লাখো জনতার শোক মিছিলে বাজপেয়ীর শেষযাত্রা

যমুনা নদীর তীরে ‘স্মৃতিস্থলে’ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় ভারতের প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ অটল বিহারি বাজপেয়ীর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে। তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে দেশি-বিদেশি অনেক নেতা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 August 2018, 01:25 PM
Updated : 17 August 2018, 01:35 PM

শুক্রবার বিকালে অন্তিমযাত্রায় লাখো মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছেন তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বাজপেয়ী।

প্রিয় নেতাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে এদিন রাজধানী দিল্লির সড়কগুলো যেন জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছিল। তারা বাজপেয়ীর নামে নানা স্লোগান দিচ্ছিলেন।

এদিন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, প্রেসিডেন্ট রামনাথ কোবিন্দ, সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখোপাধ্যায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং, লোকসভার স্পিকার সুমিত্রা মহাজন, কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী, ভারতের সেনাবাহিনীর তিন শাখার প্রধানসহ আরও অনেক মন্ত্রী ও নেতা বাজপেয়ীকে শ্রদ্ধা জানান।

দীর্ঘদিনের অসুস্থতার পর বৃহস্পতিবার বিকালে নয়াদিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেস (এআইআইএমএস) হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ৯৩ বছর বয়সী এই নেতা।

প্রয়াত নেতা অটল বিহারি বাজপেয়ীকে শেষ শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: রয়টার্স

কিডনি, মূত্রনালি ও ফুসফুসের সংক্রমণ নিয়ে গত ১১ জুন তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

মঙ্গলবার অবস্থার অবনতি হলে তাকে হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণ বিভাগে নেওয়া হয়। সেখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

হাসপাতাল থেকে বাজপেয়ীর মৃতদেহ কৃষ্ণা মেনন সড়কে তার বাংলোতে নিয়ে যাওয়া হয়।

সেখান থেকে সকালে তার ফুলে ঢাকা কফিন বিজেপি কার্যালয়ে নেওয়া হয়।

১৯৮০ সালে তৎকালীন ভারতের রাজনীতিতে নতুন দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) প্রতিষ্ঠায় বাজপেয়ী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন।

শুক্রবার যমুনা নদীর তীরে ‘স্মৃতিস্থলে’ দাহ করা হয়। বাজপেয়ীর পালিত কন্যা নমিতা ভট্টাচার্য ‘মুখাগ্নি’ করেন। এ সময় আকাশে ২১ বার গুলি ছুড়ে তাকে শ্রদ্ধা জানানো হয়।

পিটিআই জানায়, এদিন বিদেশি নেতাদের মধ্যে ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিয়াল ওয়াংচুক, আফগানিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্রমন্ত্রী লক্ষণ কিরিয়েল্লা শেষ শ্রদ্ধা জানান।

অটল বিহারি বাজপেয়ীকে শেষ শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। ছবি: রয়টার্স

শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত বাজপেয়ীর মৃতদেহ বিজেপি কার্যালয়েই ছিল। সেখানে সর্বস্তরের মানুষ প্রিয় নেতাকে শ্রদ্ধা জানান।

বিকালে সেনাবাহিনীর একটি গাড়িতে করে বাজপেয়ীর মৃতদেহ যমুনা নদীর তীরে নিয়ে যাওয়া হয়।

কাঁচের তৈরি কফিনে চিরনিদ্রায় শায়িত নেতাকে শেষবার দেখতে হাজার হাজার মানুষ সড়কের দুইপাশে ভিড় করে।

অনেকে মিছিল করে গাড়ির পেছন পেছন যান। প্রধানমন্ত্রী মোদী, বিজেপি প্রেসিডেন্ট অমিত শাহ এবং আরও অনেক মন্ত্রী পুরো চার কিলোমিটার রাস্তা হেঁটে যান বলে জানায় এনডিটিভি।

ভিড় থেকে দূরে রাখতে নিরাপত্তারক্ষী ও পুলিশ চক্রাকারে তাদের ঘিরে রেখেছিলেন।

প্রবীণ এ নেতার মৃত্যুতে ভারতজুড়ে সাত দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে।

শোক জানাতে শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গসহ দেশটির অনেক রাজ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়।

নব্বইয়ের দশকে তিনবার ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা বাজপেয়ী স্বাস্থ্যগত কারণে কয়েক বছর আগে রাজনীতি থেকে অবসর নিয়েছিলেন।

তিনি প্রথমে ১৯৯৬ সালে মাত্র ১৩ দিনের জন্য, এরপর ১৯৯৮ সালে ১৩ মাস ও পরে ১৯৯৯ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত টানা প্রায় ছয় বছর ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা লাভের পর বাজপেয়ী ছিলেন ন্যাশনাল কংগ্রেস পার্টির বাইরে প্রথম প্রধানমন্ত্রী যিনি পুরো মেয়াদ দায়িত্ব পালন করেন।

২০১৪ সালে মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর বাজপেয়ীকে ভারতরত্ন দেওয়া হয়।

তুখোড় সাংবাদিক, কবি, বাগ্মী বাজপেয়ী দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের ব্যস্ততার মধ্যেও অবসর পেলেই কাব্যচর্চা করতেন।

একসময় তিনি যোগ দেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘে। ১৯৭৭ সালে জনতা পার্টি সরকারে মন্ত্রী হন তিনি। কিন্তু পরে সঙ্ঘপন্থি অন্য নেতাদের সঙ্গে বাজপেয়ীও জনতা পার্টি ছেড়ে গড়ে তোলেন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)।

১৯৮০ সালে দলটির প্রথম সভাপতিও হন তিনি। এর ১৬ বছর পর বাজপেয়ী প্রথমবার দেশের প্রধানমন্ত্রী হন।

২০০৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএর হারের দায় কাঁধে নিয়ে প্রধান বিরোধী দলনেতার পদ আর নেননি বাজপেয়ী।

এরপরই ধীরে ধীরে সক্রিয় রাজনীতি থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নেন তিনি।

পরে স্বাস্থ্যর অবনতি হতে থাকলে গত কয়েক বছর ধরে নিজেকে বাসভবনের ভেতরই অন্তরীণ করে রাখেন বর্ষীয়ান এ নেতা।