লকডাউনে বন্ধ স্কুল: পাহাড়ে খোলা আকাশের নিচে পাঠ

করোনাভাইরাস মহামারীতে বিশ্বের অনেক দেশের মতো ভারতেও এখন সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। সময় পুষিয়ে নিতে কোথাও কোথাও বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে চলছে অনলাইনে ক্লাস। যদিও এ ধরনের ক্লাসে অংশ নেওয়ার সক্ষমতা নেই অনেকের, অনভ্যস্ততায় গলদঘর্ম হতে হচ্ছে শিক্ষকদেরও।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 August 2020, 09:46 AM
Updated : 5 August 2020, 09:46 AM

এমন পরিস্থিতিতে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের একটি শহর হাজির হয়েছে ‘অনবদ্য’ এক সমাধান নিয়ে।

বুদগাম জেলার দুধপাত্রি শহরের একদল শিক্ষার্থী এখন পাহাড়ের উপর উন্মুক্ত প্রান্তরকেই নতুন শ্রেণিকক্ষ বানিয়ে নিয়েছে বলে বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

শহরটির শিক্ষার্থীরা এখন প্রতিদিন সকালে জলস্রোত আর সেতু পেরিয়ে পাহাড়ের উপর তাদের ‘ক্লাসরুমে’ হাজির হয়; ছবির মতো সুন্দর তাদের শ্রেণিকক্ষের ব্যাকড্রপে থাকে বরফাচ্ছন্ন হিমালয় পর্বতমালা।

খোলা আকাশের নিচে এ পাঠ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি কোভিড-১৯ সংক্রমণ প্রতিরোধে কয়েক মাস ধরে চার দেয়ালের ভেতর আটকে থাকা অভিভাবকদেরও প্রাণভরে নিঃশ্বাস নেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে।

ভারতের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল কাশ্মীরে এরই মধ্যে ১৯ হাজারের বেশি মানুষের দেহে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে, মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৩৬৫ জনের। 

“বাসায় থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে যাওয়া এবং নিজেদের হতাশায় নিমজ্জিত করার চেয়ে এ ধরনের স্কুল আমাদের শিশুদের জন্য অনেক ভালো। কর্মকর্তাদের উচিত স্থানীয়দের সহযোগিতায় এ ধরনের আরও আরও স্কুল বানানো.” বলেছেন মুশতাক আহমেদ। মুশতাকের ছেলেও এখন এ ‘ওপেন এয়ার স্কুলে’ পড়ছে।

পাহাড়ি এলাকা হিসেবে কাশ্মীরের দুধপাত্রি এমনিতেই পর্যটকদের পছন্দের স্থান। তবে করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে চলতি গ্রীষ্মে পর্যটকদের দেখা মেলেনি। স্থানীয়রা তাই পর্যটন কেন্দ্র ও দর্শনীয় স্থানগুলোকে আপাতত অন্য কাজে ব্যবহারে কর্মকর্তাদের অনুরোধ করেছেন। 

“সুরক্ষা ব্যবস্থার কথা মাথায় রেখেই পাঠদান করা হচ্ছে। অনিশ্চিত আবহাওয়ার কারণে আমরা তাঁবু টানানোরও চেষ্টা করছি, যেন নিরবচ্ছিন্নভাবে ক্লাস নেওয়া যায়,” বলেছেন আঞ্চলিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রমজান ওয়ানি। 

বিবিসি বলছে, লকডাউনের মধ্যে ভারতের বিভিন্ন স্কুল অনলাইনে পাঠদানের চেষ্টা করলেও দুর্গম এলাকায় দ্রুতগতির ইন্টারনেটের অভাব, সরকারি স্কুলে তহবিল ঘাটতি এবং অনেক শিক্ষার্থীর স্মার্টফোন না থাকার কারণে বিকল্প এ পদ্ধতি কার্যকর হয়ে উঠছে না। এমনকী বেসরকারি স্কুলগুলোতেও এটি শ্রেণি বিভাজন উসকে দিচ্ছে। কারও কারও কাছে একাধিক স্মার্টফোন, ল্যাপটপ ও আইপ্যাড আছে; আবার কারও একটিও নেই।

সে কারণেই কাশ্মীরের দুধপাত্রির এ খোলা আকাশের নিচে স্কুলের ধারণাকে অনেকেই স্বাগত জানাচ্ছেন।

“এখানকার বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই কাশ্মীরের গুজ্জার-বাকারওয়াল সম্প্রদায়ের। তাদের (শিক্ষার্থী) স্কুলে আসার তাড়নাই এ পরিকল্পনাকে সফলতার রূপ দিয়েছে এবং অন্যান্য এলাকাতেও এ ধরনের স্কুলের চাহিদা তৈরি করছে,” বলেছেন দুধপাত্রির কমিউনিটি স্কুলে স্বেচ্ছায় কাজ করা এক শিক্ষক। 

মহামারীর আগে থেকেই স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেওয়া অনেক শিক্ষার্থীদের জন্যও নতুন এ ‘ওপেন এয়ার স্কুল’ সহায়ক হয়েছে বলে অনুমান কর্মকর্তাদের।

গত বছরের অগাস্টে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার সংবিধানে কাশ্মীরকে দেওয়া বিশেষ মর্যাদা বাতিল করলে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এ এলাকার সঙ্গে দিল্লির টানাপোড়েন আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সাম্প্রতিক সময়ে উপত্যকাটিতে অস্থিরতাও আগের তুলনায় বেশ বেড়েছে।

কর্মকর্তারা বলছেন, তাদের এ খোলা আকাশের নিচে স্কুল সামাজিক দূরত্ব, মাস্ক পরাসহ কোভিড-১৯ সংক্রমণ প্রতিরোধে দেওয়া সকল নির্দেশনাই মেনে চলছে। 

পাহাড়ের উপর উন্মুক্ত প্রান্তরের এসব স্কুলে কেবল একটাই অসুবিধা, বৃষ্টি। মাথার উপর মেঘ দেখা গেলেই শিশুরা নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছোটাছুটি শুরু করে দেয়। কখনো কখনো বৃষ্টির অঝোর ধারার শব্দও তাদের চিৎকার চেঁচামেচিতে হারিয়ে যায়।