কেরালায় উদ্ধার ২২ হাজার, কমছে বৃষ্টি

ভারতের বন্যাকবলিত রাজ্য কেরালা থেকে প্রায় ২২ হাজার বন্যার্তকে উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 August 2018, 04:03 AM
Updated : 20 August 2018, 05:34 AM

বর্ষাকালীন বৃষ্টিপাত কমে আসায় রোববার উদ্ধারকাজের গতি বৃদ্ধি পায় বলে জানিয়েছেন তারা, খবর বিবিসির।

সামরিক বাহিনীর টিমগুলোর পাশাপাশি দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনী ও স্থানীয় জেলেরা বন্যার কারণে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকটি এলাকায় পৌঁছতে সক্ষম হয়েছেন।

দুই সপ্তাহের টানা বৃষ্টির কারণে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া এলাকাগুলোতে হেলিকপ্টারের সাহায্যে অতি দরকারি উপদানগুলো সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে।

জুনে বর্ষাকাল শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা সাড়ে তিনশ ছাড়িয়ে গেছে, শুধু ৮ অগাস্ট থেকে ১৯ অগাস্টের মধ্যেই অন্তত ১৬৪ জন মারা গেছেন বলে খবর এনডিটিভির। এদের অধিকাংশই ভূমিধসে নিহত হয়েছেন।

৫ হাজার ৬৪৫টি ত্রাণশিবিরে আশ্রয় নেওয়া লোকের সংখ্যা বর্তমানে ৭,২৫,০০০ জনে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। তারপরও রোববার ‘বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া শেষ ব্যক্তিকে পর্যন্ত’ উদ্ধারের প্রত্যয় জানিয়েছেন তিনি।

এদিকে রাজ্যটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা দলের প্রধান অনিল বাসুদেভান জানিয়েছেন, অস্থায়ী ত্রাণশিবিরগুলোতে বায়ু ও পানিবাহিত রোগের সম্ভাব্য প্রাদুর্ভাব মোকাবিলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি।

কর্তৃপক্ষগুলো ইতোমধ্যেই আলুভার একটি ত্রাণশিবির থেকে জলবসন্তে আক্রান্ত তিন ব্যক্তিকে সরিয়ে নিয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

উদ্ধারকারী কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রোববার উদ্ধারের সব উদ্যোগ মূলত চেনগান্নুর শহর, আলাপুঝা ও এর্নাকুলাম জেলাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হচ্ছিল। চেনগান্নুরে প্রায় পাঁচ হাজার লোক আটকা পড়েছেন এমন খবর পাওয়ার কথা জানিয়েছেন তারা।

এর আগে টেলিভিশনে চেনগান্নুরের সংকটের কথা বর্ণনা করতে গিয়ে স্থানীয় রাজনীতিক সাজি চেরিয়ান কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন।

“অনুগ্রহ করে আমাদের একটি হেলিকপ্টার দিন। আমি আপনাদের কাছে ভিক্ষা চাইছি। প্লিজ আমাকে সাহায্য করুন, আমার এলাকার লোকগুলো মরে যাবে।

“প্লিজ আমাদের সাহায্য করুন। অন্য আর কোনো উপায় নাই, লোকজনকে হেলিকপ্টারে করেই সরাতে হবে,” বলেছেন তিনি।

বৃষ্টি কমে আসার পর স্থানীয় কিছু বাসিন্দা বাড়ির কী অবস্থা দেখার জন্য এলাকায় গিয়েছিলেন।

“পুরো বাড়ি কাদায় ঢেকে গেছে। এটি বাসযোগ্য করতে কয়েকদিন ধরে পরিষ্কার করতে হবে,” বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন কেরালার বাণিজ্যিক রাজধানী কোচিনের চেরানেল্লুর এলাকার বাসিন্দা ৬০ বছর বয়সী টিপি জনি।

ত্রাণশিবিরে আশ্রয় নেওয়া লোকজন খাবার ও পানি ছাড়া দিন কাটানোর বর্ণনা দিয়েছেন।

“আমাদের জীবনের সবচেয়ে আতঙ্কজনক সময় ছিল সেগুলো। বিদ্যুৎ নাই, কোনো খাবার নাই, কোনো পানিও নাই- যদিও আমাদের চারদিকেই পানি ছিল,” আরেকটি আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থাকে বলেছেন ত্রিসুর জেলার একটি গির্জার ত্রাণশিবিরে আশ্রয় নেওয়া ২০ বছর বয়সী ইন্দ্রজিৎ কুমার।

শনিবার হেলিকপ্টারে করে রাজ্যটির বন্যাপরিস্থিতি প্রত্যক্ষ করে অতি দ্রুত রাজ্যটির জন্য পাঁচশ কোটি রুপি বরাদ্দ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। 

প্রাথমিক হিসাবে কেরালার বন্যায় ২৩০ কোটি ব্রিটিশ পাউন্ডের সমমূল্যের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা একটি আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থার, তবে সংখ্যাটি আরও বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।