রোহিঙ্গা নিধনের আলামত নষ্টে বুলডোজার চালানো হয়নি: মিয়ানমার

ধ্বংসযজ্ঞের প্রমাণ মুছে ফেলার জন্য নয় বরং শরণার্থীদের পুনর্বাসন কাজ সহজ করতেই রাখাইনের রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিধ্বস্ত গ্রামগুলোতে বুলডোজার চালানো হয়েছে বলে দাবি করেছে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Feb 2018, 04:14 PM
Updated : 26 Feb 2018, 04:14 PM

গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) এর এক প্রতিবেদনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দমনাভিযানে জনশূন্য হয়ে পড়া রোহিঙ্গা গ্রামগুলো বুলডোজার দিয়ে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়।

নতুন স্যাটেলাইট ছবি বিশ্লেষণ করে মানবাধিকার সংস্থাটি বলছে, গতবছরের শেষ দিক থেকে রাখাইনের উত্তর অংশের অন্তত ৫৫টি রোহিঙ্গা গ্রামের সব স্থাপনা ও ক্ষেত-খামার ভারী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে সমান করে ফেলা হয়েছে।

এইচআরডব্লিউ’র আশঙ্কা, এর মধ্য দিয়ে ওই অঞ্চলে সেনাবাহিনীর চালানো ধ্বংসযজ্ঞের প্রমাণ মুছে ফেলার ব্যবস্থা করেছে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ।

দেশে ফেরত যাওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পুনর্বাসনের কাজ দেখভাল করতে গত বছর অক্টোবরে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি অর্থনীতিবিদ অং তুন থেটের নেতৃত্বে ‘ইউনিয়ন এন্টারপ্রাইজ ফর ‍হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাসিসটেন্স, রিসেটেলমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’ (ইউইএইচআরডি) বডি গঠন করেন।

অং তুন সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, সরকারকে সহজেই শরণার্থীদের তাদের আগের বাড়ি-ঘরের যত কাছে সম্ভব পুনর্বাসনে সহায়তা করতে গ্রামগুলোতে বুলডোজার চালানো হয়েছে।

“তথা-কথিত প্রমাণ নষ্ট করার কোনো ইচ্ছাই আমাদের নেই। যেসব মানুষ ফিরে আসবে তাদের বাড়ি যাতে সহজেই নির্মাণ করা সম্ভব হয় আমরা শুধু সেটিই নিশ্চিত করতে চাইছি।”

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে গত বছর নভেম্বরে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার একটি চুক্তি সই করেছে।

ওই চুক্তির অধীনে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সুষ্ঠু, সম্মানজনক ও নিরাপদ করতে মিয়ানমার সরকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে বলেও জানান অং তুন।

রাখাইনের ৩০টি পুলিশ পোস্ট ও একটি সেনা ক্যাম্পে সমন্বিত হামলার পর ২৫ অগাস্ট থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর রোহিঙ্গা দমন অভিযান শুরু হয়, যাকে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্র।

অন্যদিকে, মিয়ানমার সরকার ওই হামলার জন্য রোহিঙ্গা গেরিলাদের একটি দলকে দায়ী করে আসছে। সেনাবাহিনীর অভিযানকে তারা বলছে ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই’।

সেনা অভিযান শুরুর পর থেকে গত ছয় মাসে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে সীমান্ত পেরিয়ে আশ্রয় নিয়েছে প্রতিবেশী বাংলাদেশে। গ্রামে গ্রামে হত্যা, ধর্ষণ, জ্বালাও-পোড়াওয়ের ভয়াবহ বিবরণ পাওয়া যাচ্ছে তাদের ভাষ্যে।

রোহিঙ্গা নিপীড়নে দায়ী মিয়ানমারের সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রস্তুতি নিতে সোমবার একমত হয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নভূক্ত (ইইউ) দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা।

মন্ত্রীদের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে ‘পরিকল্পিতভাবে মানবাধিকারের গুরুতর লঙ্ঘনের অভিযোগে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের’ আহ্বান জানানো হয়েছে।

এর আগে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা রোহিঙ্গা নিপীড়নে জড়িত মিয়ানমারের সেনা কর্মকর্তাদের ওপর একই ধরনের নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিয়েছে।

পশ্চিমা সরকারগুলোর চাপ এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলোর দাবি উপেক্ষা করেই নোবেল বিজয়ী অং সান সু চির সরকার রাখাইনে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন পরিচালনার পথ বন্ধ করে রেখেছে।

জেনেভায় হিউম্যান রাইটস কাউন্সিলে সোমবার এক ভাষণে জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস আবারও মিয়ানমার সরকারের প্রতি রাখাইন রাজ্যে ত্রাণ নিয়ে অবাধ প্রবেশ নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।

তিনি বলেন,“রোহিঙ্গা জনগণের জরুরি ভিত্তিতে জীবনরক্ষাকারী ত্রাণ, সংকটের দীর্ঘ মেয়াদী সমাধান এবং ন্যায়বিচার দারুণভাবে প্রয়োজন।”