হেগভিত্তিক আইসিসির তিন বিচারকের প্যানেল বৃহস্পতিবার এই সিদ্ধান্ত দিয়েছে বলে রয়টার্স জানায়।
এই আদেশের ফলে মিয়ানমারকে আন্তর্জাতিক এই আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে আইসিসির কৌঁসুলি ফাতোও বেনসুদার মামলা করার পথ খুলল; যদিও এখনও আনুষ্ঠানিক কোনো মামলা তিনি করেননি।
লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে যেভাবে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে বিতাড়িত করা হয়েছে, তার বিচার করার এখতিয়ার আইসিসির রয়েছে কি না, তা জানতে চেয়ে ফাতোও বেনসুদা গত এপ্রিলে আবেদন করেছিলেন।
মিয়ানমার আইসিসির সদস্য না হলেও এই বিষয়ে তাদের বক্তব্য জানাতে ২৭ জুলাই পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল।
মিয়ানমার এর কোনো আনুষ্ঠানিক জবাব না দিলেও তাদের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চির দপ্তর থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, বেনসুদার আবেদন সারবত্তাহীন এবং তা খারিজ করে দেওয়া উচিৎ।
বিচারদের সিদ্ধান্ত উদ্ধৃত করে রয়টার্স বলেছে, মিয়ানমার আইসিসির সদস্য না হলেও বাংলাদেশ সদস্য এবং আন্তঃসীমান্তে সংঘটিত এই অপরাধের প্রকৃতি বিচারযোগ্য।
তিন বিচারকের প্যানেলের লিখিত আদেশে বলা হয়েছে, “রোহিঙ্গাদের বিতাড়নের মধ্য দিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের যে অভিযোগ উঠেছে, তার বিচারের এখতিয়ার এই আদালতের রয়েছে।
“কেননা এই ঘটনায় সংঘটিত অপরাধ সীমান্ত পেরিয়ে সদস্য দেশ বাংলাদেশে বিস্তৃত হয়েছে।”
১১ লাখ শরণার্থীর ভার বহনকারী বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে মিয়ানমারকে বাধ্য করার জন্য দেশটির উপর এই ধরনের চাপ বাড়ার প্রত্যাশা করছিল। আইসিসি গত মে মাসে বাংলাদেশকেও চিঠি দিলে সরকারের পক্ষ থেকে মতামত জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
আইসিসির সিদ্ধান্তের বিষয়ে মিয়ানমারের আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
রয়টার্সের পক্ষ থেকে মিয়ানমার সরকারের মুখপাত্র জাও তাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি সংক্ষিপ্ত মেসেজ পাঠিয়ে বলেন, “আমি এখন কোনো কথা বলতে পারছি না।”
গত বছরের অগাস্টে মিয়ানমারের রাখাইনে সেনা অভিযান শুরুর পর লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশ সীমান্তে ছুটতে থাকে। নিপীড়িত এই জনগোষ্ঠীর সদস্যদের মুখে উঠে আসে ধর্ষণ, হত্যা, অগ্নিসংযোগের কথা।
জাতিসংঘ শুরু থেকে একে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ হিসেবে বর্ণনা করে আসছে। এক মাস আগে জাতিসংঘের একটি স্বাধীন তথ্যানুসন্ধান মিশন তাদের প্রতিবেদনে বলে, মিয়ানমার সেনাবাহিনী মুসলিম রোহিঙ্গাদের উপর গণহত্যা ও গণধর্ষণের মতো অপরাধ ঘটিয়েছে। এজন্য মিয়ানমারের সেনাপ্রধান ও পাঁচজন জেনারেলের বিচারের মুখোমুখি করা উচিৎ।
রোহিঙ্গারা রাখাইনে তাদের গ্রামে গ্রামে নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ, জ্বালাও-পোড়াওয়ের ভয়াবহ বিবরণ দিলেও মিয়ানমার বরাবরই সেসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
তবে রোহিঙ্গা নিপীড়ন নিয়ে গত এক বছর ধরে বিশ্বজুড়ে মিয়ানমারের নিন্দার ঝড় বইছে। সমালোচনার সম্মুখীন দেশটির নোবেলজয়ী নেত্রী সু চিও।
এই সংক্রান্ত খবর