শ্রীলঙ্কায় নিহত বেড়ে ৩২১, নীরবতায় শুরু রাষ্ট্রীয় শোক

শ্রীলঙ্কায় কয়েকটি চার্চ ও হোটেলে একযোগে চালানো আত্মঘাতী বোমা হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩২১ জনের দাঁড়িয়েছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 April 2019, 06:17 AM
Updated : 23 April 2019, 08:31 AM

কলম্বো পুলিশের মুখপাত্র রাবন গুসাসেকারা মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে জানান,গত রোববার ওই হামলায় আহত পাঁচ শতাধিক মানুষের মধ্যে বেশ কয়েকজন হাসপাতালে মারা গেছেন।  

এই তথ্য যখন এল, তখন হতাহতদের স্মরণে রাষ্ট্রীয় শোক পালন করছে শ্রীলঙ্কা।

চ্যানেল নিউজ এশিয়ার খবরে বলা হয়, তিন মিনিট নীরবতার মধ্য দিয়ে সকালে ভারত মহাসগারের এই দ্বীপ দেশে রাষ্ট্রীয় শোক পালনের কার্যক্রম শুরু হয়।

পুরো দেশে সব সরকারি-আধা সরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা রাখা হয় অর্ধনমিত। বোমায় ক্ষতিগ্রস্ত নেগম্বোর সেইন্ট সেবাস্টিয়ানের গির্জায় শেষকৃত্য শেষে নিহতদের কয়েকজনকে শোয়ানো হয় গণকবরে।

তিন মিনিট নীরবতা পালনেরর ওই কর্মসূচি শুরু হয় সকাল সাড়ে ৮টা থেকে। দুই দিন আগে ঠিক ওই সময়েই ইস্টার সানডের প্রার্থনা চলাকালে তিনটি গির্জা ও তিনটি পাঁচ তারা হোটেলে মোট ছয়টি শক্তিশালী বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।

কলম্বোর একটি গির্জা ও তিনটি পাঁচ তারা হোটেল, নিকটবর্তী নেগম্বো শহরের একটি গির্জায় ও দেশের অন্য প্রান্তে বাত্তিকোলার একটি গির্জায় হামলাগুলো চালানো হয়। 

এর পাঁচ ঘণ্টা পর কলম্বোর দক্ষিণাংশের দেহিওয়ালায় জাতীয় চিড়িয়াখানার কাছে ছোট একটি হোটেলে সপ্তম বিস্ফোরণটি ঘটে। এতে দুই জন নিহত হন বলে জানিয়েছে বিবিসি।

বিকালে পুলিশের অভিযান চলাকালে কলম্বোর দেমাটাগোদা এলাকায় আরেকটি বিস্ফোরণ ঘটে, এতে তিন পুলিশ নিহত হন।

প্রথম ছয়টি হামলায় কোথায় কতোজন নিহত হয়েছেন কর্তৃপক্ষ তা প্রকাশ করেনি। অন্তত সাত জন আত্মঘাতী এসব হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

হতাহতের অধিকাংশই শ্রীলঙ্কান। তবে নিহতদের মধ্যে ৩৮ জন বিদেশি রয়েছেন বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। এদের মধ্যে অন্তত আট জন ভারতীয়, আট ব্রিটিশ, তিন ডেনিশ, দুই তুর্কি, দুই অস্ট্রেলীয়, এক চীনা, এক বাংলাদেশি এবং যুক্তরাষ্ট্র, নেদারল্যান্ড ও পতুর্গালের নাগরিকরা রয়েছেন।

এক দশক আগে বিচ্ছিন্নতাবাদী তামিল টাইগাররা উৎখাত হওয়ার পর এমন ভয়াবহ হামলা আর দেখা যায়নি শ্রীলঙ্কায়। এই পরিস্থিতিতে সোমবার মধ্যরাত থেকে জরুরি অবস্থা জারি হয়েছে ভারত লাগোয়া দ্বীপরাষ্ট্রটিতে।

জরুরি অবস্থার বলে পুলিশ ও সামরিক বাহিনী আদালতের নির্দেশ ছাড়াই সন্দেহভাজনদের আটক ও জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে। এর আগে গৃহযুদ্ধের সময় শেষ এ ক্ষমতা ব্যবহার করেছিল দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীগুলো।

বিস্ফোরণের পর সরকার ফেইসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ ও ইনস্টাগ্রামের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে প্রবেশ বন্ধ করে দেয়।

শ্রীলঙ্কার পুলিশ জানিয়েছে, ওই হামলায় জড়িত সন্দেহে এ পর্যন্ত মোট ৪০ জনকের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের নাম পরিচয় প্রকাশ করা না হলেও এদের অধিকাংশই শ্রীলঙ্কান ও এদের জিজ্ঞাসাবাদের পর একজন সিরীয়কে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে রয়টার্সকে জানিয়েছে শ্রীলঙ্কা সরকার ও সামরিক বাহিনীর তিনটি সূত্র।

“স্থানীয় সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করার পর তাকে (সিরীয়) গ্রেপ্তার করা হয়,” বলেছে একটি সূত্র।

এখনও কেউ দায় স্বীকার না করলেও প্রাথমিকভাবে ন্যাশনাল তাওহীদ জামায়াত (এনটিজে) নামে স্থানীয় একটি ইসলামী সংগঠনকে সন্দেহ করা হচ্ছে।

তবে শ্রীলঙ্কা সরকারের ধারণা, যে সংগঠনই ওই হামলা চালিয়ে থাকুক,তারা শ্রীলঙ্কার বাইরে থেকে সহযোগিতা পেয়েছে। এ বিষয়ে তদন্তে আন্তর্জাতিক সহায়তাও চাওয়া হয়েছে শ্রীলঙ্কা সরকারের তরফ থেকে।

তবে এনটিজে বা অন্য কোনো গোষ্ঠী রোববারের হামলায় দায় স্বীকার করেনি।

যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সূত্রগুলো জানিয়েছে, হামলাগুলোতে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) কিছু বৈশিষ্ট্যের ছাপ রয়েছে।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশটিতে ভয়াবহ হামলার তদন্তে ইতোমধ্যে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে পুলিশের আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারপোল।

প্যারিসভিত্তিক এই সংস্থাটি জানিয়েছে, ইতোমধ্যে তারা একটি দল কলম্বোয় পাঠিয়েছে, যদি আরও কিছু প্রয়োজন হয়, তাও দিতে তৈরি তারা।

পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআই ও ব্রিটিশ কর্মকর্তারাও তদন্তে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।

গার্ডিয়ান জানিয়েছে, দুই দিন বিরতির পর মঙ্গলবার আবার বসছে শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্ট। সেখানে ওই হামলার ঘটনা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহের একটি বিবৃতি আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আরও খবর