প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈই নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ শুক্রবার ওই কমিটি গঠন করে দেয়।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, সাবেক বিচারপতি এফ. এম. কালিফুল্লাহর নেতৃত্বে কমিটির বাকি দুই সদস্য হলেন আধ্যাত্মিক গুরু রবিশঙ্কর এবং জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শ্রীরাম পঞ্চু।
এক সপ্তাহের মধ্যে কমিটিকে তাদের কাজ শুরু করতে বলা হয়েছে। কাজ শেষ করতে কমিটি আট সপ্তাহ সময় পাবে। তার আগে চার সপ্তাহের মধ্যে কমিটিকে মধ্যস্থতার অগ্রগতি সংক্রান্ত রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে বলে জানায় আনন্দবাজার পত্রিকা।
ফৈজাবাদে মধ্যস্থতার প্রক্রিয়া চলবে। গোপনীয়তা বজায় রেখে মধ্যস্থতার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। মধ্যস্থতা চলাকালীন কমিটি কারো সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতে পারবে না বা এ সংক্রান্ত কোনও তথ্য সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ করা যাবে না।
কমিটি গঠনের আগে সুপ্রিম কোর্ট থেকে এই মামলার সঙ্গে জড়িত হিন্দু ও মুসলমান দলগুলোকে সমঝোতার মাধ্যমে সংকট সমাধানের সম্ভাব্য পথ খুঁজে বের করার আহ্বান জানানো হয়েছে বলে জানায় রয়টার্স।
ভারতীয় উপমহাদেশে প্রথম মুঘল সম্রাট বাবরের আমলে ১৫২৮ সালে উত্তর প্রদেশের ফৈজাবাদ জেলার অযোধ্য শহরের রামকোট হিলে বাবরি মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছিল।
হিন্দু দলগুলোর দাবি, সেখানে আগে একটি মন্দির ছিল। সম্রাট বাবর সেটি ভেঙ্গে বাবরি মসজিদ নির্মাণ করেন।
১৯৯২ সালে উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা বাবরি মসজিদ ভেঙ্গে ফেললে দেশজুড়ে হিন্দু-মুসলমান সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে।
দাঙ্গায় প্রায় দুই হাজার মানুষ প্রাণ হারায়, যা সাতচল্লিশের দেশভাগের পর ভারতে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী দাঙ্গার একটিতে পরিণত হয়।
হিন্দু দলগুলো ধ্বংস করা বারবি মসজিদের স্থানে রামমন্দির নির্মাণ করতে চাইছে।
আসন্ন নির্বাচনে ভারতের ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) দেশটির সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সম্প্রদায়ের ভোট জিততে দীর্ঘদিন ধরে সেখানে মন্দির নির্মাণ শুরু করতে সুপ্রিম কোর্টের অনুমতি চেয়ে আসছে।
এমনকি, বিজেপির শরিক কয়েকটি দল আইন পাশের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টকে এড়িয়ে মন্দির নির্মাণের অনুমোদন আদায় করার দাবিও করেছে।
যদিও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এ বিষয়ে আদালতের উপরেই আস্থা রাখতে চান।
এশিয়ান নিউজ ইন্টারন্যাশনালে তিনি বলেন, আইনকে তার নিজের গতিতে চলতে দেওয়া উচিত।
আগামী মে মাসে ভারতের জাতীয় নির্বাচন।
রয়টার্স জানায়, হিন্দুদের দেবতা রামের জন্মভূমি হিসেবে অযোধ্যায় একটি রামমন্দির নির্মাণের দাবিতে গত তিন দশক ধরে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি) আন্দোলন ও প্রচার চালিয়ে আসছে।
অযোধ্যা মামলায় চাপ দিতে গত কয়েক মাসে ভিএইচপি বেশ কয়েকটি মিছিল-মিটিংয়ের আয়োজন করেছে, যেগুলোতে হাজারো মানুষ অংশ নিয়েছে।
এর আগে ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগেও অযোধ্যায় মন্দির নির্মাণ নিয়ে রাজনৈতিক খেলা চলেছিল। যার জেরে উত্তর প্রদেশে দাঙ্গায় ৬৫ মানুষের প্রাণ যায়। গৃহহীন হয় হাজার হাজার মানুষ, যাদের বেশিরভাগই মুসলমান।
ওই দাঙ্গায় দুই হিন্দুকে হত্যার অভিযোগে ফেব্রুয়ারিতে আদালত সাত মুসলমানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়।