বালাকোটে হামলা: ‘সন্ত্রাসীদের মৃতদেহ’ দেখতে চায় কাশ্মীরে নিহত সৈন্যদের পরিবার

পাকিস্তানের বালাকোটে ভারতীয় বিমান বাহিনীর হামলায় ক্ষয়ক্ষতির প্রমাণ দেখতে চেয়েছে জম্মু ও কাশ্মীরে গত মাসে আত্মঘাতী বোমা হামলায় নিহত সামরিক বাহিনীর দুই সৈনিকের পরিবার।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 March 2019, 10:49 AM
Updated : 6 March 2019, 10:49 AM

পুলওয়ামায় সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্সের (সিপিআরএফ) গাড়িবহরে জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মোহাম্মদের ওই গাড়িবোমা হামলায় নিহত ৪০ সেনার মধ্যে উত্তর প্রদেশের শামলির প্রদীপ কুমার ও মাইনপুরির রাম ভাকিলের নামও আছে বলে জানিয়েছে এনডিটিভি।

এর প্রতিক্রিয়ায় ২৬ ফেব্রুয়ারি ভারতীয় বিমানবাহিনী বালাকোটের কাছে জইশ-ই-মোহাম্মদের একটি প্রশিক্ষণ শিবিরে বোমা হামলা চালানোর দাবি করে।

পাঁচ দশকে এটাই পাকিস্তানের ভেতর ঢুকে ভারতের প্রথম বিমান হামলা বলে জানিয়েছে এনডিটিভি।

ভারতীয় বিমানবাহিনী বালাকোটের কাছে একটি জঙ্গি প্রশিক্ষণ শিবির গুঁড়িয়ে দিয়ে প্রায় ৩০০ জঙ্গিকে হত্যা করেছে বলে দাবি করে আসছে নয়া দিল্লি। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে অবশ্য ওই দাবি নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে।

মার্কিন একটি প্রতিষ্ঠানের তোলা উপগ্রহের ছবিতে বালাকোটে জইশ-ই-মোহাম্মদের পরিচালিত মাদ্রাসাটি এখনও অক্ষত আছে বলে দেখাও যাচ্ছে।

সরকার ও বিরোধীদের মধ্যে হামলার ক্ষয়ক্ষতি ও প্রভাব নিয়ে মতবিরোধের মধ্যেই উত্তর প্রদেশের দুই সেনা  প্রদীপ ও রাম ভাকিলের পরিবার বালাকোটে হামলায় ক্ষয়ক্ষতির ‘অকাট্য প্রমাণ’ চেয়েছেন।

বিমান বাহিনীর হামলায় কী পরিমাণ হতাহত হয়েছে তা নিয়ে ভারতের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে পৃথক পৃথক তথ্য দিয়েছে। দেশটির বিমান বাহিনী (আইএএফ) বলেছে,তাদের কাজ লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানা, মৃতদেহ গোণা নয়।

“পুলওয়ামার ক্ষেত্রে আমরা কারও হাত দেখেছি, কারও পা; এবার অন্য পক্ষেও এরকমটা দেখতে চাই। বোমা হামলার পরপরই প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই কেউ না কেউ এর দায় স্বীকার করে। আমি নিশ্চিত, ওই বিমান হামলাটি হয়েছে, কিন্তু তারা কী করেছে? অবশ্যই এর স্পষ্ট প্রমাণ থাকা প্রয়োজন,” বলেছেন রাম ভাকিলের বোন রাম রাকশা।

প্রমাণ না পাওয়া পর্যন্ত সরকারি ভাষ্য মেনে নেওয়া হবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

“পাকিস্তান বলেছে তাদের ওইখানে কোনো হতাহত হয়নি, কোনো প্রমাণ না থাকলে আমরা কীভাবে এটি (সরকারি দাবি) মেনে নিই। দেখাও আমাদের, তখনই আমরা শান্তি পাবো, জানবো আমার ভাই হত্যার প্রতিশোধ নেওয়া হয়েছে,” বলেছেন তিনি।

রাম রাকশার মতোই বালাকোটে হামলার অকাট্য প্রমাণ চান প্রদীপের মা সুলেলতা।

“আমরা সন্তুষ্ট নই। অনেক সন্তান মারা গেছে। আমরা (পাকিস্তানে) কাউকে মৃত দেখিনি। অন্য পাশে কোনো মৃতদেহ দেখা যায়নি। নিশ্চিত হওয়া যায় এমন কোনো খবরও নেই। আমরা এসব টেলিভিশনে দেখতে চাই। আমরা আমাদের ঘরেও এই কথা বলতে চাই। আমরা সন্ত্রাসীদের মৃতদেহ দেখতে চাই,” বলেন ৮০ বছর বয়স্ক এ বৃদ্ধা। 

এদিকে বিরোধীদল এবং গণমাধ্যমের ধারাবাহিক সমালোচনার মধ্যেও নরেন্দ্র মোদীর সরকার হামলা এবং ক্ষয়ক্ষতির বিস্তারিত প্রকাশে রাজি নয় বলেও জানিয়েছে এনডিটিভি।

মঙ্গলবার ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী রাজনাথ সিং হতাহতের সংখ্যা নিয়ে কংগ্রেস নেতাদের সন্দেহবাতিকগ্রস্ততার কড়া প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন।

আসামে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর একটি নজরদারি ব্যবস্থাপনার উদ্বোধীন অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “ন্যাশনাল টেকনিকাল রিসার্চ অর্গানাইজেশনের (এনটিআরসি) একটি বিশ্বাসযোগ্য পদ্ধতি রয়েছে। তারা বলছে, হামলার আগে ওইখানে ৩০০ মোবাইল সক্রিয় ছিল। তাহলে কি গাছ মোবাইল ব্যবহার করেছিল? এখন কি আপনারা এনটিআরসিকেও অবিশ্বাস করবেন?”

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী একথা বললেও হতাহতের সংখ্যা নিয়ে এখন পর্যন্ত প্রতিরক্ষা মন্ত্রী নির্মলা সিতারমন কোনো মন্তব্য করেননি।