বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারের ওই রাজ্যে সেনাবাহিনীর দমন অভিযান শুরুর পর গত ২৫ অগাস্ট থেকে সোয়া ছয় লাখ রোহিঙ্গা মুসলমান পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে।
গত দশ সপ্তাহে রোহিঙ্গাদের গ্রামে গ্রামে ওই সহিংসতাকে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ হিসেবে চিহ্নিত করে এর সমালোচনা করে আসছে জাতিসংঘ।
তবে মিয়ানমার সরকার কোনো ধরনের জাতিগত নির্মূল অভিযান চালানোর অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়, রোহিঙ্গা সঙ্কটের অবসানে যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স সোমবার নিরাপত্তা পরিষদে একটি প্রস্তাব পাসের উদ্যোগ নিলেও মিয়ানমারের দুই মিত্র দেশ ভেটো ক্ষমতার অধিকারী রাশিয়া ও চীনের কারণে তা শেষ পর্যন্ত বাদ দেওয়া হয়।
এর বদলে ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদ সর্বসম্মতভাবে একটি বিবৃতি (প্রেসিডেন্সিয়াল স্টেটমেন্ট) দেয়, যেখানে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে- রাখাইন রাজ্যে যাতে সেনাবাহিনীর অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ বন্ধ করা হয়, মিয়ানমার সরকারের প্রতি সেই আহ্বান জানাচ্ছে নিরাপত্তা পরিষদ।
সেই সঙ্গে রাখাইনে বেসামরিক প্রশাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে আইনের শাসন নিশ্চিত করতে এবং মানবাধিকার রক্ষার অঙ্গীকার ও দায় পূরণে মিয়ানমার সরকারকে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানানো হয়েছে।
আইনের শাসন ও মানবাধিকার নিশ্চিত করে সকল নাগরিককে রক্ষা করা যে রাষ্ট্রের দায়িত্ব, সে কথাও মিয়ানমার সরকারকে মনে করিয়ে দিয়েছে নিরাপত্তা পরিষদ।
সেই সঙ্গে রাখাইনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের স্বচ্ছ তদন্ত নিশ্চিত করতে জাতিসংঘের সংস্থাগুলোকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানানো হয়েছে মিয়ানমার সরকারের প্রতি।
মিয়ানমার সরকার জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনকে রাখাইনের ওই অঞ্চলে যাওয়ার অনুমতি দেয়নি। সেখানে সাংবাদিকদের যাওয়ারও সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না।
সহিংসতা শুরুর দুই মাসেরও বেশি সময় পর গত ২ নভেম্বর রাখাইনের ওই অঞ্চলে গিয়ে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি ‘বিবাদ বন্ধের’ আহ্বান জানান।
তিনি বলে আসছেন, যারা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে, তারা রাখাইনে বসবাসের প্রমাণ দেখাতে পারলেই মিয়ানমার তাদের ফিরিয়ে নেবে।
অন্যদিকে রাখাইনে মানবিক সঙ্কট এবং বাংলাদেশমুখী শরণার্থীর স্রোত বাড়তে থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করে নিরাপত্তা পরিষদ বলেছে, এই পরিস্থিতি পুরো অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে।
রাখাইনে অবিলম্বে নির্বিঘ্নে মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর এবং সাংবাদিকদের সেখানে যাওয়ার সুযোগ দিতে মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের এই সংস্থা।
পাশাপাশি জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসকে অনুরোধ জানানো হয়, যাতে তিনি একজন বিশেষ উপদেষ্টা নিয়োগ দিয়ে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রাখেন এবং অগ্রগতি জানিয়ে ৩০ দিনের মধ্যে একটি প্রতিবেদন দেন।
জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারকেও বক্তব্য রাখার সুযোগ দেওয়া হয়।
বাংলাদেশের পক্ষে বক্তব্য দেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন। সর্বসম্মতিক্রমে প্রেসিডেন্সিয়াল স্টেটমেন্ট গৃহীত হওয়ায় নিরাপত্তা পরিষদকে তিনি ধন্যবাদ জানান।
রাষ্ট্রদূত বলেন, “আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা বলতে চাই, দ্বিপক্ষীয়ভাবে এ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব না, যতক্ষণ না আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে নিরাপত্তা পরিষদ এ বিষয়ে যথাযথ দায়িত্ব গ্রহণ করে।”