আফগানিস্তানের শীর্ষ মহলের বিরুদ্ধে ‘যৌন কেলেঙ্কারির’ অভিযোগ

আফগানিস্তানে সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলে যৌন ‘নির্যাতনের সংস্কৃতি’ চালু আছে বলে নারীরা অভিযোগ করেছেন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 July 2019, 09:50 AM
Updated : 11 July 2019, 09:50 AM

দক্ষিণ এশিয়ার এ দেশটিতে নারী নির্যাতনের বিচার পাওয়া দুরূহ হওয়ায় অভিযোগকারীরা প্রকাশ্যে মুখ না খুললেও বিবিসির কাছে ছয় নারী তাদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া অন্যায়ের কথা রাখঢাক ছাড়াই বলেছেন।

তবে দেশটির সরকারি কর্মকর্তারা এ ধরনের কোনো অন্যায়ের কথা অস্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছে তারা।

কাবুলকে ঘিরে রাখা ধুলার পাহাড় থেকে পায়ে হাঁটা দূরত্বের বাড়িতে থাকা এক নারী বলেছেন, প্রভাবশালী এক ঊর্ধ্বতন মন্ত্রীর নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে তিনি সরকারি চাকরিই ছেড়ে দিয়েছেন।

ওই মন্ত্রী নিয়মিতই তাকে হয়রানি করতেন; একদিন অফিসের ভেতরে তাকে শারিরীকভাবে লাঞ্ছিত করার চেষ্টাও করেন।

“তিনি সরাসরি আমাকে প্রস্তাব দেন। আমি তাকে বলি- আমি যোগ্য ও অভিজ্ঞ। আপনি আমাকে এ ধরনের কিছু বলবেন আমি কখনোই ভাবিনি।

“আমি চলে যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়াই। তিনি আমার হাত ধরে টেনে তার কার্যালয়ের পেছনে অন্য একটি কক্ষে জোর করে নিয়ে যান। আমাকে ধাক্কা দিয়ে ওই কক্ষে ফেলেন এবং বলেন- ‘মাত্র কয়েক মিনিট লাগবে। চিন্তা করো না, আমার সঙ্গে এসো’।

আমি তাকে ধাক্কা দিয়ে বলি- যথেষ্ট হয়েছে। আমাকে চিৎকার করাবেন না। ওই শেষ আমি তাকে দেখেছি। আমি খুবই ক্রুদ্ধ ও মর্মাহত হয়েছিলাম,” বলেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই নারী।

এ ঘটনার পর আনুষ্ঠানিক কোনো অভিযোগ দায়ের করেননি বলেও জানান তিনি।

“আমি চাকরি থেকে পদত্যাগ করি। আমি সরকারকে বিশ্বাস করি না। আপনি যদি আদালত বা পুলিশের কাছে যান, তাহলে দেখবেন তারা কী পরিমাণ দুর্নীতিগ্রস্ত।

“যাওয়ার জন্য এবং অভিযোগ করার জন্য কোনো নিরাপদ জায়গা পাবেন না আপনি। যখনই আপনি কথা বলবেন, সবাই তখন অভিযোগকারী নারীকেই দোষ দেবে,” ওই মন্ত্রী আরও দুই নারীকে ধর্ষণ করেছে বলেও নির্যাতিতদের বরাত দিয়ে অভিযোগ করেন এ সাবেক সরকারি চাকুরে।

অন্য এক নারী সরকারি চাকরির সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানির এক উপদেষ্টার দ্বারা হয়রানির শিকার হওয়ার কথাও জানান।

বিবিসি বলছে, নারীদের জন্য ভয়াবহ দেশের তালিকায় আফগানিস্তানের অবস্থান ধারাবাহিকভাবেই নিচের দিকে।

২০১৮ সালে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে দেশটিতে নারীদের ওপর হওয়া যৌন নির্যাতন ও সহিংসতা এবং তাদেরকে অভিযোগ প্রত্যাহারে বাধ্য করার বিস্তৃত বিবরণ আছে।

অনেক ক্ষেত্রে উল্টো অভিযোগকারী নারীর বিরুদ্ধেই অপরাধের দায়ভার বর্তায়। এ ধরনের পরিবেশে প্রভাবশালী পুরুষদের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করা বেশ কঠিন, বলছেন অভিযোগকারী নারীরা।

ঘানির সাবেক এক উপদেষ্টা জেনারেল হাবিবুল্লাহ আহমদজাই মে মাসে এক আফগান সংবাদমাধ্যমে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে ‘পতিতাবৃত্তিকে উৎসাহিত’ করার অভিযোগ আনার পর সরকারের উপর মহলে যৌন নির্যাতনের এ ঘটনাগুলো একটু একটু করে প্রকাশ্যে আসা শুরু করে।

আফগান প্রেসিডেন্টের কার্যালয় এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছে। এর আগে তারা জেনারেল আহমেদজাইয়ের অভিযোগকে ‘মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ হিসেবে অভিহিত করেছিল।

দেশটির সরকার অবশ্য এরই মধ্যে মন্ত্রী, উপদেষ্টাসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ওঠা এসব অভিযোগ তদন্তে অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়কে নির্দেশ দিয়েছে।