
মিয়ানমার সেনাদের হাতে নিহত ওই ১০ রোহিঙ্গা ছিল ‘নিরাপরাধ’
নিউজ ডেস্ক, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published: 14 Jan 2018 01:39 AM BdST Updated: 11 Apr 2018 01:18 AM BdST
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযানে যে ১০ রোহিঙ্গাকে হত্যার স্বীকারোক্তি এসেছে তারা ‘নিরাপরাধ বেসামরিক’ ছিলেন বলে জানিয়েছে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা)।
শনিবার তাদের এক টুইটে বলা হয়েছে, “ইন দিন গ্রামের একটি গণকবরে যে দশ নিষ্পাপ রোহিঙ্গা সিভিলিয়ানের মৃতদেহ পাওয়া গেছে তারা আরসা সদস্য ছিলেন না বা আরসার সঙ্গে তাদের কোনো সংশ্লিষ্টতাও ছিল না।”
গত ১৮ ডিসেম্বর রাখাইন রাজ্যের রাজধানী সিতভি থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার উত্তরে ঊপকূলীয় ওই গ্রামে গণকবরে ১০ জনের মৃতদেহ পাওয়ার কথা জানায় মিয়ানমার সেনাবাহিনী।
বুধবার দেশটির সেনাপ্রধানের ফেইসবুক অ্যাকাউন্টে এক বিবৃতিতে বলা হয়, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা ওই ১০ জনকে হত্যা করেছে বলে তদন্তে উঠে এসেছে এবং এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

স্যাটেলাইট চিত্রে রোহিঙ্গাদের পোড়া গ্রাম
অগাস্টের শেষ দিকে আরসা সদস্যদের হামলার জবাবে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর সেনাবাহিনীর দমন অভিযানে নির্বিচারে মানুষ হত্যার পাশাপাশি ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ও লুটতরাজের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের কথা জানায় নির্যাতিতরা। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছিল মিয়ানমার সেনাবাহিনী।
এই প্রেক্ষাপটে তাদের পক্ষ থেকে ১০ রোহিঙ্গাকে আটকের পর হত্যার স্বীকারোক্তিকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছিল।
আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মিও তাদের এই স্বীকারোক্তিকে স্বাগত জানিয়ে বলেছে, “বার্মিজ সন্ত্রাসী আর্মির যুদ্ধাপরাধের এই স্বীকারোক্তিকে আমরা আন্তরিকভাবে স্বাগত জানাচ্ছি।”
মিয়ানমার সেনাবাহিনী এই হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করলেও তাদের ‘বাঙালি সন্ত্রাসী হিসেবে’ বর্ণনা করেছিল।
তদন্ত প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে ওই ফেইসবুক পোস্টে বলা হয়, গত ১ সেপ্টেম্বর নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা ওই এলাকায় অভিযানে গেলে ‘২০০ বাঙালি সন্ত্রাসী লাঠি ও তরবারি নিয়ে হামলা চালায়’। এ সময় নিরাপত্তা বাহিনীর সদ্যরা ফাঁকা গুলি ছুড়লে অন্যরা পালিয়ে গেলেও ১০ জন ধরা পড়ে।
মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ
সেনাবাহিনী একথা বললেও তাদের সশস্ত্র বিদ্রোহে সংশ্লিষ্টতার কথা নাকচ করল রাখাইনে এই ধরনের তৎপরতায় নেতৃত্ব দেওয়া আরসা।
তাদের বিবৃতির বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে মিয়ানমার সরকারের মুখপাত্র জ তাই বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলার ক্ষেত্রে মাঝে মাঝে ‘সন্ত্রাসী ও গ্রামবাসী এক হয়ে যায়’।
“আমরা আগেই বলেছি, কে সন্ত্রাসী আর কে নিরাপরাধ গ্রামবাসী তা বের করা খুব কঠিন। তারা আরসার সদস্য ছিল কি না তার তদন্ত হবে।”

মিয়ানমারের সেনা সদস্য
মিয়ানমারের সেনাবাহিনী প্রথমবারের মতো রোহিঙ্গা হত্যাকাণ্ডের স্বীকারোক্তিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন দেশটির নেত্রী অং সান সু চি।
মিয়ানমারের রাজধানীর নাইপিদোতে শুক্রবার জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তারো কোনোর সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “আমাদের দেশের জন্য এটি একটি নতুন ধাপ। আমি বিষয়টিকে এভাবেই দেখি।
“কারণ দেশে আইনের শাসনের জন্য একটি দেশের দায় নেওয়াটা জরুরি। আর সেই দায় নেওয়ার পথে এটিই হচ্ছে প্রথম পদক্ষেপ। এটি একটি ইতিবাচক বিষয়।”
এই ১০ রোহিঙ্গা হত্যাকাণ্ডে স্থানীয় বৌদ্ধ রাখাইনদেরও দায়ী করা হয়েছে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর তদন্তে।
তাদের বিবৃতিতে বলা হয়, ইন দিন গ্রামের মং নি নামের একজনকে হত্যার প্রতিবাদে ওই ১০ জনকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল কিছু গ্রামবাসী।
“তারা আটকদের গ্রামের এক পাশে একটি গণকবরে ঢুকিয়ে তাদের ধারাল অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। তারপর নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা তাদের গুলি করে মেরে ফেলে। আইন লংঘনে ওই সব গ্রামবাসী এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এই ঘটনায় তুন আয়ে নামে মং নির এক ছেলের বিরুদ্ধে পুলিশ হত্যার অভিযোগ আনতে চাচ্ছে বলে তার একজন আইনজীবী শনিবার রয়টার্সকে জানিয়েছেন।
খিন উইন নামের ওই আইনজীবী জানান, হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়ার অভিযোগে গত সপ্তাহে ইন দিনের নিকটবর্তী শহর মং ডুতে স্থানীয় প্রসিকিউটররা তুন আয়ের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ দাখিল করেন।
তিনি রয়টার্সকে বলেন, পুলিশ গত ১৫ ডিসেম্বর তুন আয়েসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছিল। বাকি তিনজন মুক্তি পেয়েছেন।
তবে মিয়ানমার পুলিশের মুখপাত্র থেট নাইং বলেছেন, এই হত্যা মামলার বিষয়ে তার কিছু জানা নেই।

চার মাসে বাংলাদেশে এসেছে সাড়ে ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গা
ওই অভিযানকে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ হিসেবে বর্ণনা করে আসছে জাতিসংঘ। অভিযানে এক মাসেই ৬ হাজার ৭০০ মানুষকে হত্যা করা হয় বলে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মেদসঁ সঁ ফ্রঁতিয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। শত শত রোহিঙ্গা গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়ার প্রমাণ উঠে এসেছে স্যাটেলাইট চিত্রে।
সেনা সদস্যদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা নারীরা। মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ভাষ্যে, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের জাতিগতভাবে নির্মূল করতে যে অভিযান চালায়, তার গুরুত্বপূর্ণ ও ভয়াবহ একটি অংশ ছিল ব্যাপক হারে ধর্ষণ।
রোহিঙ্গাদের ওপর এই নিষ্ঠুরতা নিয়ে বিশ্বব্যাপী সমালোচনা-প্রতিবাদের মধ্যে নভেম্বরের মাঝামাঝিতে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর এক তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, তাদের সৈন্যরা নৃশসংশতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের কিছুই করেনি।
আরও খবর
স্যাটেলাইট ছবিতে ‘২৮৮ রোহিঙ্গা গ্রাম পোড়ানোর চিহ্ন’
বর্মি সেনাদের ধর্ষণযজ্ঞের ভয়াবহ বিবরণ রোহিঙ্গা নারীদের মুখে
রাখাইনে যুদ্ধাপরাধের মতো ঘটনা ঘটেছে: মার্কিন প্রতিনিধি দল
মিয়ানমারের বাহিনী হত্যা, ধর্ষণ করেনি: সেনা তদন্ত প্রতিবেদন
রোহিঙ্গাদের ফেরানোর চুক্তির সপ্তাহেও পোড়ানো হয় বহু গ্রাম: এইচআরডব্লিউ
আরও পড়ুন
WARNING:
Any unauthorised use or reproduction of bdnews24.com content for commercial purposes is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action.
- কাশ্মীরের পুলওয়ামায় বন্দুকযুদ্ধে নিহত ৯
- আঞ্চলিক উত্তেজনার মধ্যেই সৌদি যুবরাজ পাকিস্তানে
- ভারতজুড়ে আক্রান্ত কাশ্মীরিরা, সুরক্ষার নির্দেশ সরকারের
- কাশ্মীরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর মেজর নিহত
- কাশ্মীরে হামলা: ভারতের পাশে থাকার আশ্বাস যুক্তরাষ্ট্রের
- কাশ্মীর হামলা: পাকিস্তানকে ‘একঘরে করার’ হুমকি ভারতের
- কাশ্মীরে গাড়িবোমা হামলায় নিহত ৪০
সর্বাধিক পঠিত
- কাশ্মীরের পুলওয়ামায় বন্দুকযুদ্ধে নিহত ৯
- মাহমুদুলের সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশের দারুণ জয়
- ছেলে সন্তানের জন্ম দিলেন আইএসের শামীমা বেগম
- অবশেষে হচ্ছে বিপিএলের বাইরে টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট
- স্মিথের সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশের সামনে বড় লক্ষ্য
- আরও ৩টি ব্যাংক অনুমোদন
- মাহমুদউল্লাহ-বোল্টের শাস্তি
- ৫ সেঞ্চুরিতেও আশরাফুলের ১৫ লাখ যে কারণে
- ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে কে কোন দলে
- ‘বদিকে দিয়ে মাদক, শাজাহান খানকে দিয়ে দুর্ঘটনা রোধ সম্ভব?’