নাগরিকত্ব আইন: দিল্লিতে পুলিশ-আন্দোলনকারী সংঘর্ষে আহত শতাধিক

ভারতের রাজধানী নয়া দিল্লিতে নতুন নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদরতদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে শতাধিক আন্দোলনকারী আহত হয়েছেন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Dec 2019, 04:04 AM
Updated : 16 Dec 2019, 04:40 AM

রোববার ভারতজুড়ে টানা পঞ্চম দিন এবং রাজধানীতে টানা তৃতীয় দিনের মতো নতুন আইনটির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হয়েছে, জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, নতুন আইনটি প্রতিবেশী বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ভারতীয় নাগরিকত্বের পথ প্রস্তাব করার মধ্য দিয়ে তাদের নিপীড়ন থেকে রক্ষা করবে।

কিন্তু সমালোচকরা বলেছেন, আইনটিতে মুসলিমদের জন্যও একই বিধান না রাখায় তা ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ ভিত্তিকে দুর্বল করবে।

রোববার দিল্লির জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে স্থানীয় বাসিন্দা ও শিক্ষার্থীসহ কয়েক হাজার লোক প্রতিবাদে অংশ নেয়। পুলিশ তাদের নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে সংঘর্ষ শুরু হয় যার জন্য প্রতিবাদকারীদের বাসে, গাড়িতে ও মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়াকে দায়ী করেছে কর্তৃপক্ষ।

স্থানীয় দুটি হাসপাতালের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সংঘর্ষের পর শতাধিক আহতকে তাদের হাসপাতালে আনা হয়েছে।  

বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকটবর্তী আল শিফা হাসপাতালের কর্মকর্তা ইনামুল হাসান বলেন, “অধিকাংশই ফ্রাকচার ইনজুরির শিকার। প্লাস্টার করার মতো আর প্লাস্টার অব প্যারিস আমাদের কাছে নেই।”

তাদের হাসপাতালে ৮০ জনেরও বেশি আহতকে নিয়ে আসা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের এক মুখপাত্র রয়টার্সের অংশীদার বার্তা সংস্থা এএনআইকে জানিয়েছেন, বিভিন্ন আঘাত নিয়ে আসা ২৬ জনের বেশি শিক্ষার্থীকে চিকিৎসা দিয়েছেন তারা।

রয়টার্সের এক প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিক জানান, প্রতিবাদকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠি পেটা ও কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপ শুরু করে। প্রতিবাদকারীরা পিছু হটে ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়ে পাথর ছুড়তে শুরু করলে পুলিশ ক্যাম্পাসে চড়াও হয়ে সংঘর্ষে জড়ায়।    

ওই এলাকায় দায়িত্বপালনরত ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা চিন্ময় বিসওয়াল বলেন, “প্রায় চার হাজার লোক প্রতিবাদ করছিল, তারা বাসটাস পোড়ানোর পর তাদের ছত্রভঙ্গ করতে যা করা দরকার পুলিশ তাই করেছে। আন্দোলনকারীরা শান্তিপূর্ণ হলে তাদের শান্তিপূর্ণভাবেই ছত্রভঙ্গ করা হতো।”

শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য পুলিশ ক্যাম্পাসটিতে প্রবেশ করেছে এবং সেখানে সংঘর্ষে ছয় পুলিশ কর্মকর্তা আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

তবে শত বছরের পুরনো জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তারা পুলিশের ভূমিকার নিন্দা করেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়টির একজন জ্যেষ্ঠ ফ্যাকাল্টি মেম্বার ওয়াসিম আহমেদ খান বলেন এএনআইকে বলেন, “পুলিশ জোর করে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেছে, কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি। আমাদের শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের পেটানো হয়েছে আর ক্যাম্পাস ত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে।”

শিক্ষার্থী তেহরীম মির্জা জানান, পুলিশ কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপ করার পর শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি ভবনে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়।

দক্ষিণ দিল্লির এক পুলিশ স্টেশনে ২৮ জন শিক্ষার্থীকে আটক করে রাখা হয়েছে বলে এক আইনজীবী জানিয়েছেন।

স্থানীয় কর্তৃপক্ষ সোমবার দক্ষিণপূর্ব দিল্লির সব স্কুল বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে। শনিবার জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে, তারা নির্দিষ্ট সময়ের আগেই শীতকালীন ছুটির জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেছে।

উত্তর প্রদেশের আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে, প্রতিবাদকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের পর শীতকালীন ছুটির জন্য আগেভাগেই বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।