বলিউড অভিনেতা নাসিরউদ্দিন শাহকে নিয়ে বিতর্কের মধ্যে গত শনিবার লাহোরে এক অনুষ্ঠানে সাবেক এই ক্রিকেট তারকা বলেন, দুর্বলের প্রতি ন্যায়বিচার করা না হলে তা তাদের বিদ্রোহের দিকে নিয়ে যায়।
এ পর্যায়ে বাংলাদেশের জন্মের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, “পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে তাদের অধিকার দেওয়া হয়নি, এটাই বাংলাদেশ সৃষ্টির পেছনে প্রধান কারণ।”
পাঞ্জাব সরকারের ১০০ দিনের সাফল্য তুলে ধরতে ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল বলে ভারতের এনডিটিভি জানিয়েছে।
দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর পাকিস্তানের অংশে পড়া বর্তমান বাংলাদেশ শোষণ-বঞ্চনার শিকার হচ্ছিল ধারাবাহিকভাবে।
পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার ৫৬ শতাংশ তখন পূর্ব পাকিস্তানের (আজকের বাংলাদেশ) বাসিন্দা। কিন্তু প্রথম বাজেটে উন্নয়ন খাতের ২৮ হাজার টাকার মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানকে দেওয়া হয়েছিল মাত্র ৫ হাজার টাকা।
পরের দুই যুগে রাজনীতি, অর্থনীতি, সামাজিক- প্রতিটি ক্ষেত্রে এ জনপদের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষকে নানাভাবে অধিকারবঞ্চিত করেছে পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী। এমনকি মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যও বাঙালিকে রক্ত দিতে হয়েছে।
সেই অবিচারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলনের পর বাঙালি যখন স্বাধীনতার বিকল্প দেখছিল না, তখন ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়েছিল নিরস্ত্র বাঙালির উপর।
সেই কালরাতের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সেই প্রতিরোধ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে বাংলার মানুষ। ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার তৎকালীন রেসকোর্স (এখন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ময়দানে মুক্তিবাহিনী ও ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় সেনা কমান্ডের যৌথ নেতৃত্বের কাছে আত্মসমর্পণ করে পাকিস্তানি বাহিনী; লাল সবুজ পতাকা ওড়ে স্বাধীন ভূমিতে, নতুন দেশে।
প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে পূর্ব পাকিস্তানের ওপর সেই শোষণের বিষয়টি কারযত শনিবার লাহোরের ওই অনুষ্ঠানে স্বীকার করে নেন বাংলাদেশ নিয়ে বিভিন্ন সময় বিতর্কিত মন্তব্য করে আসা ইমরান।
এ মাসের শুরুর দিকে ভারতের উত্তরপ্রদেশে কয়েকটি গরুর দেহাবশেষ পাওয়ার পর জনতা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠলে পুলিশ তা থামাতে গিয়ে হামলার মুখে পড়ে। ওই ঘটনায় এক পুলিশ সদস্যের মৃত্যুর পর তা নিয়ে মন্তব্য করে রোষানলে পড়েন অভিনেতা নাসিরউদ্দিন শাহ।
‘সংখ্যালঘুদের সঙ্গে কীভাবে আচরণ করতে হয়’ তা নরেন্দ্র মোদী সরকারকে ‘দেখিয়ে দেবেন’ বলেও অনুষ্ঠানে মন্তব্য করেন ইমরান খান।
“সংখ্যালঘুদের সঙ্গে কীরকম আচরণ করতে হয় মোদী সরকারকে তা দেখিয়ে দেব আমরা। এমনকী ভারতেও, লোকজন বলছে, সংখ্যালঘুদের পূর্ণ নাগরিকের মর্যাদা দেওয়া হচ্ছে না।”
তিনি বলেন, পাকিস্তানের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য তার সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে এবং পাকিস্তানের জনক মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর দর্শনও তাই ছিল।
সংখ্যালঘুরা যেন ‘নতুন পাকিস্তানে’ নিরাপদ, সুরক্ষিত বোধ করে ও সমধিকার পায় তার সরকার তা নিশ্চিত করারও প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।