এবার তাদের ঈদ কাটবে ইয়াঙ্গুনের জেলে

ইয়াঙ্গুনের বাসিন্দা চো নুই সো গত মাসে যখন স্বামীর সঙ্গে আদালতে হাজির হয়েছিলেন, তিনি ভেবেছিলেন, বিনা অনুমতিতে রাস্তার ওপর নামাজের ব্যবস্থা করায় বড়জোর জরিমানা করা হবে তার স্বামীকে; আর রোজার আগেই তারা বাড়ি ফিরতে পারবেন।

>>রয়টার্স
Published : 18 May 2018, 04:42 PM
Updated : 18 May 2018, 04:42 PM

কিন্তু ৪১ বছর বয়সী অং সান লিনসহ মিয়ানমারের ছয় মুসলমানকে এবারের রোজা আর ঈদ কারাগারেই কাটাতে হবে। গতবছর বিনা অনুমতিতে রাস্তায় নামাজের ব্যবস্থা করার দায়ে আদালত তাদের তিন মাসের কারাদণ্ড দিয়েছে।

ইয়াঙ্গুনের পশ্চিমে থাকেতা এলাকায় গত এক যুগ ধরে একটি চায়ের দোকান চালিয়ে আসছিলেন চো নুই সো ও অং সান লিন। শহরের মুসলমানদের একটি বড় অংশ ওই এলাকাতেই থাকে।

চো নুই সো চোখ মুছতে মুছতে বলেন, “আমার তো পাগল হওয়ার দশা। কী করব সেটাই তো বুঝে উঠতে পারছি না।”

বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারে ছয়জনের ওই কারাদণ্ডের রায়ে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে মুসলমানদের মধ্যে। মানবাধিকার সংগঠনগুলোও সব নাগরিকের ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে মিয়ানমারের নোবেলজয়ী নেত্রী অং সান সু চির প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

রাখাইনে সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের মুখে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা মুসলমান পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ায় এমনিতেই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজর এখন মিয়ানমারের দিকে। মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, ইয়াঙ্গুনের ওই কারাদণ্ডের ঘটনা এটাই দেখিয়ে দিল যে, পুরো মিয়ানমারজুড়েই ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা নানাভাবে বৈষম্যের শিকার, মৌলিক অধিকার থেকেও বঞ্চিত। 

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া অঞ্চলের উপ পরিচালক ফিল রবার্টসন ওই রায়ের পর এক টুইটে লেখেন, “স্পষ্টতই এটা ধর্মীয় বৈষম্য এবং ধর্মীয় স্বাধীনতার ভয়ানক লঙ্ঘন।”

তবে এ বিষয়ে মিয়ানমার সরকারের মুখপত্র জ তাইয়ের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

বৌদ্ধ পরিবারের মেয়ে চো নুই সো ২৫ বছর আগে অং সান লিনকে বিয়ে করে মুসলমান হন। চায়ের দোকান চালাতে স্বামীকে সহযোগিতার পাশাপাশি সন্তানদের দেখভাল করতে হত তাকে। তার দুই সন্তানের মধ্যে মেয়েটি এখনও কোলের শিশু।

তাদের ওই ছোট্ট দোকানে ঢুকলেই দেয়ালে দেখা যায় আরবিতে কোরআনের আয়াত লেখা। অমসৃণ কাঠের মেঝের ওপর ডজনখানেক ক্ষয়ে যাওয়া টেবিল।

উগ্রপন্থি বৌদ্ধদের চাপের মুখে ইয়াঙ্গুন কর্তৃপক্ষ গতবছর মে মাসে স্থানীয় দুটো মাদ্রাসা বন্ধ করে দেয়, কারণ সেগুলো চালানো হচ্ছিল বিনা অনুমতিতে। এর মধ্যে একটি মাদ্রাসা ছিল চো নুই সোর দোকানের খুব কাছে। মাদ্রাসাটি বন্ধ থাকায় অনেক খদ্দের হারিয়েছেন তিনি।

বন্ধ হয়ে যাওয়া একটি মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক টিন শুইয়ের ছেলে সো মো ওকেও গত মাসে অং সান লিনের সঙ্গে জেলে যেতে হয়েছে।

৫৬ বছর বয়সী টিন শুই বলেন, “প্রার্থনা করা যদি অপরাধ হয় তাহলে তো পুরো মানবজাতিকেই কারাগারে ভরতে হয়।… মানুষ এখন একসঙ্গে নামাজ পড়তেও ভয় পায়।”

চো নুই সো আর অং সান লিন আগে প্রতি রোজায় একসঙ্গে দোকান চালাতেন। কিন্তু এবার তিনি দোকান বন্ধ রাখবেন বলে ঠিক করেছেন, কারণ সারা দিন একা একা দোকান সামলানো তার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না।

আগে রোজা শেষে ঈদের দিনে এই দম্পতির বাসায় ভালো রান্না হত, আত্মীয়রা আসত, তারাও বেড়াতে যেতেন অন্যদের বাসায়। এবার আর সেসব হচ্ছে না।

চো নুই সো জানান, ঈদের দিন সকালে তিনি কেবল সেমাই রান্না করবেন, তাই নিয়ে কারাগারে যাবেন স্বামীকে দেখতে।