সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতী, বৃদ্ধ-বৃদ্ধাসহ গ্রামটির সবাই হাতের কাজ রেখে সোজ হয়ে দাঁড়িয়ে যান; প্রতিদিনি তারা কেন দাঁড়িয়ে থাকেন তা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়া (পিটিআই) এক প্রতিবেদনে তুলে ধরেছে বলে জানিয়েছে এনডিটিভি।
ওই সময় নদীয়া জেলার অভয়নগর গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভারতের জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হয়, আর তা মাইকে বাজানো হয়।
৫২ সেকেন্ড ধরে চলা জাতীয় সঙ্গীতের সময় ওই গ্রামের সবাই যার যার জায়গায় দাঁড়িয়ে জাতীয় সঙ্গীতের প্রতি সম্মান দেখান। এটাই রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ সময় যারা বাড়িতে থাকেন তারাসহ যারা মোটরসাইকেলে, অটোরিক্সায়, সাইকেলে বা পায়ে হেঁটে চলেন, তারা সবাই যে যেখানে থাকেন থেমে পড়ে দাঁড়িয়ে যান।
অভয়নগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সফিকুল ইসলাম বলেন, “আমরা মনে করি এভাবে শিক্ষার্থী ও লোকজনের মধ্যে আস্তে আস্তে দেশপ্রেম তৈরি হবে। আমরা গ্রামবাসীদের অনুরোধ করেছি, তারা যেখানেই থাকুন, স্কুলে থাকা তাদের শিশুদের সঙ্গে যেন তারা জাতীয় সঙ্গীত গায়। তারা রাজি হয়েছেন এবং এই চর্চা এগিয়ে চলছে।”
তিনি জানান, স্কুল ভবন থেকে প্রায় ১০০ ফুট দূরে একটি মাইক লাগানো হয়েছে এবং যারা জাতীয় সঙ্গীত শুনেন তারা এর সঙ্গে গলা মিলিয়ে কোরাসে যোগ দেন।
৫০ বছর বয়সী কৃষক মাইজুদ্দিন বিশ্বাস পিটিআইকে বলেছেন, “বুধবার আমি ও আরো দুই জন স্কুলের পাশ দিয়ে ফসল নিয়ে যাচ্ছিলাম। ওই সময় মাইকে জাতীয় সঙ্গীত শুনতে পাই। আমরা হাঁটা থামিয়ে সঙ্গে গাওয়া শুরু করি। এটা ভাল লাগে।”
স্কুল থেকে দুই কন্যাকে নিয়ে সঙ্গে সঙ্গেই বাড়ি ফিরে আসতেন ২৬ বছর বয়সী চম্পা বিবি। কিন্তু তার কন্যারা তাকে বলেন তাদের সঙ্গে জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে তারপর বাড়ি ফিরতে, এখন তিনি তাই করেন বলে জানিয়েছেন।
“স্কুলের এই কাজটি খুব ভালো হয়েছে,” বলেন তিনি।
স্কুলের দুপুরের খাবার রান্নার কাজ করেন নাসরিন বিবি। তিনি জানান, যখন জাতীয় সঙ্গীত শুরু হয়, রান্নাঘরে দাঁড়িয়েই তিনি তা গান।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক জানান, তাদের স্কুলের দুটি মাইক ও দুটি সাউন্ড বক্স আছে, আপাতত এগুলো দিয়েই কাজ চালাচ্ছেন। তবে আরো কয়েকটি মাইক যোগাড় করার পরিকল্পনা আছে তার, সেগুলোর জন্য তহবিল সংগ্রহ করার চেষ্টা করছেন।
তিনি বলেন, “আমরা এগুলো দিয়ে যেকোনো ঘোষণা দিতে পারি এবং এগুলোর মাধ্যমে অভিভাবকদের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগও করতে পারছি।”
স্কুলটিতে ১১৫ জন শিক্ষার্থী আছে এবং তাদের অধিকাংশই অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের সন্তান, তারপরও স্কুলটি সরকারি কয়েকটি পুরস্কার জিতেছে বলে জানান তিনি।
স্থানীয় তেহাট্টা দুই পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য আব্দুল মান্নান শেখ বলেন, “এই এলাকাটির লোকজন মূলত অক্ষরজ্ঞানহীন। যদি স্থানীয়রা স্কুলের আবেদনে সাড়া দেয়, তাহলে তো খুব ভাল কথা। দেশপ্রেম জাগিয়ে তোলার এটি একটি ভাল পদ্ধতি।”