বৃহস্পতিবার ইসলামাবাদে এক সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশি ভারতের সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়া কেমন হতে পারে সে বিষয়ে ধারণা দিতে গিয়ে একথা বলেন, জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
পাকিস্তান ভারতের যেকোনো আগ্রাসন মোকাবেলার অধিকার রাখে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
“আমরা সামরিক বিকল্পের কথা ভাবছি না। কিন্তু আমরা কি ভারতের যে কোনো আগ্রাসনের প্রতিক্রিয়া দেখানোর অধিকার রাখি না? পাকিস্তান রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও আইনি বিকল্পের কথা ভাবছে,” বলেছেন কুরেশি।
গত সপ্তাহে ভারতের পার্লামেন্টে নরেন্দ্র মোদীর সরকার জম্মু ও কাশ্মীরের জন্য সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদে থাকা বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে এলাকাটিকে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভাগ করে।
এ সিদ্ধান্ত আঞ্চলিক স্থিতিশীলতায় প্রভাব ফেলতে পারে বলে তখনই প্রতিবেশী দেশগুলো সতর্ক করেছিল।
পাকিস্তান ইসলামাবাদ থেকে ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে বহিস্কার, নয়া দিল্লির সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্কচ্ছেদসহ বেশকিছু পদক্ষেপও নিয়েছে।
চীন বলেছে, তারা লাদাখকে আলাদা করে কেন্দ্রের শাসনে নেয়ায় উদ্বিগ্ন। বেইজিং দীর্ঘদিন ধরেই ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের লাদাখ অংশ তাদের বলে দাবি করে আসছে। মূল লাদাখের কিছু অংশ তাদেরও নিয়ন্ত্রণে।
ভারত ও পাকিস্তান উভয়েই হিমালয় অঞ্চলে অবস্থিত কাশ্মীরের সমগ্র অংশের মালিকানা দাবি করে আসছে; দেশ দুটি কাশ্মীরের পৃথক দুটি অংশ নিয়ন্ত্রণও করছে।
এর মধ্যে ভারতশাসিত অংশেই দীর্ঘদিন ধরে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের তৎপরতা আছে। তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে ওই এলাকায় সংঘাত-সহিংসতায় হাজার হাজার লোকের প্রাণ গেছে।
ভারতের সংবিধানে কাশ্মীরের জন্য বিশেষ মর্যাদার অংশটুকু অনুচ্ছেদ ৩৭০-এ বিবৃত ছিল। এ অনুচ্ছেদ জম্মু ও কাশ্মীরকে নিজস্ব সংবিধান, আলাদা পতাকা ও স্বতন্ত্র আইন বানানোর অধিকার দিয়েছিল। রাজ্যটির কেবল পররাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল দিল্লির হাতে।
সাত দশকজুড়ে কাশ্মীরের সঙ্গে ভারত রাষ্ট্রের যে জটিল সম্পর্ক ৩৭০ অনুচ্ছেদই তার মূল ভিত্তি বলে গণ্য করা হয়। পার্লামেন্টে বিরোধীদের তীব্র প্রতিবাদ সত্বেও গত সপ্তাহে বিজেপি সরকার কাশ্মীরকে দেয়া এ বিশেষ সুবিধাদি বাতিল করে দেয়।
ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ, বলিউডি সিনেমায় নিষেধাজ্ঞা
কাশ্মীর নিয়ে নয়া দিল্লির ওপর চাপ বাড়াতে পাকিস্তান বৃহস্পতিবার থেকে ভারতের সঙ্গে ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ রাখার কথা ঘোষণা করেছে।
বলিউডি সিনেমার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথাও জানিয়েছে তারা। দেশদুটি এর আগেও বেশ কয়েকবারই একে অপরের শিল্পী ও কলাকুশলীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল।
বৃহস্পতিবারও কাশ্মীরের মোবাইল ও ইন্টারনেট যোগযোগব্যবস্থা একেবারেই বিচ্ছিন্ন ছিল বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
বিক্ষোভ দমনে কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে অন্তত ৩০০ রাজনীতিককে আটক কিংবা গৃহবন্দি করে রেখেছে। এর মধ্যেও উপত্যাকাটির বিভিন্ন অংশ থেকে টুকরো টুকরো বিক্ষোভের খবর পাওয়া যাচ্ছে। কাশ্মীরিদের ছোড়া ইট-পাথরের পাল্টায় ভারতীয় নিরাপত্তাবাহিনী ছররা গুলি ছুড়ছে বলেও জানিয়েছে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে- এমনটা বোঝাতে কাশ্মীরের রাস্তায় হেঁটে হেঁটে সাধারণ মানুষের সঙ্গে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের কথোপকথনের একটি ভিডিও ও স্থিরচিত্রও ভারতের সংবাদমাধ্যমগুলোতে ঘুরছে।