ভারতে রেকর্ড আক্রান্ত-মৃত্যুর মধ্যে খুলছে অফিস, মল, রেস্তোরাঁ

ভারতে করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়া আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃত্যু প্রতিদিনই নতুন রেকর্ড গড়ার মধ্যেই সবকিছু আবার সচল হচ্ছে। ৮ জুন সোমবার থেকে খুলে যাচ্ছে সব ধরনের অফিস, শপিংমল, উপাসনালয় এবং রেস্তোরাঁ।

>>রয়টার্স
Published : 5 June 2020, 12:37 PM
Updated : 5 June 2020, 12:37 PM

ভারতে গত তিনমাসের মধ্যে যে কোনো সময়ের চেয়ে এ সময়টিতেই করোনাভাইরাস সংক্রমণের দৈনিক হার দ্রুত বাড়ছে। শুক্রবারও এর ব্যতিক্রম দেখা যায়নি।

বৃহস্পতিবার শনাক্ত হওয়া আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৯ হাজার ৩০৪ জন। শুক্রবার সকালে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের হিসাবে, গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয়েছে ৯ হাজার ৮৫১ জন। একদিনে সংক্রমণের এ সংখ্যা সর্বোচ্চ। এ নিয়ে ভারতে মোট কোভিড-১৯ শনাক্ত হওয়া আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ২৬ হাজার ৭৭০ জনে।

করোনাভাইরাসে মৃত্যুও উদ্বেগজনকহারে বেড়েছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের হিসাবে, গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ২৭৩ জনের। এক দিনে মৃত্যুর হিসাবে এ সংখ্যা সর্বোচ্চ। এ নিয়ে দেশটিতে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৩৪৮ জনে।

করোনাভাইরাস ঠেকাতে গত মার্চ থেকে জারি করা দীর্ঘ লকডাউনে ধসে পড়া অর্থনীতি সচল করতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এখন সবকিছু সচল করে দিয়ে লোকজনকে কাজে ফেরাচ্ছেন। তবে ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার জারি রাখছে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি।

এ ব্যাপারে বেশকিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হচ্ছে, অফিস চালু হলেও থাকবে নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা। শীততাপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র চালাতে হবে ২৪ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায়। আপেক্ষিক আর্দ্রতার মাত্রা থাকবে ৪০% থেকে ৭০% এর মধ্যে। ঘরে-অফিসে সব ক্ষেত্রেই মানতে হবে এ নিয়ম।

উপাসনালয়গুলো খুললেও সেখানে প্রবেশের সময় হাত-পা ধুতে হবে, জনসমাগম করা যাবে না, থাকতে হবে মাস্ক। মন্দিরে প্রসাদ বিলি করা যাবে না, পবিত্র পানি ছিটানো যাবে না, মূর্তি, প্রতিমা বা পবিত্র বই স্পর্শ করা যাবে না, ভক্তদের কোনো সঙ্গীত অনুষ্ঠান করাও নিষিদ্ধ থাকবে। কেবল রেকর্ড করা সঙ্গীত বাজানো যেতে পারে।

অন্যদিকে, ‘প্রবল সংক্রমণ’ থাকা এলাকাগুলোতে কেবল প্রয়োজনীয় সেবা ছাড়া আর কোনো কিছুই চালু হচ্ছে না। এছাড়া রোগাক্রান্ত ব্যক্তি, গর্ভবতী নারী এবং বয়স্কদেরকে ঘরেই থাকতে বলা হয়েছে।

প্রত্যেকটি স্থানে প্রবেশের আগে দরজায় হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করা ছাড়াও সামাজিক দূরত্ববিধি নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

রেস্তোরাঁ ও হোটেলগুলোতে অতিথিদের শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করতে হবে। সবাইকে মাস্ক পরতে হবে। খাবারের প্যাকেট সরাসরি গ্রাহকদের হাতে দেওয়া যাবে না। ধারণ ক্ষমতার ৫০ শতাংশ মানুষ বসতে পারবে। চেয়ার-টেবিল রাখতে হবে দূরত্ব বিধি মেনে। হোম ডেলিভারি কর্মী এবং বাবুর্চিদের থার্মাল স্ক্রিনিং করতে হবে নিয়মিত।

অফিসগুলার জন্য নতুন নির্দেশিকায় কর্তৃপক্ষ কাজের সময় নির্দিষ্ট করে দেওয়া ছাড়াও মধ্যাহ্নভোজনের বিরতি দিয়েছে। সব ক্যাফেটেরিয়া ও দোকানগুলোকে অফিসের ভেতরে এবং বাইরে দুই জায়গাতেই কঠোর সামাজিক দূরত্ব মানতে হবে। লিফটেও লোকের সংখ্যা সীমিত থাকবে।

এছাড়া, শপিংমলগুলো খুললেও গেমিং এলাকা, সিনেমা হল এবং খেলার নির্ধারিত স্থানগুলো বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।

ভারতের পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশনের মহামারী বিশেষজ্ঞ গিরিধর আর বাবুর কথায়, এ মুহূর্তে কোভিড-১৯ এর গুচ্ছ সংক্রমণ ঠেকানো জরুরি। আর এমন সময়ে উপাসনালয়গুলো খুব বেশিই তাড়াতাড়ি খুলে দেওয়া হচ্ছে।