পার্লামেন্ট ভেঙে দিলেন সিরিসেনা, ভোট ৫ জানুয়ারি

শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে দেশটিতে আগাম নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছেন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Nov 2018, 06:44 AM
Updated : 10 Nov 2018, 06:44 AM

শুক্রবার জারি করা এক আদেশে তিনি আগামী ৫ জানুয়ারি ভোট অনুষ্ঠানের নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছে এনডিটিভি।

এরপর নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে ১৭ জানুয়ারি থেকে শুরু হবে নতুন পার্লামেন্টের কার্যক্রম, বলেছেন তিনি।

‘বরখাস্ত’ প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমসিংহের বিপক্ষে সিরিসেনা সমর্থিত মাহিন্দা রাজাপাকসের সরকার পার্লামেন্টে পর্যাপ্ত সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণে ব্যর্থ হচ্ছে, এমনটা স্পষ্ট হওয়ার পরপরই লঙ্কান প্রেসিডেন্ট পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার এ ঘোষণা দিলেন। 

এ আদেশের বিরুদ্ধেও তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে বিক্রমসিংহের ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টি (ইউএনপি)। ২২৫ সদস্যের পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার একক ক্ষমতা প্রেসিডেন্টের নেই বলেও দাবি করছে তারা।

ক্ষমতাকেন্দ্রীক রেষারেষির এক পর্যায়ে গত মাসের শেষ দিকে ইউনাইটেড পিপলস ফ্রিডম অ্যালায়েন্স ক্ষমতাসীন জোট সরকার ছেড়ে দিলে ইউএনপির বিক্রমসিংহকে বরখাস্ত করেন সিরিসেনা। যা দেশটিতে রাজনৈতিক সঙ্কট তীব্রতর করে তোলে।

সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপাকসেকে নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ পড়ানো হলেও ক্ষমতা ছাড়তে রাজি হননি বিক্রমসিংহ। নিজেকে ‘বৈধ প্রধানমন্ত্রী’ দাবি করে তিনি সিরিসেনার পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আদালতে যাওয়ারও হুঁশিয়ারি দেন।

এর আগে রাজাপাকসের বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ইউনাইটেড পিপলস ফ্রিডম অ্যালায়েন্সের (ইউপিএফএ) সিরিসেনার প্রতিই সমর্থন ছিল বিক্রমসিংহের; যার ওপর ভর করে পরে সংসদ নির্বাচনেও জোট বাঁধেন তারা।

সিরিসেনা ২০০৫ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট থাকা রাজপাকসের মন্ত্রিসভার সদস্যও ছিলেন।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দিল্লির সঙ্গে ইউএনপির ঘনিষ্ঠতা এবং সিরিসেনাকে হত্যায় ‘ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থার জড়িত থাকার কথা অভিযোগ’ নিয়ে দুই দলের ঘনিষ্ঠতায় ছেদ পড়ে।  তারপরই এক সময়ের মিত্র রাজাপাকসের দিকে ঝুঁকে পড়েন সিরিসেনা। 

বিক্রমসিংহকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যেন বিদ্রোহ না হয় প্রেসিডেন্ট সেজন্য পার্লামেন্টও স্থগিত করে দিয়েছিলেন। শুক্রবারের ডিক্রিতে ওই স্থগিত পার্লামেন্টই ভেঙে দেওয়া হল।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, আন্তর্জাতিক চাপের মুখে প্রেসিডেন্ট নতুন নির্বাচনের ডাক দিলেও তার মূল উদ্দেশ্য রাজাপাকসেকেই ফের ক্ষমতায় বসানো।

পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার আগে অন্য দল থেকে সাংসদদের সমর্থন নেওয়ারও সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়েছিলেন তিনি।

বিভিন্ন হিসাব বলছে, ২২৫ সদস্যের পার্লামেন্টে বিক্রমসিংহের প্রতি এখনও ১২০ জনের সমর্থন আছে; রাজাপাকসে পাশে পেতে পারেন বড়জোর ১০৪ জনকে।  এসব হিসাবে স্পিকারকে নিরপেক্ষ ধরা হলেও তিনি বিক্রমসিংহকে সরিয়ে রাজাপাকসেকে প্রধানমন্ত্রীর পদে বসানোর তীব্র সমালোচনা করেছিলেন।  

নতুন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার আগে ইউপিএফএ-র মুখপাত্র কেহেলিয়া রামবুকওয়েলা জানান, পার্লামেন্টে ১০৪ থেকে ১০৫ সদস্যের সমর্থন নিশ্চিত করতে পেরেছেন তারা। বিক্রমসিংহের পক্ষের সাংসদদের কেউ কেউ তাদের সমর্থন দেবেন বলেও সেসময় আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন তিনি।

এর কিছুক্ষণ পরই আকস্মিক এক ঘোষণায় পার্লামেন্ট বিলুপ্ত করে নতুন নির্বাচনের ঘোষণা আসে।

সিরিসেনার এ পদক্ষেপের সমালোচনা এসেছে শ্রীলঙ্কান বামপন্থি পিপলস লিবারেশন ফ্রন্টের (জেভিপি) কাছ থেকেও।

“এই মুহুর্তে পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়া পুরোপুরি অবৈধ এবং সংবিধানবিরোধী,” বলেছেন জেভিপির সাধারণ সম্পাদক তিলভিন সিলভা।

রাজনৈতিক সংকট দেশটির প্রশাসনকেও পঙ্গু করে রেখেছে বলে আগেই জানিয়েছেন উভয় পক্ষের সাংসদরা।

সিরিসেনার ঘোষণার আগে শুক্রবার ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভারত মহাসাগরের এ দ্বীপরাষ্ট্রটিতে দুই সপ্তাহ ধরে চলা সংকটে ‘গভীর উদ্বেগ’ জানায়।

নরওয়ে ও সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে দেওয়া এক যৌথ বিবৃতিতে তারা পার্লামেন্ট চালু করে দ্রুত নির্বাচন দিতেও বলে। 

“দেরি হলে তা শ্রীলঙ্কার আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি নষ্ট করবে এবং বিনিয়োগে ধস নামাবে,” বলে ইইউ।

এর আগে বৃহস্পতিবার বিক্রমসিংহ এক ভিডিও বার্তায় সিরিসেনার একের পর এক ‘অবৈধ’ পদক্ষেপের বিরোধিতায় রাস্তায় থাকায় সমর্থকদের ধন্যবাদ জানান। 

“আপনারা নিশ্চয়ই এ দেশকে স্বৈরাচারের কালো অন্ধকারে নিমজ্জিত হতে দেবেন না। বিপুল সংখ্যক মানুষ অনিঃশেষ সাহস নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে এসেছে। আপনারা মুখ খুলেছেন। গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় এই উদ্যমী চেষ্টার জন্য আমি আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ দিতে চাই,” বলেন এ ইউএনপি নেতা।