বসিরহাটে নুসরাতের জয়গান

‘মন বলেছে আমার, আজ সঙ্গে যাবে তোর’- গানটি এখন কলকাতার বসিরহাটের ঘরে ঘরে বাজছে।

সুমন মাহমুদ কলকাতার বসিরহাট থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 May 2019, 03:34 PM
Updated : 18 May 2019, 03:41 PM

টালিউডের ‘লাভ এক্সপ্রেস’ চলচ্চিত্রের এই গানে মুখ মিলিয়েছিলেন যিনি, সেই নুসরাত জাহান এবার বসিরহাটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী।

লোকসভা নির্বাচনের শেষ পর্বে রোববার ভারতের অন্যান্য রাজ্যের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের যে ১৫টি আসনে ভোট হবে, তার একটি বসিরহাট।

এই আসনে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী নুসরাতের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে রয়েছ্নে বিজেপির সায়ান্ত বসু ও সিপিআইয়ের পল্লব সেনগুপ্ত।

একে নুসরাত বসিরহাটের মেয়ে, অভিনেত্রী হিসেবে জনপ্রিয়ও, তার ওপর এখানে তৃণমূলের সংগঠনও বেশ শক্তিশালী। সব মিলিয়ে ভোটারদের অনেকের ভাষায়, নুসরাতকে প্রার্থী হিসেবে বেছে নিয়ে মমতা এক রকম ‘ছক্কাই’ মেরে দিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার ভোটের প্রচার শেষ হলেও শনিবার সকালে বসিরহাটের ঘরে ঘরে শোনা গেল নুসরাতের সেই চলচ্চিত্রের গানটি।

কলকাতা শহরের উত্তর-পূর্ব দিকে ৬৫ কিলোমিটার দূরে উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার বসিরহাটের স্থানীয়রা জানালেন, নির্বাচনী প্রচারের সময় অনেক জায়গায় কর্মী-সমর্থকদের অনুরোধে নুসরাতকে নিজের কন্ঠে গানটির কয়েকটি কলি গেয়েও শোনাতে হয়েছে।

মুসলিম পরিবারের মেয়ে নুসরাত রাজনীতিতে একেবারেই আনকোড়া হলেও জনপ্রিয়তার কথা মাথায় রেখে তাকে প্রার্থী করেছেন মমতা।

এই আসনে ২০১৪ সালে তৃণমূলের প্রার্থী ছিলেন ইদ্রিস আলী, লোকসভার সদস্যও হয়েছিলেন তিনি।

ভোটের প্রচার সভায় নুসরাত

বসিরহাটের সন্দেশখালীর একটি স্কুলের শিক্ষক সুশান্ত বসু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখানে তৃণমূল এমনিতেই জনপ্রিয়। নুসরাত প্রার্থী হওয়ায় এই জনপ্রিয়তা ক্রিকেটের ‘ছক্কা’ মারার মতো হয়েছে। তাকে নিয়ে আমাদের অন্যরকম ভাবনা।

“নারী ভোটারের সংখ্যা এখানে ৫০ ভাগের কাছাকাছি। ফলে নুসরাতের নির্বাচনযাত্রায় বাড়তি কষ্ট হবে না বলে আমরা বিশ্বাস করি।”

বাংলাদেশেও নুসরাতের জনপ্রিয়তা রয়েছে। রাজীব বিশ্বাস পরিচালিত ‘নাকাব’ ছবিতে নুসরাত বাংলাদেশের শাকিব খানের সঙ্গে জুটি বেঁধেছিলেন। গত বছর ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল।

বসিরহাটের সুন্দরবনের মিনাখাঁওয়ের বাসিন্দা মুহাম্মদ আবিদ খান বলেন, “আমাদের প্রার্থী শুধু অভিনেত্রীই নন, কন্ঠশিল্পীও। এবারের প্রচারে তিনি রাজনীতির পাঠ নিচ্ছেন। যেখানে গেছেন ভোটারদের কথা রেখেছেন। বিভিন্ন প্রচারের সময়ে নুসরাতকে বলা হয়েছিল, ‘লাভ এক্সপ্রেস’ ছবির গানটি গেয়ে শোনাতে। মিষ্টি গলায় গানটি গাইতে গাইতে তিনি ভোটও চেয়েছেন বিনীতভাবে- ‘মমতা দিদির সালাম নিন, আমাকে শুধু একটা ভোট দিন’।”

নুসরাতকে নিয়ে প্রশংসার শেষ নেই। বসিরহাটের গ্রামের গৃহবধূ থেকে শুরু করে খোদ মমতাই প্রশংসায় পঞ্চমুখ তার।

মমতা নিজেই বসিরহাটের হাসনাবাদে এক নির্বাচনীয় সভায় ‍নুসরাতকে পাশে রেখে বলেছেন, “নুসরাত সুন্দর, তাকে ভোট দেবেন।”

স্থানীয় মুদির দোকানদার বিমল বিশ্বাস বলেন, “আমাদের মেয়ে নুসরাত। ভোটটাও তার বাক্সে। এটা শুধু আমার কথা নয়, আমার থেকে ২০ কদম দূরে ওই সামনের ঘরে গিয়ে জিজ্ঞাসা করুন তারাও একই কথা বলবেন।”

নুসরাতের প্রশংসা করে তিনি বলেন, “বর্তমানে টালিউডের হিট সেলিব্রেটি। লোকসভার এ নির্বাচনে দাঁড়িয়ে ঘরে ঘরে গেছেন ভোটের আবদার নিয়ে। যে পথ দিয়ে গেছেন সেখানেই মানুষজন হুমড়ি খেয়ে পড়েছে, বলতে পারেন ঢল নেমেছে।

“জনমানুষের সাথে মেশার যে আন্তরিকতা সেটা তার প্রচারে প্রকাশ পেয়েছে বলে আমার বিশ্বাস, নুসরাত জয়ী হবেন।”

বসিরহাটের সন্দেশখালীম সুন্দরবনের মিনাখাঁও, হাড়োয়া, সরবেডিয়া প্রভৃতি এলাকায় নুসরাতের জনপ্রিয়তা দেখা গেছে।

যাদবপুরে আরেক অভিনেত্রী মিমি

কলকাতা শহরের কাছেই যাদবপুর। শিক্ষিত লোকজনের এলাকা। এই আসনে তৃণমূলের নতুন প্রার্থী আরেক অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তী। তারও জনপ্রিয়তা ব্যাপক। টালিউডের এই জনপ্রিয় অভিনেত্রী এবার রাজনীতির মাঠেও ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছেন।

মিমির বিপক্ষে লড়ছেন সাংসদ অনুপম হাজরা ও সিপিএমের বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য।

২০১৪ সালে এই আসনে তৃণমূলের প্রার্থী ছিলেন সুগত বসু, যিনি সিপিএমের সুজন চক্রবর্তীকে পরাজিত করে লোকসভার সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।

লোকসভা নির্বাচনের শেষ পর্বে পশ্চিমবঙ্গের ৪২ আসনের মধ্যে সর্বশেষ ৯টি আসনে নির্বাচনের ভোট হবে রোববার। আসনগুলো হচ্ছে যাদবপুর, বসিরহাট, ডায়মন্ড হারবার, দমদম, জয়নগর, কলকাতা দক্ষিণ, কলকাতা উত্তর, মথুরাপুর ও বারাসাত।