নাগরিকত্ব আইন: ক্ষোভের আগুন ভারতজুড়ে

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বিক্ষোভের মধ্যে দিল্লিতে জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ চড়াও হওয়ার পর তা আরও ব্যাপক আকার নিয়েছে, নতুন নতুন শহরে ছড়িয়েছে বিক্ষোভ।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Dec 2019, 06:20 PM
Updated : 16 Dec 2019, 06:37 PM

রোববার রাতেই উত্তর প্রদেশের আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা জামিয়া মিলিয়ার শিক্ষার্থীদের প্রতি সংহতি জানিয়ে মিছিল বের করে। পুলিশ বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে, যাতে ৪০ জনের মতো আহত হন বলে এনডিটিভির খবর।

মধ্যরাতে হায়দ্রাবাদের মাওলানা আজাদ উর্দু বিশ্ববিদ্যালয় ও বেনারসের হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়েও বিক্ষোভ শুরু হয়।

দিল্লিতে জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ডাকে শত শত শিক্ষার্থী নগরীর পুলিশ সদরদপ্তরের সামনে জড়ো হয়ে জামিয়া মিলিয়ায় আটক শিক্ষার্থীদের মুক্তি দাবি করে শ্লোগান দেয়। তাদের বিক্ষোভের মুখে রাতেই জামিয়ার আটক সব শিক্ষার্থীকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি নির্যাতনের প্রতিবাদে সোমবার ইন্ডিয়া গেটের সামনে ধর্নায় বসেন কংগ্রেসের নেতা প্রিয়াঙ্কা গান্ধী

রোববার সন্ধ্যায় জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিবাদ মিছিল দিল্লির যন্তরমন্তরের দিকে যাওয়ার চেষ্টাকালে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় শিক্ষার্থী ও অন্যান্য প্রতিবাদকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হয়। প্রতিবাদকারীরা বেশ কয়েকটি গাড়িতে আগুন দেয়।

পুলিশের লাঠিপেটা ও কাঁদুনে গ্যাস থেকে বাঁচতে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে আশ্রয় নিলে তাদের ধাওয়া করতে থাকা পুলিশও ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে। ক্যাম্পাসে ঢুকে শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের লাঠি পেটা করে প্রায় ১০০ শিক্ষার্থীকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। আহত হয় শতাধিক শিক্ষার্থী।

দিল্লিতে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে সোমবার বেঙ্গালুরুতে রাস্তায় দাঁড়ান বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা

এর প্রতিবাদে রাতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভের পর সোমবার সকালেও তার জের চলতে থাকে। এদিন পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছেন লক্ষ্ণৌ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ও সত্যজিৎ রায় ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশনের শিক্ষার্থীরাও বিক্ষোভ করেছেন।

আমেদাবাদের আইআইএম, হায়দরাবাদের মাওলানা আজাদ ন্যাশনাল উর্দু বিশ্ববিদ্যালয়, আইআইটি মাদ্রাজ, পন্ডিচেরি বিশ্ববিদ্যালয়, চণ্ডীগড় বিশ্ববিদ্যালয়, বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরও অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদে নেমেছেন।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি নির্যাতনের প্রতিবাদে সোমবার বিকেলে ইন্ডিয়া গেটের সামনে দুই ঘণ্টার প্রতীকী ধর্নায় বসেন কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী।

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) ও জাতীয় নাগরিক পঞ্জি বাতিলের দাবিতে সোমবার কলকাতায় বড় ধরনের সমাবেশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

 

বিশাল মিছিল নিয়ে রেড রোড থেকে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটার পদযাত্রা করেন তিনি।

জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির সামনে বক্তব্যে মমতা বলেন, “আমরা বাংলায় আছি। এখানে এনআরসি করতে হলে আমার মৃতদেহের উপর দিয়ে করতে হবে, এখানে সিএবি করতে হলে আমার মৃতদেহের উপর দিয়ে করতে হবে।”

নরেন্দ্র মোদী সরকারকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, “আমাদের সরকার ফেলে দেবেন? ফেলে দিন। কিন্তু ইজ্জতের জন্য যখন লড়তে নেমেছি, তখন মাথা নত করব না।”

নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে রোববার কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় রেল লাইন, ট্রেনে অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন সহিংসতা ঘটে। তবে সোমবার কয়েক জায়গায় বিক্ষোভ হলেও সহিংসতার ঘটনা তেমনটি ঘটেনি বলে জানিয়েছে আনন্দবাজার।

এদিন পূর্ব মেদিনীপুর জেলার বিভিন্ন এলাকায় সড়কের ওপর টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ হয়েছে, বীরভূমের মুরারইতে সড়ক ও রেল পথ অবরোধ হয়েছে। তবে গত তিন দিন ধরে অশান্ত মুর্শিদাবাদ, মালদহ ও উত্তর ২৪ পরগনায় এদিন তেমন কিছু ঘটেনি।

রেল বিভাগের তথ্য মতে, শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখায় কয়েকটি জায়গায় ট্রেনে ভাংচুরের ঘটনা ঘটলেও আগের মতো অগ্নিসংযোগ বা স্টেশনে হামলার ঘটনা ঘটেনি।

এই কয়েকদিনের সহিংসতায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে রোববার রাত থেকে সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ৩৫৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুলিশ।

নাগরিকত্ব আইন ও নাগরিকপঞ্জির বিরুদ্ধে সোমবার কলকাতায় পদযাত্রায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

পার্লমেন্টে নাগরিকত্ব আইন পাস হওয়ার পর যে রাজ্যে সবচেয়ে বেশি বিক্ষোভ- সহিংসতা হয়েছিল, সেই আসামের পরিস্থিতির উন্নতির খবর দিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো।

টাইমস অফ ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, গত বৃহস্পতিবারের সহিংসতার পর বন্ধ করা আসামে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা মঙ্গলবার সকালে চালু করা হবে। এই রাজ্যের রাজধানী গোয়াহাটিতে জারি করা সান্ধ্য আইনও প্রত্যাহার করা হবে সকালে।

আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের পর শহরে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তড়িঘড়ি করে শীতকালীন ছুটি ঘোষণা করে ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা করেছে।

এই পরিস্থিতিতে জনগণকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

সোমবার এক টুইটে তিনি বলেছেন, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে সহিংস বিক্ষোভ দুর্ভাগ্যজনক ও গভীর হতাশার।

“বিতর্ক, আলোচনা ও ভিন্নমত গণতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কিন্তু সরকারি সম্পত্তির ক্ষতিসাধন এবং জনজীবনের বিঘ্ন ঘটানো কখনোই আমাদের আদর্শ নয়।”