মালদ্বীপে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শেষ

নানা উদ্বেগ নিয়ে শুরু হলেও ভোটারদের বিপুল উৎসাহের মধ্য দিয়ে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Sept 2018, 08:12 AM
Updated : 23 Sept 2018, 03:58 PM

রোববার স্থানীয় সময় সকাল ৮টা থেকে দেশটির সবগুলো কেন্দ্রে একযোগে ভোট গ্রহণ শুরু হয় বলে জানিয়েছে বিবিসি।

বিকাল ৪টায় ভোট শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ভোটকেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের লম্বা লাইন থাকায় ভোট গ্রহণের সময় তিন ঘণ্টা বাড়ানো হয় বলে জানান কর্মকর্তারা।

মালদ্বীপ স্বচ্ছ পানি ও নজরকাড়া অবকাশ কেন্দ্রের জন্য পরিচিত হলেও সম্প্রতি বিরোধী মতের দমনে দেশটির সরকারের নানা পদক্ষেপ নিয়ে সমালোচনা চলছে।

ভোটের আগের রাতে মালদ্বীপের পুলিশ বিরোধী দলগুলোর সদরদপ্তরগুলোতে হানা দিয়েছিলে বলেও জানিয়েছে স্থানীয় গণমাধ্যম।

যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন দক্ষিণ এশীয় এ দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে। গণতান্ত্রিক পরিস্থিতির উন্নয়ন না ঘটলে মালদ্বীপের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ারও হুমকি দিয়ে রেখেছে তারা।

মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটির নির্বাচনের দিকে কড়া নজর রাখছে এশিয়ার দুই প্রভাবশালী দেশ ভারত ও চীন।

প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থীর মধ্যে বর্তমান প্রেসিডেন্ট আবদুল্লা ইয়ামিনের সঙ্গে বেইজিংয়ের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। বিরোধী প্রার্থী ইব্রাহিম মোহামেদ সোলিহ’র ঝোঁক ভারত ও পশ্চিমা শক্তিগুলোর দিকে।

রোববারের ভোটের পর গণনায় ‘বড় ধরনের জালিয়াতি’ হতে পারে বলে আশঙ্কার কথা জানিয়েছে বিরোধী জোট। ভোটারদের প্রত্যেকের ব্যালট পেপার যাচাইয়ে পর্যবেক্ষকদের সুযোগ না দেওয়ায় নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে ইয়ামিনের হয়ে কাজ করার অভিযোগও এনেছে তারা।

মানবাধিকার সংগঠনগুলোও ইয়ামিন সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করছে।

“সমালোচকদের আটক করে, গণমাধ্যমের মুখ বন্ধ রেখে ও বিরোধী প্রার্থীদের বাধা দিতে নির্বাচন কমিশনের অপব্যবহারের মাধ্যমে মালদ্বীপের কর্তৃপক্ষ ভোটের দিন প্রেসিডেন্ট ইয়ামিনের জয় নিশ্চিত করতে চায়,” বলেছেন মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিষয়ক সহযোগী পরিচালক প্যাট্রিসিয়া গসম্যান।

শনিবার মালদ্বীপের পুলিশ কোনো ধরনের পরোয়ানা ছাড়াই বিরোধীদল মালদিভিয়ান ডেমোক্রেটিক পার্টির মালের সদরদপ্তরে অভিযান চালায় বলে দলটি অভিযোগ করেছে। বিস্তারিত তথ্য না জানালেও ওই অভিযানের কথা স্বীকার করেছেন পুলিশের এক মুখপাত্রও।

দেশটির নির্বাচন কমিশনের মুখপাত্র ভোট জালিয়াতির সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিয়েছেন। বিরোধীদের ‘অভিযোগের কোনো বাস্তব ভিত্তি’ নেই জানিয়ে ভোট গণনার পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা হবে না বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশান রিপোর্টিং প্রজেক্টের সাংবাদিকরা দরপত্র আহ্বান ছাড়াই ২০১৪ ও ২০১৫ সালে ইয়ামিনের সরকার কয়েক ডজন দ্বীপ ডেভেলাপারদের কাছে ইজারা দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে। অন্তত ২৪টি চুক্তির ক্ষেত্রে ইয়ামিনের কার্যালয় সরাসরি হস্তক্ষেপ করেছে বলেও জানিয়েছে তারা।

এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ইয়ামিন। তার সৎ ভাই মামুন আবদুল গাইয়ুম টানা তিন দশক ধরে মালদ্বীপ শাসন করেছিলেন। ২০০৮ সালে দ্বীপপুঞ্জটিতে অনুষ্ঠিত প্রথম গণতান্ত্রিক ভোটে নাশিদ বিজয়ী হয়েছিলেন। ইয়ামিনের সমালোচক গাইয়ুমও এ বছরের জুন থেকে জেলে আছেন।

২৬টি প্রবালপ্রাচীর ও এক হাজার ১৯২টি দ্বীপের সমষ্টি মালদ্বীপের অর্থনীতিতে পর্যটনের গুরুত্ব অপরিসীম। দেশটির চার লাখেরও বেশি বাসিন্দার জীবনধারণ পর্যটনের আয়ের ওপরই নির্ভর করে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্য আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে থাকা দেশটি।