কারাগারে নওয়াজের সঙ্গে স্বজনদের সাক্ষাৎ

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ ও তার মেয়ে মরিয়মের সঙ্গে আদিয়ালা কারাগারে স্বজনরা দেখা করেছেন।

নিউজডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 July 2018, 12:29 PM
Updated : 15 July 2018, 12:29 PM

এজন্য সরকারের কাছ থেকে তাদের বিশেষ অনুমতি নিয়ে হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসনের উর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা।  

আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে সমর্থকদের উজ্জীবিত করতে দণ্ড মাথায় নিয়েই নওয়াজ ও মরিয়ম দেশে ফিরেছেন।

লন্ডন থেকে শুক্রবার রাতে লাহোরের আল্লামা ইকবাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পরপরই তাদের গ্রেপ্তার করা হয় এবং একটি বিশেষ উড়োজাহাজে করে ইসলামাবাদ নিয়ে যাওয়া হয়। 

পাকিস্তানের ইংরেজি ভাষার দৈনিক ডন জানায়, শনিবার রাতে নওয়াজের ভাই পাকিস্তান মুসলিম লিগের (নওয়াজ) প্রেসিডেন্ট শাহবাজ শরিফ, তাদের মা, মরিয়মের মেয়ে মেহরুন নিসা ও শাহবাজের ছেলে হামজা শাহবাজসহ আরও কয়েকজন নওয়াজ ও মরিয়মের সঙ্গে দেখা করতে কারাগারে যান।

নওয়াজের সঙ্গে দেখা করতে তারা একটি বিশেষ উড়োজাহাজে করে লাহোর থেকে ইসলামাবাদ আসেন।

আদিয়ালা কারা অধ্যক্ষের কক্ষে প্রায় দুই ঘণ্টা তারা কথা বলেন।

তবে এখন পর্যন্ত দলের কোনো নেতা বা কর্মী নওয়াজ ও মরিয়মের সঙ্গে দেখা করতে আসেননি বলে জানায় ডন।

আদিয়ালা কারা কর্তৃপক্ষ আগামী বৃহস্পতিবার দর্শণার্থীদের তাদের সঙ্গে দেখা করার দিন ধার্য করে দিয়েছেন।

নওয়াজের সঙ্গে দেখা করার কয়েক ঘণ্টা আগে এক সংবাদ সম্মেলনে শাহবাজ বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কারাদণ্ডের বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করতে পিএমএল-এন সম্ভাব্য সব ধরনের আইনী ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

২০১৫ সালে ফাঁস হওয়া পানামা পেপার্সে যুক্তরাজ্যে নওয়াজ শরিফের পরিবারের বিপুল সম্পদের বিষয়টি সামনে আসে।

সম্পদের বিবরণীতে ওই তথ্য গোপন করায় গতবছর জুলাই মাসে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে ওই পদে থাকার অযোগ্য ঘোষণা করলে তিনি পদত্যাগে বাধ্য হন।

আদালতের রায়ে দলীয় প্রধানের পদও ছাড়তে হয় নওয়াজকে। এরপর পিএমএল-এন এর নেতৃত্বে আসেন তার ভাই শাহবাজ শরিফ।

এ বছর এপ্রিলে সুপ্রিম কোর্ট নওয়াজ শরিফকে আজীবন রাষ্ট্রীয় পদে অযোগ্য ঘোষণা করলে তার ক্ষমতায় ফেরার পথ চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়।

লন্ডনে চারটি বিলাসবহুল বাড়ির মালিকানা নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে গত সপ্তাহে পাকিস্তানের একটি আদালত নওয়াজকে ১০ বছর ও তার মেয়ে মরিয়মকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেয়।

গত ৬ জুলাইয় ওই রায়ে কারাদণ্ডের পাশাপাশি নওয়াজকে ১ কোটি ৫০ লাখ পাউন্ড এবং মরিয়মকে ২০ লাখ পাউন্ড জরিমানাও করা হয়। সেই সঙ্গে নওয়াজ পরিবারের লন্ডনের সব সম্পত্তি জব্দের নির্দেশ দেয় আদালত।

অসুস্থ স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য গত কয়েক মাস ধরে লন্ডনে অবস্থান করছিলেন নওয়াজ ও তার মেয়ে মরিয়ম। তাদের অনুপস্থিতিতেই আদালত ওই রায় ঘোষণা করে।

মরিয়মের স্বামী সফদর আওয়ানকেও আদালত এক বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে। তিনিও এখন কারাগারে রয়েছেন।

কোনো ধরনের দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে আসা নওয়াজের পরিবার বলে আসছে, ২৫ জুলাই অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনে তাদের ঠেকাতেই সেনাবাহিনীর ইন্ধনে এই ‘ষড়যন্ত্র’ করা হয়েছে।

যদিও আজীবন অযোগ্য ঘোষিত হওয়ায় তিনবারের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।তারপরও দলের সমর্থকদের উজ্জীবিত করতে দণ্ড মাথায় নিয়ে তিনি দেশে ফিরেছেন।

গত বুধবার লন্ডনে এক জনসভায় নওয়াজ বলেছিলেন, “এক সময় আমরা প্রায়ই বলতাম রাষ্ট্রের ভেতর রাষ্ট্র, এখন এটা রাষ্ট্রের উপর রাষ্ট্র। যদিও আমি চোখের সামনে কারাগার দেখতে পাচ্ছি, তারপরও আমি পাকিস্তান যাচ্ছি।”