কারাগার থেকে ছাড়া পেলেন পাকিস্তানের আসিয়া বিবি

পাকিস্তানে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডের রায় মাথায় নিয়ে আট বছর ধরে জেলে থাকা খ্রিস্টান নারী আসিয়া বিবি কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। 

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Nov 2018, 07:22 AM
Updated : 8 Nov 2018, 07:39 AM

মুলতানের কারাগার থেকে পাঁচ সন্তানের এ জননীকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে তার আইনজীবী সাইফ মুলুকের বরাত দিয়ে জানিয়েছে বিবিসি।

স্থানীয় বেশ কিছু গণমাধ্যম ছাড়া পাওয়ার পরপরই আসিয়াকে একটি বিমানে তোলা হয়েছে জানালেও বিমানটির গন্তব্য কোথায়, তা বলতে পারেনি।

গত মাসের শেষ দিকে খ্রিস্টান এ নারীর মৃত্যুদণ্ডের রায় বদলে তাকে খালাস দিয়েছিল পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট, যা নিয়ে দেশটির কট্টরপন্থি মুসলিম দলগুলো তুমুল বিক্ষোভ শুরু করেছিল।

সহিংসতা ও বিক্ষোভ থামাতে পরে আসিয়ার দেশত্যাগে বাধা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সমঝোতা করে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সরকার।

এর পরপরই প্রাণভয়ে দেশ ছেড়ে পালান আসিয়ার আইনজীবী সাইফ মুলুক। নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় আসিয়ার স্বামী আশিক মসিহ নিজের ও পরিবারের সদস্যদের আশ্রয় দিতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও কানাডার সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান।

বেশ কয়েকটি দেশ অবশ্য আগে থেকেই আসিয়াকে আশ্রয় দেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছিল।

খ্রিস্টান এ নারীর কারাগার থেকে মুক্তিলাভের ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে কট্টরপন্থি দল তেহরিক-ই-লাবাইক (টিএলপি) । দলটির এক মুখপাত্র বলেছেন, আসিয়ার মুক্তি সরকারের সঙ্গে তাদের চুক্তির সুস্পষ্ট লংঘন।

“শাসকরা তাদের অসততা দেখিয়েছে,” বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন টিএলপির এজাজ আশরফি।

প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে মুসলমানদের নবী মোহাম্মদকে (সাঃ) কটুক্তি করার অভিযোগে ২০১০ সালে খ্রিস্টান নারী আসিয়া নুরিন দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন। তখন থেকেই কারাগারে ছিলেন তিনি।

শুরু থেকেই নিজেকে নির্দোষ দাবি করে এলেও নিম্ন আদালতের রায়ে পাঁচ সন্তানের এ জননীর মৃত্যুদণ্ড হয়; হাইকোর্টও পরে একই সাজা বহাল রাখে।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আসিয়া বিবির মৃত্যুদণ্ডাদেশ নিয়েও তুমুল সমালোচনা হয়, একে মানবাধিকারের চরম লংঘন বলেও অনেকে অভিহিত করেন।

পাকিস্তানের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম হওয়ায় বিভিন্ন আইনেও এর প্রভাব বিদ্যমান। দেশটিতে ব্লাসফেমী আইনের পক্ষে শক্ত জনসমর্থন আছে। নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করতে কট্টরপন্থি রাজনীতিবিদরাও প্রায়ই ব্লাসফেমী আইনে চরম শাস্তির পক্ষে সমর্থন দিয়ে থাকেন।

সমালোচকদের মতে, পাকিস্তানের এ ব্লাসফেমী আইনটি প্রায়ই ব্যক্তিগত রেষারেষির প্রতিশোধ নেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়, দণ্ড দেওয়া হয় দুর্বল সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে।

আসিয়ার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগও ‘অসঙ্গতিতে ভরপুর’ ছিল বলে মন্তব্য করেছিলেন তার আইনজীবীরা।

আট বছর পর রায় বদলে আসিয়াকে খালাস দেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারকরা।

সর্বোচ্চ আদালতের এ রায়ের প্রতিবাদ জানিয়ে সড়ক আটকে টানা বিক্ষোভ করে কট্টরপন্থি মুসলিম দলগুলো। ব্লাসফেমী আইনের সমর্থক এ দলগুলো আসিয়া বিবিকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করারও আহ্বান জানায়।

কট্টরপন্থি এক ধর্মীয় নেতা যে তিন বিচারক আসিয়াকে খালাস দিয়েছেন ‘তারা হত্যার শিকার হওয়ার উপযুক্ত’ বলে মন্তব্যও করেন।

আসিয়ার দেশত্যাগ আটকাতে সরকার ব্যবস্থা নেবে এবং সুপ্রিম কোর্টের রায় পর্যালোচনার আবেদনে বাধা দেওয়া হবে না এমন শর্তে সমঝোতা হলে বিক্ষোভকারীরা শান্ত হয়।