ধরা পড়ার আগে ‘গুলি ছুড়েছিলেন’ ভারতীয় বৈমানিক

ভারতীয় বিমান বাহিনীর উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমান পাকিস্তানে যেভাবে ধরা পড়লেন সেই ঘটনারই বিস্তারিত উঠে এসেছে গ্রামবাসীর বর্ণনায়।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Feb 2019, 04:38 PM
Updated : 28 Feb 2019, 07:41 PM

বিবিসি’র সঙ্গে বুধবার এক সাক্ষাৎকারে ঘটনার আদ্যপান্ত জানিয়েছেন পাকিস্তানশাসিত কাশ্মীরের হোরান গ্রামের প্রধান মোহাম্মদ রাজ্জাক চৌধুরি।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনামতে, ধরা পড়ার আগে কয়েকবার গুলি ছুড়েছিলেন অভিনন্দন। আর গ্রামের মানুষ তার দিকে পাথর ছুড়ে।

গত বুধবার ভারত ও পাকিস্তানের পাল্টাপাল্টি হামলার মধ্যে পাকিস্তানশাসিত কাশ্মীরে ভারতের জঙ্গিবিমান ভূপাতিত হয়।

সে ঘটনাই স্মরণ করে হোরান গ্রামপ্রধান রাজ্জাক চৌধুরি বিবিসি'কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “আমার উদ্দেশ্য ছিল পাইলটকে জীবীত ধরা। আমি তার প্যারাশুটে ভারতীয় পতাকা দেখতে পাচ্ছিলাম। বুঝে গিয়েছিলাম সে একজন ভারতীয়।”

মিগ-২১ জঙ্গি বিমানটিকে বুধবার সকালেই আগুন লেগে নিচে পড়তে দেখেন রাজ্জাক। তৎক্ষণাৎ তিনি দৌড়ে সেখানে যান এবং তার সঙ্গে সঙ্গে ছুটে আসেন গ্রামের অন্যান্য বাসিন্দারাও।

চৌধুরি বলেন, লোকজন ওই পাইলটের ক্ষতি করবে কিংবা সেও তাদের ক্ষতি করতে পারে বলে তিনি ভয় পাচ্ছিলেন।

ঘটনাস্থলে গিয়ে তিনি শুনতে পান পাইলট গ্রামবাসীদের কয়েকজনকে জিজ্ঞেস করছেন তিনি ভারতে নেমেছেন কিনা-- আর তাদের মধ্য থেকে এক ছেলে বলে ওঠে ‘হ্যাঁ’। আর তখনই ওই বৈমানিক প্যারাশুট থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে দেশীয় স্লোগান দেন। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে তার চারপাশ ঘিরে থাকা ছেলেরা পাল্টা ‘পাকিস্তান দীর্ঘজীবী হোক’ স্লোগান দেয়।

এরপরই পাইলট তার পিস্তল বের করেন এবং তাদেরকে সরিয়ে দিতে ফাঁকা গুলি ছোড়েন। কিন্তু তার এ গুলি ছোড়াতেই আশেপাশের মানুষ আরো আগ্রাসী হয়ে ওঠে। চৌধুরি বলেন, তারা হাতে পাথর তুলে নিয়ে তার দিকে ছুড়তে শুরু করে। আর পাইলটও গুলি ছুড়তে ছুড়তে দৌড়তে শুরু করেন।

ছেলেরাও তাকে ধাওয়া করে। পরে পাইলট দ্রুত একটি পুকুরে ঝাঁপিয়ে পড়েন। হাতে অস্ত্র থাকা একজন তখন তার পায়ে গুলি করে এবং তাকে অস্ত্র ফেলে দিতে বলে। পাইলট অস্ত্র ফেলে দিলে তাকে ধরে ফেলে মাটিতে ঠেসে ধরে আরেকজন। সে সময় পাইলট পকেট থেকে কিছু কাগজ বের করে তা গিলে ফেলা এবং পানিতে ভিজিয়ে তা নষ্ট করার চেষ্টা চালান।

চৌধুরি বলেন, “আমাদের ছেলেরা খুবই ক্ষিপ্ত ছিল। তারা পাইলটকে কিলঘুষি, থাপ্পড় মারতে উদ্যত হয়েছিল। তবে তাদেরই কেউ কেউ আবার তা থামানোর চেষ্টা করে। আমিও তাদেরকে বলেছিলাম তার কোনো ক্ষতি না করতে। সেনাবাহিনী না আসা পর্যন্ত তাকে ছেড়ে দিয়ে রাখতে বলেছিলাম।”

বুধবার কাশ্মীরে ভারত-পাকিস্তানের লড়াইয়ের পর পকিস্তান একজন পাইলটকে ধরেছে বলে দাবি করলেও ভারত প্রাথমিকভাবে এমন কিছু ঘটার কথা বলেনি। কিন্তু এরপর পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রণালয় মুখে রক্ত এবং চোখ বাঁধা এক পাইলটের ভিডিও প্রকাশ করে।

অবশ্য পরে তারা এ ভিডিও সরিয়ে নেয় এবং ভারতীয় উইং কমান্ডার অভিনন্দনের চায়ের কাপ হাতে সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলার ভিডিও প্রকাশ করে। সে ভিডিওতে ভারতীয় এ বৈমানিক জানান, পাকিস্তানি সেনারা তার সঙ্গে ভাল আচরণই করছে।