চূড়ান্ত নাগরিকপঞ্জি প্রকাশের আগে আসামে উৎকণ্ঠা, নিরাপত্তা

চূড়ান্ত নাগরিকপঞ্জি প্রকাশের একদিন আগে ভারতের আসাম রাজ্যে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। মোতায়েন করা হয়েছে হাজার হাজার আধাসামরিক বাহিনী ও পুলিশ।

নিউজডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 August 2019, 09:47 AM
Updated : 31 August 2019, 05:09 AM

গত চার বছর ধরে যাচাই-বাছাইয়ের পর আসাম সরকার শনিবার ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেন্স (এনআরসি) এর চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করতে যাচ্ছে।

তালিকা থেকে বাদ পড়ে রাজ্যের লাখো বাসিন্দা বিশেষ করে মুলসমানদের নাগরিকত্ব হারিয়ে রাষ্ট্রহীন হয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে বলে জানায় বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

শুক্রবার এনডিটিভি জানায়, স্থানীয় সময় শনিবার সকাল ১০টায় অনলাইনে নাগরিকপঞ্জি প্রকাশ করা হবে। এজন্য রাজ্য জুড়ে ‘সেবা কেন্দ্র’ স্থাপন করা হয়েছে। যাদের ইন্টারনেট নেই তারা ওইসব কেন্দ্রে গিয়ে তালিকা দেখতে পারবেন।

তালিকা থেকে ৪০ লাখের বেশি আবেদনকারীর নাম বাদ পড়তে পারে বলে ধারণা প্রকাশ করছে ভারতে কয়েকটি সংবাদমাধ্যম।

তবে যাদের নাম বাদ পড়বে তারা এখনই বিদেশি গণ্য হবেন না বলে এনডিটিভিকে জানান রাজ্যের গৃহমন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা। বরং তারা আপিল করার জন্য ৬০ থেকে ১২০ দিন সময় পাবেন।

গৃহমন্ত্রণালয় জানায়, আপিল আবেদনের শুনানির জন্য রাজ্যে অন্তত এক হাজার ট্রাইবুনাল গঠন করা হবে। এরই মধ্যে একশ ট্রাইবুনাল গঠন করা হয়েছে, সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ নাগাদ ওই সংখ্যা দুইশোর বেশি হবে।

ট্রাইবুনালে হেরে গেলে যে কেউ হাই কোর্ট এবং সেখান থেকে সুপ্রিম কোর্টে যেতে পারবেন।

সমস্ত আইনী প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত কাউকে বন্দিশিবিরে নেওয়া হবে না বলেও নিশ্চিত করেছে আসাম সরকার। বন্দিশিবির থেকে তাদের পরে বাংলাদেশে বিতাড়ন করা হবে।

কিন্তু এত মানুষকে আটকে রাখার মত ব্যবস্থা এই মুহূর্তে আসাম সরকারের হাতে নেই বলে জানায় রয়টার্স।

ভারত থেকে বের করে দেওয়া মানুষদের গ্রহণ করবে কিনা তা নিয়ে বাংলাদেশ সরকার এখনো কোনো মন্তব্য করেনি।

তবে গত বছর খসড়া নাগরিকপঞ্জি প্রকাশের পর বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছিলেন, নাগরিকপঞ্জি নিয়ে আসাম সরকার ‘সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা’ দিয়েছে এবং এ তালিকা নিয়ে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে কোনো ‘প্রভাব পড়বে না’।

প্রতিবেশী বাংলাদেশে থেকে বহু মানুষ অবৈধভাবে আসামে বসবাস করছে দাবি তুলে কয়েক দশক আগে আসামে ‘বাঙ্গালি খেদাও’ আন্দোলন শুরু হয়।

অবৈধ বাংলাদেশিদের চিহ্নিত করে তাদের ফেরত পাঠানোর লক্ষ্যেই চার বছর আগে আসাম সরকার নতুন নাগরিকপঞ্জি তৈরির কাজ শুরু করে।

নগরিকপঞ্জিতে ঠাঁই পেতে হলে বাসিন্দাদের প্রমাণ করতে হবে তারা ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের আগে রাজ্যে আবাস গেড়েছেন।

গত চার বছর ধরে সেখানকার বাসিন্দাদের নিজেদের নাগরিকত্ব প্রমাণের নানা কাগজ-পত্র হাতে এক দরজা থেকে অন্য দরজায় ছুটতে হয়েছে।

২০১৮ সালের জানুয়ারিতে প্রথম খসড়া নাগরিকপঞ্জি প্রকাশ করা হয়। সেখানে মাত্র এক কোটি ৮০ লাখ মানুষের ঠাঁই হয়। অথচ আবেদন করেছিল তিন কোটি ২৯ লাখ মানুষ।

যা নিয়ে তীব্র সমালোচনা ও বিক্ষোভ শুরু হলে ওই বছর জুলাই মাসে সংশোধিত খসড়া নাগরিকপঞ্জি প্রকাশ পায়। নতুন তালিকায় দুই কোটি ৮৯ লাখ মানুষের নাম ঠাঁই পেলেও বাদ পড়েন উত্তর-পূর্ব আসামের প্রায় ৪০ লাখ বাসিন্দা।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আসামের পর পশ্চিমবঙ্গসহ সীমান্তবর্তী অন্যান্য রাজ্যের ‘অবৈধ অভিবাসীদের’ চিহ্নিত করতে একই ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা জানিয়েছেন বলে জানায় রয়টার্স।