মিয়ানমারে সংবিধান সংশোধনে কমিটি গঠনের প্রস্তাব পাস

মিয়ানমারের পার্লামেন্ট সংবিধান সংশোধন নিয়ে আলোচনার জন্য একটি কমিটি গঠনের প্রস্তাবের পক্ষে সায় দিয়েছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Feb 2019, 09:37 AM
Updated : 6 Feb 2019, 09:37 AM

সেনাসমর্থিত আইনপ্রণেতাদের বিরোধিতা সত্বেও বুধবার প্রস্তাবটি সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের ভোটে পাস হয় বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

সংবিধানে বড় ধরনের কোনো সংশোধনী এলে তা দেশটির সেনাবাহিনীর ক্ষমতাকে খর্ব করতে পারে বলেও অনেকের ধারণা।

মিয়ানমারের এখনকার সংবিধান ২০০৮ সালে গৃহীত হয়। নোবেলজয়ী অং সান সু চি নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) দীর্ঘদিন ধরেই সামরিক জান্তা সরকারের আমলে রচিত এ সংবিধানকে ‘অগণতান্ত্রিক’ হিসেবে অ্যাখ্যা দিয়ে আসছে।

সংবিধানের কিছু অংশের পরিবর্তনের লক্ষ্যে এনএলডি পার্লামেন্টে একটি ‘জরুরি প্রস্তাব’ উত্থাপন করলে বুধবার তা নিয়ে ভোটাভুটি হয়।

পার্লামেন্টের উভয়কক্ষের ৬১১ আইনপ্রণেতার মধ্যে ৪১৪জনই প্রস্তাবটির পক্ষে ভোট দিলে সংবিধান নিয়ে আলোচনায় কমিটি গঠনের পথ সুগম হয়; দুই কক্ষ মিলিয়ে সু চির এনএলডিই সংখ্যাগরিষ্ঠ।

রয়টার্স বলছে, তিন বছর আগের নির্বাচনে ক্ষমতায় আসার পর এটাই এনএলডির প্রথম কোনো পদক্ষেপ যা মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারে।

এনএলডির উত্থাপিত প্রস্তাবের বিরুদ্ধে নিজেদের আপত্তির বিষয়টি গোপনও রাখেননি সেনা মনোনীত আইনপ্রণেতারা। প্রস্তাবের বিরোধিতায় পার্লামেন্টে কয়েক মিনিট নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন তারা।

রাখাইনে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর সেনা অভিযান নিয়ে দেশটির সামরিক-বেসামরিক নেতৃত্বের ওপর প্রবল আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যেই বুধবার সংবিধান সংশোধনে কমিটি গঠনের এ প্রস্তাবটি পাস হল। ‘বর্বর’ ওই সেনা অভিযানের পর প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত টপকে প্রতিবেশী বাংলাদেশে পালিয়ে আসে।

মিয়ানমার পার্লামেন্টের ডেপুটি স্পিকার ও এনএলডি সাংসদ টুন টুন হেইন সংবিধান সংশোধনের আলোচনায় গঠিত নতুন কমিটিটির সভাপতিত্ব করবেন বলে বুধবার স্পিকার টি কুন মিয়াত জানিয়েছেন।

“রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধি ও সামরিক আইনপ্রণেতাদের মধ্য থেকে আনুপাতিক হারে (সংবিধান) সদস্য কমিটিতে যুক্ত করা হবে,” বলেছেন তিনি। 

মিয়ানমারের সংবিধান অনুযায়ী, পার্লামেন্টের এক-চতুর্থাংশ আসন ও গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয় সেনাবাহিনীর জন্য সংরক্ষিত। অন্যদিকে যে কোনো সংশোধনীর জন্য পার্লামেন্টের ৭৫ শতাংশের বেশি সদস্যের অনুমোদন প্রয়োজন হয়।

এ বিধানের ফলে সামরিক বাহিনীর সায় ছাড়া কার্যত কোনো সংশোধনীই গৃহীত হওয়ার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

পার্লামেন্টে ‘জরুরি প্রস্তাব’ নিয়ে ভোটাভুটির আগে মঙ্গলবার এনএলডির সাংসদরা বলেন, সংবিধান সংশোধনে জনগণের সমর্থন আছে। কমিটি গঠিত হলে সব দলই এ বিষয়ে কথা বলার সুযোগ পাবে বলেও আশ্বাস দেন তারা।

সেনাঘনিষ্ঠ ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির (ইউএসডিপি) আইনপ্রণেতারা সংবিধান সংশোধনের ধারা মেনে ‘জরুরি প্রস্তাবটি’ উত্থাপিত হয়নি বলে অভিযোগ করেন।

“আমরা সংবিধান সংশোধনের বিরোধিতা করছি না। জনগণের স্বার্থে উপযুক্ত সময়ে সংবিধানের বিভিন্ন অংশের সংশোধন জরুরি। কিন্তু এটি আইন অনুযায়ীয় হওয়া উচিত,” বলেন ইউএসডিপির সাংসদ থং আই।

মিয়ানমারের বর্তমান সংবিধানে বিদেশি স্বামী/স্ত্রী বা সন্তানধারী কারও প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নিষেধাজ্ঞা আছে। মৃত ব্রিটিশ স্বামী মিশেল আরিসের ঘরে দুই ছেলে থাকায় তিন বছর আগের নির্বাচনে এনএলডির অভূতপূর্ব বিজয় হলেও সু চি প্রেসিডেন্ট হতে পারেননি।

তার দল অবশ্য সংবিধানের কোন কোন অংশের সংস্কার চায় তা এখনো খোলাসা করেনি। এনএলডির কয়েকজন আইনপ্রণেতা এর আগে সংবিধানের ৪৩৬ নম্বর ধারাকেই বদলে ফেলতে চেয়েছিলেন; সংবিধান সংশোধনের বিধানগুলো এ ধারাতেই আছে।