কাশ্মীর: ৩০০ রাজনীতিক আটক, ভারতের ওপর চাপ বাড়ছে

ভারতশাসিত কাশ্মীরের জন্য দেশটির সংবিধানে থাকা বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পর ওই এলাকায় বিক্ষোভ ঠেকাতে গত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় অভিযানে কর্তৃপক্ষ অন্তত ৩০০ রাজনীতিক ও বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাকে আটক করেছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 August 2019, 09:32 AM
Updated : 8 August 2019, 10:21 AM

পুলিশের কর্মকর্তা, বিভিন্ন দলের নেতা ও স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো এ তথ্য নিশ্চিত করেছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদে কাশ্মীরকে দেওয়া বিশেষ সুবিধা বাতিলের পরিকল্পনায় চলতি সপ্তাহের রোববার থেকেই উপত্যকাটিতে মোবাইল নেটওয়ার্ক, ইন্টারনেট যোগাযোগ বন্ধ করে রাখা হয়; শ্রীনগরে সভা-সমাবেশের ওপরও আরোপ করা হয় নিষেধাজ্ঞা।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) দীর্ঘদিন ধরেই কাশ্মীরের এ বিশেষ মর্যাদা তুলে নেওয়ার পক্ষে প্রচার চালিয়ে আসছিল।

নতুন এ পদক্ষেপ ১৯৮৯ সাল থেকে ওই এলাকায় উত্থান ঘটা সশস্ত্র বিদ্রোহীদের প্রভাব কমিয়ে নয়াদিল্লির শাসন আরও পোক্ত করবে বলেও আশা ক্ষমতাসীনদের।

কাশ্মীর নিয়ে ভারতের এসব পদক্ষেপে প্রতিবেশী পাকিস্তান কড়া প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। তারা এরই মধ্যে ইসলামাবাদের ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার ও নয়াদিল্লির সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে।

সোমবার ভারতের পার্লামেন্টে ৩৭০ অনুচ্ছেদে কাশ্মীরকে দেওয়া সিদ্ধান্ত বাতিলের পর থেকে শ্রীনগরের বিভিন্ন সড়কে আধাসামরিক পুলিশের হাজার হাজার সৈন্য মোতায়েন আছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স। স্কুলসহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। বিভিন্ন এলাকার সড়কে আছে ব্যারিকেড।

এর মধ্যেও বিচ্ছিন্ন কিছু প্রতিবাদ বিক্ষোভের খবর মিলছে বলে জানিয়েছেন দুই পুলিশ কর্মকর্তা। পরিস্থিতির সংবেদনশীলতা বিবেচনায় নাম-পরিচয় প্রকাশ করতে চাননি তারা।

কর্মকর্তাদের একজন বলেছেন, শ্রীনগরের অন্তত ৩০টি স্থানে সৈন্যদের ওপর পাথর ছোড়ার ঘটনা ঘটেছে। বিক্ষোভ দমাতে পুলিশের প্রতিক্রিয়ায় আহত অন্তত ১৩ জনকে শহরটির প্রধান সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

বুধবার সন্ধ্যায় শ্রীনগরের পুরনো শহরে কয়েক মিটার পরপর দূরত্বে রায়ট গিয়ার নিয়ে পুলিশ সদস্যদের প্রস্তুত থাকতে দেখা গেছে; কয়েকশ মিটার পরপর ছিল কাঁটাতারের চেকপয়েন্ট।

দীর্ঘদিন ধরে শ্রীনগরে বিক্ষোভের প্রধান কেন্দ্রস্থল জামে মসজিদের কাছে অন্তত তিনটি স্থানে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের ওপর পাথর ছোড়ার ঘটনা ঘটেছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের একজন উত্তরপশ্চিম শ্রীনগরের বেমিনা এলাকাতেও পাথর ছোড়ার ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন।

“মানুষের মধ্যে ভয়াবহ ক্ষোভ বিরাজ করছে,” বলেছেন এক পুলিশ কর্মকর্তা।

কাশ্মীরিরা মোদীর এ ৩৭০ অনুচ্ছেদের বিশেষ সুবিধাদি বাতিলের সিদ্ধান্তকে ভারতের অন্য অঞ্চলের লোক ঢুকিয়ে কাশ্মীরের জনমিতি বদলানোর পরিকল্পনা করছেন বলে আশঙ্কা করছেন।

পুলিশের এক কর্মকর্তা এখন পর্যন্ত ৩০০ রাজনীতিককে আটক করা হয়েছে বলে জানান। এদের অনেকেই কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতার পক্ষে প্রচার চালিয়েছেন, বলেছেন তিনি।

কাশ্মীরের প্রভাবশালী দল ন্যাশনাল কনফারেন্সের দুই নেতা সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও আইনপ্রণেতাসহ অন্তত ১০০ নেতাকে আটক করা হয়েছে জানালেও সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া মেইলের হিসাবে আটক ও ‍গৃহবন্দি রাজনীতিকের সংখ্যা ৪০০ ছাড়িয়ে গেছে। 

অহিংস বিচ্ছিন্নতাবাদী দলগুলোর সম্মিলিত জোট হুররিয়াত কনফারেন্সের চেয়ারম্যান মিরওয়াইজ ওমর ফারুককে মঙ্গলবার গ্রেপ্তার করা হলেও কয়েক ঘণ্টা পর নিজ বাড়িতে ফিরিয়ে এনে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে বলে তার কার্যালয় জানিয়েছে।

কাশ্মীর নিয়ে নয়াদিল্লির এসব পদক্ষেপের পর ভারতের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে বলে জানিয়েছে আনন্দবাজার।

পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি পাকিস্তান কাশ্মীরের সাংবিধানিক সুবিধা প্রত্যাহার করায় ভারতের বিরুদ্ধে জাতিসংঘে সরব হওয়ার কথাও জানিয়েছে।

কাশ্মীরের পরিস্থিতিতে উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘ। ইসলামিক দেশগুলোর জোট ওআইসিও ভারতের পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছে।

৩৭০ অনুচ্ছেদে কাশ্মীরকে দেওয়া বিশেষ সুবিধা বাতিলের বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রকে অবগত করা হয়েছে বলে নয়া দিল্লি দাবি করলেও বুধবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছে, তাদেরকে এ সম্বন্ধে জানানো হয়নি।

লাদখকে আলাদা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয় দেখিয়েছে চীনও। বেইজিং দীর্ঘদিন ধরেই ভারতশাসিত কাশ্মীরের লাদাখ অংশের মালিকানা দাবি করে আসছে।

চীন তাদের বিবৃতিতে পাক-ভারত বিবাদে পক্ষ না নেওয়ার কথা জানালেও ‘চীনের স্বার্থে ঘা লাগলে তা সহ্য করা হবে না’ বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে, জানিয়েছে আনন্দবাজার।

“ভারত অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মন্তব্য করে না। আমরা আশা করবো, অন্য দেশও আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মন্তব্য করবে না,” পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় বলেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।