রোহিঙ্গাদের ‘বড় হুমকি’ ভাবছে ভারত সরকার

সহিংসতার মুখে মিয়ানমারের রাখাইন থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠিকে নিজ দেশের ‘জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ‘বড় হুমকি’ হিসেবে দেখছে ভারত সরকার।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Sept 2017, 02:02 PM
Updated : 18 Sept 2017, 02:02 PM

কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে ভারতের সুপ্রিম কোর্টকে একথাই জানানো হয়েছে বলে সোমবার দেশটির গণমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য দমন-পীড়নের শিকার মুসলিম রোহিঙ্গাদের মধ্যে ৪০ হাজারের মতো ভারতে আশ্রয় নিয়ে আছে। এর মধ্যে ১৬ হাজার জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার নিবন্ধিত।

রাখাইনে নতুন করে সহিংসতা শুরুর পর বাংলাদেশ সীমান্তে রোহিঙ্গা ঢল নামার মধ্যে ভারত তার দেশে থাকা শরণার্থীদের মিয়ামারে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্তের খবর প্রকাশ পায়।

ভারতে রোহিঙ্গা শরণার্থী হিসেবে নিবন্ধিত মোহাম্মদ সলিমুল্লাহ ও মোহাম্মদ শাকির তখন একটি রিট আবেদন করেন। তার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার আদালতকে সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যা জানায়।

নির্যাতনের মুখে সব হারিয়ে এভাবে দলে দলে বাংলাদেশে আসছে রোহিঙ্গারা

এনডিটিভি জানিয়েছে, সর্বোচ্চ আদালতে দেওয়া লিখিত জবাবে বলা হয়েছে, ‘সরকারের নির্বাহী সিদ্ধান্তেই’ রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে।

রোহিঙ্গাদের ‘জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ‘বড় ধরনের এবং সম্ভাব্য হুমকি’ হিসেবে উল্লেখ করে সরকারের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, মিয়ানমার থেকে আসা এই জনগোষ্ঠি ভারতবিরোধী কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি মুদ্রা পাচারের মতো কাজে জড়িত।

রোহিঙ্গাদের মধ্যে কারও কারও সঙ্গে পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ থাকার তথ্য গোয়েন্দা সূত্রে পাওয়া গেছে বলেও দাবি করেছে ভারত সরকার।

আদালতকে আরও বলা হয়েছে, ভারতে জাতিগত ও সাম্প্রদায়িক সংঘাত বা দাঙ্গা বাঁধানোতে আইএসের মতো জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে রোহিঙ্গাদের জড়িত থাকার তথ্যও মিলেছে।

ভারতে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ও ‘উগ্র ধর্মীয় মতাদর্শে বিশ্বাসী’ রোহিঙ্গাদের সহিংসতার শিকার হতে পারে বলে দাবি করছে কেন্দ্রীয় সরকার। 

ভারত জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক কনভেনশনে স্বাক্ষর করেনি উল্লেখ করে সরকার বলেছে, এখানে শুধু ভারতীয়দেরই বসবাসের অধিকার রয়েছে, অবৈধ অভিবাসীদের নয়।

রোহিঙ্গাদের ভারত থেকে বিতাড়নের দাবিতে কট্টর হিন্দুদের বিক্ষোভ

তাছাড়া অবৈধ অভিবাসীদের কারণে ভারতের নিজস্ব নাগরিকদের মৌলিক এবং মানবাধিকার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলেও মনে করছে সরকার।

রোহিঙ্গাদের রিট আবেদনে আগামী ৩ অক্টোবর পরবর্তী শুনানির দিন রেখেছেন প্রধান বিচারপতি দিপক মিশ্র।

রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে ভারত সরকারের পরিকল্পনার সমালোচনা করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা।

তবে আদালতের আদেশেই রোহিঙ্গাদের ভবিষ্যৎ চূড়ান্ত হবে বলে জানিয়েছেন ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং। 

“সিদ্ধান্ত যাই হোক, তা নেবে সুপ্রিম কোর্ট,” বলেন তিনি।

বৌদ্ধপ্রধান মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের জাতিগতভাবে নির্মূল করা হচ্ছে বলে জাতিসংঘের দাবি। রোহিঙ্গাদের বেশিরভাগই এখন ভিন দেশে শরণার্থী হয়ে আছে।  

মিয়ানমারে বাস্তহারা রোহিঙ্গাদের ৮ লাখের বেশি রয়েছে বাংলাদেশে, পাকিস্তানে রয়েছে ৩ লাখের মতো। এছাড়া মালয়েশিয়া ও সৌদি আরবসহ কয়েকটি দেশে রয়েছে আরও কয়েক লাখ রোহিঙ্গা।