অক্ষয়ের সঙ্গে খোশগল্পের মেজাজে মোদীর একান্ত সাক্ষাৎকার

ভারতে তিন দফার ভোট পর্ব শেষ হয়েছে। ভোটের শেষ পর্যায়ের দিকে আসতে থাকায় সব শিবিরেই আছে ব্যস্ততা। চলছে নির্বাচনী প্রচারও। এর মধ্যেই বলিউড তারকা অক্ষয় কুমারের সঙ্গে একান্তে এক বিশেষ সাক্ষাৎকার দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 April 2019, 04:33 PM
Updated : 24 April 2019, 05:07 PM

এ সাক্ষাৎকারের কথোপকথন ছিল সম্পূর্ণ ‘অরাজনৈতিক’। সাক্ষাৎকারটি কখন নেওয়া হয়েছে তা স্পষ্ট জানা যায়নি। তবে এএনআই টিভি এটি বুধবার প্রচার করেছে। দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে সাক্ষাৎকারটি ধারণ করা হয়েছে।

সিনেমার টিজারের ধাঁচে ‘সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক’ কথপোকথন বলে সাক্ষাৎকারের ছোট ছোট ক্লিপিংস টুইটারে ছেড়েছেন অক্ষয়। খোশমেজাজে গল্পের ছলেই সাক্ষাৎকারটি নেওয়া হয়।

অকপট প্রধানমন্ত্রী এতে জানিয়েছেন, তিনি চাইতেন সন্ন্যাসী হতে। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা ভেবেও দেখেননি। কিন্তু ভাগ্যের চাকা অন্য মোড় নিয়েছে।

মোদীর এমন একান্ত সাক্ষাৎকার দেওয়ার বিষয়টি অবাক করার মত ব্যাপার। কারণ, গণমাধ্যমের সঙ্গে স্বতস্ফূর্তভাবে কথা বলা তিনি এড়িয়েই চলেন। টিভি তে তিনি সাক্ষাৎকার দেন না বললেই চলে। আর প্রধানমন্ত্রীত্বের পাঁচ বছরে তিনি একটি সংবাদ সম্মেলনও করেননি।

অক্ষয়ের সঙ্গে এ সাক্ষাৎকার থেকে উঠে এসেছে মজার কিছু অজানা তথ্য:

জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে মোদীর কোনও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টই ছিল না। অল্প বয়সেই ছেড়েছিলেন পরিবার। দেশই ছিল তার মা-বাবা। তিনি এমন এক প্রধানমন্ত্রী যিনি দেশ ছাড়া কিছু ভাবেন না, গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করেন, ঘুমোন মাত্র তিন-চার ঘণ্টা। আবার রাজনীতি, প্রধানমন্ত্রিত্বের গাম্ভীর্যের বাইরে হাসিঠাট্টাও করেন। যেমনটি তিনি করলেন অক্ষয় কুমারের সঙ্গে।

অর্থাৎ, তিনিও যে আম জনতার মধ্যে থেকে উঠে আসা সাধারণ মানুষ সেটাই বুঝিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সামান্য ‘চাওয়ালা’ থেকে প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসার পেছনে যে সংগ্রামের কাহিনী মানুষের যতটুকু জানা আছে তাই যেন এবার পূর্ণতা পেয়েছে তার কথায়।

কখনো রাগ হয় কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে মোদী বলেছেন, তিনি খুব সহজে রাগ করেন না। যদিও এটা মানুষের চরিত্রের একটা বৈশিষ্ট্য। এটা এমন একটা আবেগ, যা নেতিবাচকতা সৃষ্টি করে। কিন্তু যখন থেকে রাজনৈতিক জীবন শুরু করেছেন তখন থেকে কখনও রাগ প্রকাশ করেননি বলেই জানান মোদী।

আরও একটি গোপন কথা জানিয়ে মোদী বলেছেন, রাগ বা অন্য কোনও অনুভুতির আতিশয্য হলে তিনি তা লিখে রাখেন। পরে  সেটি নিয়ে ভাবেন। ‘‘এতে তিনি নিজের ভুল বুঝতে পারেন। তবে এর পিছনে বেশি সময় দেন না।

তার কথায় উঠে এসেছে পশ্চিসবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বন্ধুত্বের প্রসঙ্গও। সাক্ষাৎকারে মোদী বলেছেন, বিরোধী শিবির হলেও, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার জন্য কুর্তা বেছে দিয়ে , সেই কুর্তা  তাকে পাঠান।  মিষ্টি ও উপহার পাঠান। বছরে দুই একবার মিষ্টি পাঠান মমতা। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজাদের সঙ্গে সখ্যতার কথাও বলেন মোদী।

তাছাড়া, অক্ষয়ের প্রশ্নে দিনে-রাতে মাত্র ৩-৪ ঘণ্টা ঘুমানোর প্রসঙ্গেও মোদী উল্লেখ করেছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে তার বন্ধুত্বের প্রসঙ্গ। বলেছেন, ওবামার সঙ্গে দেখা হলেই জিজ্ঞেস করেন, এখন ঘুম বাড়িয়েছেন?’’

অফিস করা প্রসঙ্গে মোদী বলেন, আগের প্রধানমন্ত্রী সাড়ে পাঁচটা-ছ’টায় অফিস ছেড়ে যেতেন। কিন্তু তিনি গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করেন। কর্মীরাও প্রধানমন্ত্রীর পদের গুরুত্ব বুঝে আগে হালকা কথাবার্তা বলতে ভয় পেতেন বা সংকোচ বোধ করতেন। কিন্তু এখন করেন না।

প্রতি মুহূর্তের প্রতিটি বাক্যে যে প্রধানমন্ত্রীর রাজনীতির ইঙ্গিত থাকে সেই তিনিই  অক্ষয় কুমারের সঙ্গে ‘রাজনীতি বর্জিত’ এ বাক্যালাপ করেছেন। যদিও পর্যবেক্ষকরা অনেকেই বলছেন, প্রত্যক্ষভাবে রাজনীতির কোনো কথা না থাকলেও সুকৌশলে তা ঢুকেছেই। তা সচেতন বা অবচেতন যেভাবেই হোক না কেন।