রোহিঙ্গা সঙ্কট: কঠোর পদক্ষেপ দাবি যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতাদের

রাখাইনের রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর সেনাবাহিনীর দমন অভিযান থামাতে মিয়ানমার সরকারের বিরুদ্ধে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ অথবা সাহায্য বন্ধের মত এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকজন আইনপ্রণেতা ও কর্মকর্তার কাছ থেকে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Oct 2017, 05:18 AM
Updated : 6 Oct 2017, 08:17 AM

তবে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ডেপুটি অ্যাসিসট্যান্ট সেক্রেটারি প্যাট্রিক মার্ফি বলেছেন, মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে, যাতে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে না যায়।   

বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটিতে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে শুনানিতে এ মত উঠে আসে।

রাখাইনে সেনাবাহিনীর দমন অভিযানের মুখে গত ২৫ অগাস্ট থেকে পাঁচ লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। তারা বলছেন, সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা অধ্যুষিত গ্রামগুলোতে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে মানুষ মারছে। রোহিঙ্গা নারীদের ধর্ষণ করা হচ্ছে, জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম।

মিয়ানমারের নেত্রী সু চি সেনাবাহিনীর এই অভিযানকে ‘সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে লড়াই’ হিসেবে বর্ণনা করলেও জাতিসংঘ একে চিহ্নিত করেছে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ হিসেবে।

 

রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি দেখতে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে সেখানে যেতে দিচ্ছে না মিয়ানমার সরকার। এমনকি সেখানে আইসিআরসি ছাড়া অন্য কোনো সংস্থাকে ত্রাণ দিতেও বাধা দেওয়া হচ্ছে।

এর মাশুল গুণতে হচ্ছে বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলোকে। বিপুল সংখ্যক মানুষের জন্য খাবার, পানি, আশ্রয় আর ন্যূনতম চাহিদাগুলো মেটাতে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।

মিয়ানমার সরকারের এই ভূমিকার কারণে নোবেল বিজয়ী সু চির সমালোচনায় মুখর হয়েছে পশ্চিমা মিত্ররাও, যাদের কাছে এক সময় তিনি ছিলেন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটির গণতন্ত্রের প্রতীক। মার্কিন আইন প্রণেতাদের অনেকেই মিয়ানমারের বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।     

পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান রিপাবলিকান পার্টির কংগ্রেস সদস্য এড রয়েস বলেন, সর্বশেষ বিবৃতিতেও সু চি ‘জাতিগত নির্মূল অভিযানের’ বিষয়টি অস্বীকার করেছেন, যা ‘সঠিক নয়’।  

“যারা ওই সহিংসতার জন্য দায়ী, তাদের অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। সু চি এবং তার দেশের সেনাবাহিনীকে এই চ্যালেঞ্জ নিতে হবে। এটা অবশ্যই জাতিগত নির্মূল অভিযান।” 

 

মিয়ানমার ও দেশটির সেনাবাহিনীর ওপর থেকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি যারা তুলেছেন, পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটিতে ডেমোক্র্যাটদের জ্যেষ্ঠ প্রতিনিধি এলিয়ট অ্যাঙ্গেল তাদের একজন।

আন্তর্জাতিক তদন্তকারীদের রাখাইনে যাওয়ার সুযোগ দিতে সু চির সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা।  

রিপাবলিকান কংগ্রেস সদস্য স্কট পেরি বলেন, “আমরা এখানে স্যুট পরে বসে আছি, আর ওখানে মানুষ খুন হচ্ছে, তাদের নিজের দেশ থেকে উৎখাত করা হচ্ছে।  কাউকে না কাউকে এর বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে।”

মিয়ানমারে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার পেছনে কারা আছে- তাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে বলে জানান মার্ফি।

জাতিসংঘের তদন্তকারীদের রাখাইনে প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার আগ পর্যন্ত মিয়ানমার সরকারকে মার্কিন সাহায্য বন্ধ রাখলে ফল পাওয়া যাবে কি না- তা ভেবে দেখার আহ্বান জানান পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির এশিয়া বিষয়ক উপ কমিটির প্রধান কংগ্রেস সদস্য টেড ইয়োহো।

ইউএসএআইডির প্রতিনিধি কেট সমভংসিরি বলেন, বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।  

“পরিস্থিতির ভয়াবহতা অনুধাবন করে আমাদের অবশ্যই সব বিকল্প বিবেচনা করে দেখতে হবে।”