রোহিঙ্গাদের ফেরার পরিবেশ মিয়ানমারে নেই: জাতিসংঘ

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসনের পরিবেশ মিয়ানমারে এখনও তৈরি হয়নি বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক উপ মহাসচিব উরসুলা মুলার।

>>রয়টার্স
Published : 8 April 2018, 02:10 PM
Updated : 8 April 2018, 02:17 PM

ছয় দিনের সফরে ১ এপ্রিল মিয়ানমার যান মুলার।

ইয়াংগুনে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মুলার বলেন, “আমি যা দেখেছি এবং লোকজনের কাছে ‍যা শুনেছি তাতে সেখানে (রোহিঙ্গাদের) স্বাস্থ্য সেবা পাওয়ার সুযোগ নেই, তাদের সুরক্ষা নিয়েও উদ্বেগ আছে, এখনও তারা গৃহহীন হচ্ছে.. সেখানকার পরিস্থিতি কোনোভাবেই ফেরার উপযোগী নয়।”

রাখাইনে সেনাঅভিযান শুর হওয়া পর সেখানে প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।

এর মধ্যেই মুলার রাখাইনের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো পরিদর্শনের অনুমতি পান। তিনি মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি এবং কয়েকজন মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন।

ইয়াংগুন থেকে রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মুলার বলেন, “আমি (মিয়ানমারের কর্মকর্তাদের) রাখাইনে নৃশংসতার অবসান ঘটিয়ে পরিস্থিতি স্থিতিশীল হওয়ার পর বাংলাদেশের কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া শরণার্থীদের ফেরত আনার আহ্বান জানিয়েছি।”

মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতি রোহিঙ্গাদের ফেরার উপযুক্ত কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমি পরিস্থিতি নিয়ে সত্যিই উদ্বিগ্ন।

“আমি পুড়িয়ে দেওয়া ও বুলডোজার দিয়ে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া গ্রামগুলো দেখেছি। শরণার্থীদের নিজ নিজ বাড়িতে ফেরানোর কোনো ধরনের প্রস্তুতি আমি সেখানে দেখিনি বা শুনিনি।”

এ বিষয়ে কথা বলতে মিয়ানমার সরকারের মুখপাত্রের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি।

মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের মুখে গত বছরের অগাস্টে বাংলাদেশ সীমান্তে রোহিঙ্গাদের ঢল নামে। কয়েক মাসেই এই সংখ্যা ছয় লাখ ছাড়িয়ে যায়। বাংলাদেশে আগে থেকে আশ্রয় নিয়ে ছিল আরও চার লাখ রোহিঙ্গা।

রেহিঙ্গাদের নাগরিক হিসেবে মানতে নারাজ হলেও সর্বশেষ ঘটনার পর আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে মিয়ানমার তার দেশের এই মুসলিম বাসিন্দাদের ফেরত নিতে রাজি হয়। চার মাস আগে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে একটি সম্মতিপত্র সই হলেও এরপর তার অগ্রগতি নেই।

ওই সম্মতিপত্রের ভিত্তিতে দুই দেশ গত ১৯ ডিসেম্বর যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করে। রোহিঙ্গাদের পরিচয় যাচাইয়ের জন্য একটি ফর্মও চূড়ান্ত করা হয় জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে।

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রথম যে ৮ হাজারের তালিকা দেওয়া হয়েছিল, তার মধ্যে মাত্র ৫০০ জনের পরিচয় যাচাই করে নিশ্চিত হওয়ার কথা জানিয়েছে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ।

এই প্রক্রিয়ায় দেরি দেখে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুক্রবারই জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে টেলি আলাপে মিয়ানমারের সঙ্গে চুক্তি বাস্তবায়নে সহযোগিতা চান।

মিয়ানমারের গড়িমসির অভিযোগের প্রেক্ষাপটে শুক্রবার রেডিও ফ্রি এশিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে দেশটির সমাজকল্যাণ এবং ত্রাণ ও পুনর্বাসনমন্ত্রী উইন মিয়াত আয়ে ফেরত নেওয়ার আগে রোহিঙ্গাদের পরিচয় যাচাইয়ের আরও সময় নেওয়ার কথা বললেন।

তিনি বলেন, “শরণার্থীদের পূরণ করা ফর্ম চুক্তির আলোকে না হওয়ায় জটিলতা তৈরি হয়েছে।

“যদি প্রক্রিয়াটি চুক্তি অনুসরণে চলে, যদি ফর্মটি চুক্তির আলোকে পূরণ হয়, তবে তো দেরি হওয়ার কথা নয়। কিন্তু এটা সেই পথে হচ্ছে না, যা আমরা প্রত্যাশা করছি। যদি শরণার্থীরা চুক্তি অনুযায়ী ফর্মটি পূর্ণ করে, তবে প্রক্রিয়াটি আরও দ্রুততর হতে পারে।”