দিল্লির নেহেরু ইউনিভার্সিটিতে মুখোশ পরে হামলা

ভারতে নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিরুদ্ধে সরব জহরলাল নেহেরু ইউনিভার্সিটিতে (জেএনইউ) মুখোশ পরে লোহার রড, ভারী হাতুড়ি ও পাথর নিয়ে হামলা চালিয়েছে একদল যুবক।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Jan 2020, 07:33 PM
Updated : 6 Jan 2020, 06:04 AM

রোববার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে পরবর্তী তিন ঘণ্টা ধরে চলা এই হামলায় বিশ্ববিদ্যালয়টির ছাত্র সংসদের সভাপতি ঐশী ঘোষ ও শিক্ষার্থী-শিক্ষকসহ অন্তত ৩৪ জন আহত হয়েছেন বলে এনডিটিভি জানিয়েছে।

শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ আহত ৩৪ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এই হামলার জন্য বিজেপি সমর্থিত ছাত্র সংগঠন অখিল ভারত বিদ্যার্থী পরিষদকে (এবিভিপি) দায়ী করেছেন জেএনইউ-র শিক্ষার্থীরা।

তবে সংঘ পরিবারের ছাত্র সংগঠনটি এই অভিযোগ অস্বীকার করে উল্টো বলেছে, ঐশী ঘোষদের বাম ছাত্র সংগঠনগুলোই হোস্টেলে এবিভিপির উপর তাণ্ডব চালিয়েছে।

মুখোশ পরা কয়েকজন হামলাকারীকে শনাক্ত করা হয়েছে এবং ঘটনার বিষয়ে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে।

হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ভারতের বিভিন্ন শহরের হাজার হাজার শিক্ষার্থী জেএনইউয়ের শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে রাতভর প্রতিবাদ জানায় ও মোমবাতি মিছিল করে। 

জহরলাল নেহেরু ইউনিভার্সিটি ছাত্র সংসদের সভাপতি ঐশী ঘোষ। ছবি: ফেইসবুক

ভারতের রাজধানীর নামি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ দীর্ঘদিন ধরেই বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বিজেপি সরকারের নানা সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আসছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এই ছাত্র সংসদের সাবেক সভাপতি কানহাইয়া কুমার এখন ভারতের জাতীয় রাজনীতিতেও পরিচিত মুখ। এনআরসি নিয়ে মোদী সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেও নেমেছিল নেহেরু ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা;।

হস্টেল ফি বৃদ্ধি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলছিল; ধর্মঘটও ডেকেছিল বাম ছাত্র সংগঠনগুলো।

এনডিটিভি জানায়, ধর্মঘট আহ্বানকারী বাম সংগঠনের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বিকালে এবিভিপির নেতা-কর্মীদের হাতাহাতি হয়েছিল। সন্ধ্যার পর অর্ধশত মুশোখধারী ক্যাম্পাসে ঢুকে চালায় হামলা।

হামলায় রক্তাক্ত ঐশী ঘোষের ছবি গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তার মাথা দিয়ে রক্ত ঝরছিল।

বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতারা বলেছেন, প্রশাসন ও পুলিশের মদদে এবিভিপিকর্মীরাই এই হামলা চালিয়েছে।

ছাত্র সংসদের সহসভাপতি সাকেত মুন বলেন, হামলাকারীরা এবিভিপিরই, তাদের অনেকে এখানকার শিক্ষার্থীও নয়। আর তারা যখন ভাংচুর করছিল, তখন ক্যাম্পাসে থাকা পুলিশ সদস্যরা ও বেসরকারি নিরাপত্তা রক্ষীরা নিশ্চুপ দাঁড়িয়েছিল।

পুলিশ হামলাকারীদের নিরাপদে ক্যাম্পাস ছাড়ার সুযোগ করে দিয়েছে বলে অভিযোগ জেএনইউয়ের শিক্ষার্থী ও ফ্যাকাল্টি মেম্বারদের। 

অতুল সুদ নামে এক শিক্ষক বলেন, “হাতে লাঠি-পাথর নিয়ে একের পর এক হস্টেলে ঢুকে ভাংচুর চালিয়েছে ওরা। ওদের হাতে বড় বড় পাথর ছিল, যাতে আমাদের অনেকেরই মাথা ফেটে যেতে পারত।”

তবে এবিভিপি দাবি করেছে, হোস্টেলে তাদের কর্মীদের উপর হামলা চালায় বাম নেতা-কর্মীরা। তাতে ১১ জন আহত হয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে সব পক্ষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছে নেহেরু ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ। পুলিশ ডাকা হয়েছে জানিয়ে হামলাকারীদের ধরার আশ্বাসও দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির রেজিস্ট্রার প্রমোদ কুমার।

এদিকে এই হামলা ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গনেও উত্তাপ ছড়িয়েছে।

আহতদের দেখতে রাতেই হাসপাতালে উপস্থিত হন কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। তিনি বিজেপি সরকারকে দায়ী করে বলেন, নইলে পুলিশের নাকের ডগায় এই ঘটনা ঘটতে পারত না।

সিপিআই, সিপিএমসহ অন্য দলের নেতারা বিজেপিকেই দায়ী করে হামলার নিন্দা জানিয়েছেন।

দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল বলেছেন, “আমি ভীষণ ব্যথিত। নিজের ক্যাম্পাসে যদি শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা না থাকে, তাহলে দেশ কীভাবে এগিয়ে যাবে?”

বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক শিক্ষার্থী ও বর্তমানে মোদী সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ও অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। এক টুইটেজয়শঙ্কর  নিজের হতাশার কথা জানিয়ে বলেছেন, এই ধরনের ঘটনা এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের পরিপন্থি।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এই হামলার ঘটনা তদন্ত করতে দিল্লি পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছে টাইমস অব ইন্ডিয়া।