কোচিমুখী ফ্লাইটগুলোকে অন্য বিমানবন্দরে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ভারী বর্ষণ ও বন্যায় কেরালার ট্রেন যোগাযোগ ব্যবস্থাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে; অনেক ট্রেন দেরিতে যাতায়াত করছে, অনেকগুলোর যাত্রা বাতিল হয়েছে বলেও জানিয়েছে এনডিটিভি।
চলতি মাসের ৮ তারিখ থেকে শুরু হওয়া টানা বৃষ্টিপাতে অতিরিক্ত পানি বাঁধের ওপর চাপ ফেলায় কর্তৃপক্ষ জলাধারগুলো খুলে দিতে বাধ্য হওয়ায় অনেক এলাকায় বন্যা ও ভূমিধস দেখা দিয়েছে।
ভারতের দক্ষিণের রাজ্যটিতে হওয়া ব্যাপক এ বর্ষণে অন্তত ৪২ জনের মৃত্যু হয়েছে বলেও জানিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম। কেরালার এবারের বর্ষাকালটি প্রায় এক শতকের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক বর্ষণের সাক্ষী হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বৃষ্টি বুধবার নাগাদ বন্ধ হয়ে যাবে বলে অনেকে আশা প্রকাশ করলেও এটি শনিবার পর্যন্ত চলতে পারে বলে পূর্বাভাসে জানিয়েছে আবহাওয়া কার্যালয়। কর্তৃপক্ষ বুধ ও বৃহস্পতিবার কেরালার বেশ কয়েকটি জেলায় রেড অ্যালার্টও জারি করেছে।
ফ্লাইট পরিচালনা অসম্ভব হয়ে পড়ায় বুধবার ভোরের দিকে কোচি বিমানবন্দরের কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে এক মুখপাত্র পানির মাত্রা বাড়তে থাকায় বিমানবন্দরটি শনিবার বেলা ২টা পর্যন্ত বন্ধ রাখা হচ্ছে বলে জানান।
“বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছি আমরা,” বলেছেন তিনি।
শুক্রবার সন্ধ্যায় ইডুক্কি জলাধারের দুটি বাঁধের ফটক খুলে দেওয়ার পরপরই বিমানবন্দরটি বন্ধ করে দেওয়ার এ সিদ্ধান্ত আসে বলে জানিয়েছে এনডিটিভি। এরপর স্থানীয় সময় রাত আড়াইটার দিকে জলাধারের পানি ১৪০ ফুটের মাত্রা অতিক্রম করায় মুল্লাপেরিয়ার বাঁধের ফটকও খুলে দেওয়া হয়।
এসব বাঁধের ফটক খুলে দেওয়ার পর থেকে ইডুক্কি জেলার পরিস্থিতির ওপর কড়া নজর রাখছে কর্তৃপক্ষ।
বাঁধগুলোর ফটক খুলে দেওয়ার আগে পেরিয়ার নদীর তীর থেকে হাজার হাজার বাসিন্দাকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
বৃষ্টি ও বন্যার কারণে হওয়া ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞের কারণে কেরালার সরকার চলতি মাসের ওনাম উৎসব বাতিল ঘোষণা করেছে। উৎসবের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য মুখ্যমুন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের সরকার যে ৩০ কোটি রুপি বরাদ্দ রেখেছিল, তা তার দুর্যোগ ত্রাণ তহবিলে স্থানান্তর করা হয়েছে।
মঙ্গলবার পর্যন্ত বন্যার পানিতে জলাবদ্ধ ইডুক্কুর মুন্নারের জনপ্রিয় পাহাড়ি এলাকাগুলো থেকে পর্যটকদের দূরে থাকারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সরকারি যানবাহন ছাড়া অন্য কোনো যানবাহনকে শহরটিতে প্রবেশে অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। বৃষ্টির কারণে পম্পা নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় লোকজনকে সাবারিমালার পাহাড়ি মন্দিরের দিকে যেতেও নিষেধ করা হয়েছে।
পানির মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় ইডুক্কুর অন্যতম ক্ষতিগ্রস্ত শহর চিরুথনিও নতুন করে বন্যার বিপদের মুখে আছে। পাথানামথিথার রান্নি শহরও প্লাবিত হয়ে গেছে।
ইডুক্কির পাশাপাশি কোঝিকোড, কান্নুর, অয়ানাদ ও মালাপ্পুরমের অনেক জেলাতেও বন্যা, ভূমিধস ও বেশিরভাগ নদীর পানি উপচে পড়ার খবর পাওয়া গেছে।
১৯২৪ সালের পর চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু হওয়া এবারের তীব্র বর্ষণেই কেরালায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। এরই মধ্যে ৬০ হাজারেরও বেশি মানুষকে আশ্রয় শিবিরে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে; সম্পদ ও ফসলের ক্ষয়ক্ষতি ৮ হাজার কোটি রুপি ছাড়িয়ে গেছে।