অনেকের ধারণা, কংগ্রেস এবারও বিশেষ সুবিধা করতে পারবে না। বিজেপির নেতৃত্বে শরিকদের নিয়ে সরকার হবে। আবার কারো কারো মত হল- আঞ্চলিক দলগুলো হয়ে উঠতে পারে নির্ণায়ক।
নয়া দিল্লি, পূর্ব দিল্লি, পশ্চিম দিল্লির নানা পেশার মানুষের সাথে আলাপচারিতায় এমন ধারণার কথাই উঠে এসেছে।
দিল্লির সিআর পার্কের বাসিন্দা অধ্যাপক সুতীশ গোয়েল রাজনীতির খোঁজ খবর রাখেন নিয়মিত। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “গোটা ভারতে লোকসভার ভোটের যে ট্রেন্ড এ পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে- বিজেপি গতবারের মত একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাচ্ছে না। তাহলে অংকটা জটিল।
“আমার হিসাব-নিকাশ বলে, এককভাবে কোনো দলের পক্ষে এবার সরকার গঠন করা খুব কঠিন হবে। যে দল সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনের কাছাকাছি আসন পাবে তাকেই আঞ্চলিক দলগুলোর সাথে সমঝোতায় এসে সরকারে বসতে হবে।”
ভারতের সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনে ৫৪৩ আসনের মধ্যে ইতোমধ্যে ৪৮৪ আসনের ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। বাকি ৫৯ আসনের ভোট হবে শেষ পর্বে আগামী ১৯ মে। এর তিনদিন পর ২৩ মে দিল্লীতে একসঙ্গে ভোট গণনা করে সেদিনই ফলাফল ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন।
দিল্লিতে কংগ্রেস ও বিজেপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে শীর্ষস্থানীয় নেতারা সারা দেশের ভোটের পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছেন। গণমাধ্যমের সাথে তারা কোনো কথা বলছেন না।
ভোটের শেষ প্রান্তে এসে পরবর্তী কর্মকৌশল নিয়ে অনানুষ্ঠানিক সম্ভাব্য প্রস্তুতিও নিচ্ছে কেন্দ্রের শীর্ষ রাজনৈতিক দলগুলো।
‘ক্ষমতাধর আঞ্চলিক ১২ নেতা’
তাদের মধ্যে, মায়াবতী, চন্দ্র বাবু নাইড়ু ও কে চন্দ্র শেখর রাও চাইছেন একটি বিরোধী জোট হোক। সেই লক্ষ্যে তারা কংগ্রেসের সাথে যোগাযোগও রক্ষা করছেন দীর্ঘদিন ধরে। তবে এই আঞ্চলিক জোটের নামকরণ কিংবা ধরণ-কাঠামো এখনো স্পষ্ট নয়।
দিল্লি গেইটের বিশাল প্রাঙ্গণে কথা হয় নয়া দিল্লির কেরলবাগের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা অদিত্য সেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, “আমার কেমন জানি মনে হচ্ছে, আঞ্চলিক দলগুলোর যে সংগঠিত শক্তি দেখছি, তারা একজোট হয়ে তৃতীয় কোনো একটি ফ্রন্ট গঠন করতে পারে। সেক্ষেত্রে অবশ্যই বড় একটি দলের সমর্থন লাগবে।
‘তৃতীয় ফ্রন্ট অথবা ফেডারেল ফ্রন্টের চিন্তা’
ভোটের হিসাব নিকাশে নানা সমীকরণ নিয়ে এগুচ্ছে বিরোধী জোট। তৃতীয় ফ্রন্টের একটা চিন্তাও তাদের রয়েছে। আঞ্চলিক রাজ্যের, বিশেষ করে অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা, পশ্চিমবঙ্গ, উত্তর প্রদেশ, উড়িষ্যা, দিল্লির বিরোধী নেতাদের নিয়েই এ ফ্রন্ট হতে পারে।
এক বছর আগেই এ রকম তৃতীয় ফ্রন্ট গঠনের চিন্তা নিয়ে কাজ শুরু করেছেন অন্ধ্রপ্রদেশের কে চন্দ্র শেখর। তার সঙ্গে আছেন মহারাষ্ট্রের বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ এনপিপির শারদ পাওয়ার।
লোকসভা নির্বাচন শুরু আগেই তিনি গণমাধ্যমকে বলেছেন, “আমার ধারণা বিজেপি এবার ১৫০টির বেশি আসনে জিততে পারবে না। কংগ্রেসও ১০০ পেরুতে পারবে না। সেজন্য আমরা দেশে একটি বাস্তব ফেডারেল ফ্রন্ট গঠনের চেষ্টা চালাচ্ছি।”
‘‘এখানে সব চেয়ে বড় জটিলতা ওইরকম ফ্রন্টের নেতা কে হবেন? প্রধানমন্ত্রী কে হবেন? কংগ্রেস তাদের বাইরে প্রধানমন্ত্রী পদে অন্য কাউকে মেনে নেবে কিনা- এসব দেখার বিষয়।”
পুরনো দিল্লির পাহারগঞ্জের হোটেল-রেস্তোরাঁয় মানুষজনের মুখে মুখে সম্ভাব্য বিরোধী জোট নিয়ে নানা কথা আসছে।
একটি কিন্ডার গার্টেন স্কুলের শিক্ষিকা কাবেরী ব্যানার্জি বলেন, ‘‘ধরুন, বিজেপি এবার একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাচ্ছে না। সেক্ষেত্রে তাকে তো তার শরিকদের নিয়ে সরকার গঠন করতে হবে। আবার আঞ্চলিক দলগুলোর ফলাফল ভালো হলে কংগ্রেসের নেতৃত্বে বিরোধী জোটের সম্ভাবনা আছে। যদি তারা ঐকমত্যে আসতে পারেন।
‘কংগ্রেসের আগাম প্রস্তুতি’
কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী দিল্লিতেই অবস্থান করছেন। দিল্লির পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে, ভোটের ফলাফল ঘোষণার পরদিনই পশ্চিমবঙ্গের মমতা বন্দোপাধ্যায়, উত্তর প্রদেশের মায়াবতী, অখিলেশ যাদব, তেলেঙ্গানার কে চন্দ্র শেখর রাওসহ আঞ্চলিক দলের নেতাদের দিল্লিতে চায়ের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীর মা সোনিয়া।
ভোটের ফলাফল ঘোষণার আগেই কংগ্রেসের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে আঞ্চলিক শীর্ষ নেতা-নেত্রীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। উদ্দেশ্য, একটা বৃহত্তর বিরোধী জোট গঠন করা।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ২০০৪ ও ২০০৯ সালে কংগ্রেসের নেতৃত্বে ‘ইউনাইটেড পিপলস এলায়েন্স-ইউপিএ’ সরকার গঠনে সোনিয়া গান্ধী গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা ছিল। তিনি প্রধানমন্ত্রী না হয়ে মনমোহন সিংকে প্রধানমন্ত্রী করেছিলেন দুইবার।
‘বিজেপির সর্তক অবস্থান’
পূর্ব দিল্লির একটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের মালিক এস এ ভট্টাচার্য্য বলেন, “আমি যতটুকু ভাবছি- তোড়-জোড় যাই হোক, সমীকরণ যাই বলুন, বিজেপিই আবার সরকার গঠনের সুযোগ পাবে। তবে এবার বিজেপি মার্জিনাল ভোটেই সরকারে আসবে।
“তবে ভিন্ন কিছু ঘটবে কি না তা আঞ্চলিক দলগুলো একজোট হতে পারার ওপর নির্ভর করছে। মায়াবতী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, চন্দ্র শেখর নাইডুর মত বাঘা বাঘা নেতারা আছেন, তাদের কে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়তে চাইবেন? ফলে ঝামেলা আছে, সমঝোতা অনিশ্চিত।”
২০১৪ সালে ভারতের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিল। তারা পায় ২৮২ আসন। আর বিজেপি জোট পায় ৩৩৪টি আসন। অপর দিকে কংগ্রেস পেয়েছিল শুধু ৪৪টি আসন। জোটে তারা পায় ৬০টি আসন। অন্যান্যরা পায় ১৪৯টি আসন।