ভারতে ধর্ষিতার মৃতদেহ ‘পরিবারের সম্মতি ছাড়াই’ দাহ

ভারতের উত্তর প্রদেশের হাথরাসে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার তরুণীর মৃতদেহ পরিবারের সদস্যদের সম্মতি ছাড়াই পুলিশ কর্মকর্তারা জোর করে দাহ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Sept 2020, 10:00 AM
Updated : 30 Sept 2020, 10:00 AM

১৯ বছর বয়সী ওই দলিত তরুণী মাঠে ঘাস কাটতে গিয়ে উচ্চ বর্ণের চার পুরুষের বর্বরতার শিকার হয়েছিলেন। গুরুতর আহত ওই তরুণী দুই সপ্তাহ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর মঙ্গলবার সকালে তার মৃত্যু হয়।

অভিযুক্ত চার ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ; বিচারিক কার্যক্রম শুরু করতে একটি দ্রুত বিচার আদালতও গঠন করা হয়েছে বলে বিবিসি জানিয়েছে। 

পরিবারের সদস্যদের সম্মতি নেওয়া ছাড়া কেন ধর্ষণের শিকার তরুণীর মৃতদেহ তড়িঘড়ি দাহ করা হয়েছে তা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। পুলিশের নেওয়া এ ‘অমানবিক সিদ্ধান্তের’ ব্যাখ্যাও দাবি করেছেন মানবাধিকার আন্দোলনকারীরা।

স্থানীয় সাংবাদিক অভিষেক মাথুর জানান, মৃতদেহ দাহ করার সময় পুলিশ ওই তরুণীর পরিবারের সদস্য ও গণমাধ্যমকে দূরে সরিয়ে রেখেছিল। অভিষেক নিজেও দূরে দাঁড়িয়েই অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া দেখেন।

তরুণীর মরদেহ মঙ্গলবার রাতে তাদের গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। তার ভাই জানান, মৃতদেহ নিয়ে আসার পরপরই পুলিশের কর্মকর্তারা পরিবারের সদস্যদের উপর যত দ্রুত সম্ভব মৃতদেহ সৎকারের জন্য চাপ দিতে থাকেন।

“যখন আমরা তাদের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করি, তারা তখন একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে মৃতদেহটি নিয়ে যায় এবং দাহ করে ফেলে,” বলেছেন তিনি।

প্রশাসনের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা অবশ্য তরুণীর ভাইয়ের এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। বলেছেন, মৃতদেহ নেওয়ার আগে পরিবারের সদস্যদের সম্মতি নেওয়া হয়েছিল।

অভিষেক জানান,শেষকৃত্যের আগে মৃতদেহ বাড়িতে নিয়ে কিছু আচার পালন করতে চেয়েছিলেন তার মা, কিন্তু তার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করা হয়।

“পরিবারের সদস্য, গণমাধ্যম ও বিক্ষুব্ধ জনতা যেন শ্মশানের কাছে না যেতে পারে সেজন্য পুলিশ মানববন্ধনের মতো করে প্রাচীর সৃষ্টি করেছিল,” বলেছেন এ সাংবাদিক।

তরুণীর ভাইয়ের অভিযোগ, পুলিশের কিছু কিছু কর্মকর্তা তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও নির্দয় আচরণ করেছেন।

“তারা আমাদের, আমাদের বাবা-মায়ের অনুমতি ছাড়াই মৃতদেহ নিয়ে গেছে এবং দাহ করেছে। আমরা তাকে শেষবারের মতো দেখতেও পাইনি,” বলেছেন তিনি।

মৃতদেহ দেখার দাবি জানানোর সময় পুলিশ পরিবারের সদস্যদের অনেককে পিটিয়েছে বলেও দাবি তরুণীর ভাইয়ের। পুলিশের মারধর থেকে পরিবারের নারী সদস্যরাও বাদ পড়েননি, বলেছেন তিনি।

এসব অভিযোগ বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ কর্মকর্তাদের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে বিবিসি।

হাথরাসে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার এ তরুণীর মৃত্যুর ঘটনা ভারতজুড়েই ক্ষোভের সঞ্চার করেছে। বিভিন্ন দলিত সংগঠনের কর্মীরা হাথরাসের প্রধান বাজার বন্ধ করে দিয়ে যেসব পুলিশ কর্মকর্তারা পরিবারের সদস্যদের সম্মতি ছাড়াই মৃতদেহ দাহ করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

পুলিশ যেভাবে এ ধর্ষণ ও মৃত্যুর ঘটনার তদন্ত করছে তা নিয়েও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন তারা। ধর্ষণের ঘটনার পর প্রথম ১০ দিনে পুলিশ অভিযুক্ত কাউকে আটক করেনি বলে অভিযোগ তরুণীর ভাইয়ের।

“তাকে মৃত্যুর মুখে ফেলে রাখা হয়েছিল। সে ১৪ দিন লড়াই করেছে,” বলেছেন তিনি।

উত্তর প্রদেশের বেশ কয়েকজন শীর্ষ বিরোধীদলীয় নেতাও পরিবারের সম্মতি ছাড়া মৃতদেহ সৎকারের ঘটনাকে ‘অপমানজনক ও অন্যায়’ বলে অ্যাখ্যা দিয়েছেন।

হিন্দু ধর্মের বর্ণপ্রথা অনুযায়ী দলিতরা সবচেয়ে নিচু জাতের হওয়ায় ভারতের বিভিন্ন অংশে তাদেরকে ভয়াবহ নিপীড়ন ও নির্যাতনের শিকার হতে হয়। ভারতের বিভিন্ন আইনে এসব নিপীড়ন-নির্যাতন থেকে দলিতদের সুরক্ষা দেওয়ার বিধান থাকলেও দৈনন্দিন জীবনের নানান বৈষম্য থেকে এখনও তাদের মুক্তি মেলেনি।

ভারতে দলিতদের সংখ্যা প্রায় ২০ কোটি বলে ধারণা করা হয়।