃত্যুর ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ গণনার বাইরে থেকে যাচ্ছে। ভারতের পৌরসভাগুলোর উচিত প্রত্যেক সপ্তাহে মৃতের তালিকা প্রকাশ করা এবং গত বছরের তুলনায় এ বছর মৃত্যুর সংখ্যা কতটা বেড়েছে তা খুঁজে বের করা।

‘‘স্বাভাবিকের চেয়ে এ বছর মৃত্যুর সংখ্যা যে পরিমাণে বেড়েছে, ধরে নেওয়া যায় তাদের অনেকের মৃত্যুর কারণ কোভিড-১৯।”