ভারতে চলছে বিক্ষোভ, থামছে না শিশু ধর্ষণ ও হত্যা

কাঠুয়া শিশু ধর্ষণ ও হত্যার বিচারের দাবিতে ভারত জুড়ে বিক্ষোভের মধ্যেই ১১ বছরের আরেক শিশুকে আটদিন ধরে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা ঘটার খবর পাওয়া গেছে।

নিউজডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 April 2018, 03:50 PM
Updated : 15 April 2018, 06:17 PM

পুলিশের বরাত দিয়ে রোববার স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের খবর বলা হয়, গুজরাট প্রদেশের সুরাটে একটি ক্রিকেট মাঠের কাছে সড়কের পাশে গত ৬ এপ্রিল ভোর ছয়টার দিকে লোকজন একটি মেয়ের মৃতদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেয়।

পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শিশুটির মৃতদেহ উদ্ধার করে। মৃতদেহে ৮৬টি আঘাতের চিহ্ন ছিল। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে শিশুটিকে অন্তত আটদিন ধরে ধর্ষণ ও নিপীড়নের পর হত্যা করা হয়েছে বলে জানানো হয়।

সুরাটের পুলিশ কমিশনার সতিশ শর্মা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, “ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, শিশুটিকে ধর্ষণের পর গত ৫ এপ্রিল হত্যা করা হয়।”শিশুটির পরিচয় এখনও পাওয়া যায়নি বলে জানান তিনি।

সুরাট সিভিল হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান গনেশ গোওয়েকার বলেন, কাঠের তৈরি অস্ত্র দিয়ে বেশিরভাগ আঘাত করা হয়েছে। পরে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়।

“ময়নাতদন্তে আমরা মৃতদেহে সাত দিনের পুরনো আঘাতও দেখতে পেয়েছি। লাশে ৮৬টি আঘাতের চিহ্ন আছে।”

এর আগে গত ১০ জানুয়ারি ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের কাঠুয়া শহরের কাছে মুসলিম যাযাবর সম্প্রদায়ের আট বছরের মেয়ে আসিফা বানু নিখোঁজ হওয়ার ৭ দিন পর কাছের একটি জঙ্গলে তার মৃতদেহ খুঁজে পাওয়া যায়।

অসিফা ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ প্রথমে ১৯ বছরের এক তরুণকে গ্রেপ্তার করে। পরে তার জবানবন্দির ভিত্তিতে সাবেক এক সরকারি কর্মকর্তা এবং দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করে।

আদালতে দেওয়া পুলিশের অভিযোগপত্র অনুযায়ী, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আসিফা ধর্ষণ ও হত্যার প্রমাণ পাওয়া গেছে।

যদিও এ ঘটনায় পুলিশের দুই সদস্য ধর্ষণ ও হত্যার প্রমাণ লোপাট করতে শিশুটির পোশাক ধুয়ে ফেলেছে এবং মামলা রফা করতে পুলিশকে বড় অংকের ঘুষের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগপত্রে জানানো হয়।

এমনকি জম্মুর একটি আদালতে পুলিশ অভিযোগপত্র জমা দিতে গেলে একদল আইনজীবী তাদের বাধা দেয় বলে জানায় এনডিটিভি।

অভিযুক্তরা হিন্দু হওয়ার তাদের মুক্তির দাবিতে হিন্দু অধিকার রক্ষাকারী কয়েকটি সংগঠন সপ্তাহখানেক আগে বিক্ষোভ শুরু করলে ঘটনাটি আবারো সংবাদের শিরোনাম হয়।

তাদের মুক্তির দাবিতে করা বিক্ষোভ মিছিলে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি’র দুই মন্ত্রী অংশ নেওয়ায় দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠে।

আসিফা ধর্ষণ ও হত্যার বিচারের দাবিতে রাজধানী দিল্লিতে প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে, যেখানে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস পার্টির সভাপতি রাহুল গান্ধী, তার মা সোনিয়া গান্ধী এবং বোন প্রিয়াংকা ভদ্র গান্ধী অংশ নেন।

জাতিসংঘসহ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থা এ ঘটনার নিন্দা জানায়। দেশজুড়ে বিক্ষোভের মুখে বিজেপির ওই দুই মন্ত্রী পদত্যাগ করেন।

এ ধরণের নৃশংস ঘটনা কোনো সভ্য সমাজে ঘটতে পারে না উল্লেখ করে ভারতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দোষীদের শাস্তি দেওয়ার প্রতিজ্ঞা করে বলেন, “আমাদের মেয়েরা অবশ্যই বিচার পাবে।”

সরকারি তথ্যানুযায়ী, ভারতে ২০১৬ সালে ৪০ হাজারের বেশি ধর্ষণ মামলা হয়েছে। ২০১২ সালে যে সংখ্যা ছিল ২৫ হাজার। সে বছর ডিসেম্বরে ‘নির্ভয়া’ ধর্ষণ ও হত্যার পর বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ দেশের সীমানা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। বিচারে ওই মামলায় দোষীদের মৃত্যুদণ্ড হয়।

ধর্ষণের প্রকৃত সংখ্যা সরকারি হিসাবের তুলনায় অনেক বেশি বলে দাবি সমাজকর্মীদের।