রয়টার্স জানিয়েছে, তাদের একজন সাংবাদিক বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় রাখাইন রাজ্যের রাজধানী সিটুয়েতে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর সু চিকে একটি সামরিক হেলিকপ্টারে চড়তে দেখেছেন।
সু চির দপ্তরের মহা পরিচালক জ তাই রয়টার্সকে বলেন, “তিনি মংডুতে যাবেন। আপাতত এর বেশি কিছু আমি বলতে পারছি না।
গত ২৫ অগাস্ট রাখাইনের ওই অঞ্চলে নতুন করে সেনা অভিযান শুরুর পর নির্বিচারে হত্যা, জ্বালাও-পোড়াওয়ের মধ্যে ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। বুধবার রাতেও সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা।
রাখাইনে কয়েকশ বছর ধরে রোহিঙ্গা মুসলমানদের বসবাসের ইতিহাস থাকলেও ১৯৮২ সালে আইন করে তাদের নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত করা হয়। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এবং ক্ষমতাসীন দলের অনেক নেতাই রোহিঙ্গাদের বর্ণনা করে আসছেন ‘বাঙালি সন্ত্রাসী’ ও ‘অবৈধ অভিবাসী’ হিসেবে।
এবার আসা ছয় লাখের বাইরে আরও প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা গত কয়েক দশকে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশে এসেছে প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে।
গতবছর ৯ অক্টোবর মিয়ানমারের তিনটি সীমান্ত পোস্টে ‘বিদ্রোহীদের’হামলায় নয় সীমান্ত পুলিশ নিহত হওয়ার পর রাখাইনে সেনা অভিযান শুরু পরও সেখানে ব্যাপক হত্যা-নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছিল। জাতিসংঘের পক্ষ থেকে সে সময় রাখাইনে যাওয়ার জন্য সু চির প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছিল। কিন্তু তার সাড়া মেলেনি।
রাখাইনের ৩০টি পুলিশ পোস্ট ও একটি সেনাক্যাম্পে বিদ্রোহীদের হামলার পর গত ২৫ অগাস্ট এবারের অভিযান শুরু হয়। ওই অভিযানকে জাতিসংঘ ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ হিসেবে বর্ণনা করার পর আন্তর্জাতিক সমালোচনার মধ্যে সু চিকে একই পরমার্শ দেন কয়েকজন নোবেলবিজয়ী।
গত মাসে রাখাইনে পুনর্বাসন শুরুর ঘোষণা দিয়ে সু চি এ কাজে মিয়ানমারের ধনী ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা চান। তার সরকার বলে আসছে, বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে যারা রাখাইনে বসবাসের প্রমাণ দেখাতে পারবে, কেবল তাদেরই ফিরিয়ে নেওয়া হবে।
রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে আলোচনা শুরু হলেও কীভাবে তা হবে, সেই প্রশ্নে বিষয়টি আটকে আছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, রোহিঙ্গারা যে অবস্থায় বাংলাদেশে এসেছে, তাতে তাদের কাছে জাতীয় পরিচয়পত্র বা মিয়ানমারে ঘরবাড়ি থাকার প্রমাণ আশা করা কঠিন। তাছাড়া রোহিঙ্গাদের কাছে জাতীয় পরিচিতির যেসব কাগজপত্র ছিল, গতবছরই সেগুলো বাতিল করে দিয়েছে মিয়ানমার।