জাকির নায়েকের ভারতীয় পাসপোর্ট বাতিল

সন্ত্রাসবাদে উসকানি ও মুদ্রা পাচারের মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত আসামি বিতর্কিত টিভি বক্তা জাকির নায়েকের পাসপোর্ট বাতিল করেছে ভারত সরকার।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 July 2017, 05:59 AM
Updated : 19 July 2017, 06:39 AM

নায়েকের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্তে থাকা ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা- এনআইএর অনুরোধে মুম্বাইয়ের আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস মঙ্গলবার তার পাসপোর্ট বাতিল করে বলে আইএএনএস এর খবর।

ঢাকার গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলাকারী জঙ্গিদের অন্তত দুজন তার বক্তব্যের ভিডিও নিয়মিত অনুসরণ করতেন বলে অভিযোগ ওঠার পর গতবছর নতুন করে আলোচনায় আসেন মহারাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া জাকির নায়েক। এরপর সন্ত্রাসবাদে উসকানির অভিযোগে তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে ভারত সরকার।

ওই সময় উগ্রবাদ প্রচারের অভিযোগে ভারতের পাশাপাশি বাংলাদেশেও নিষিদ্ধ হয় পিস টিভির কার্যক্রম, যা নায়েকের প্রতিষ্ঠিত বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশন-আইআরএফ এর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়।

আইআরএফ এর তহবিলে আসা অর্থ ব্যবস্থাপনার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে গিয়ে তার মুদ্রা পাচারের বিষয়টি বেরিয়ে এলে নায়েকের বিরুদ্ধে মামলা করে এনআইএ।

তদন্ত শুরুর সময় সৌদি আরবে অবস্থানরত নায়েক আর ভারতে ফেরেননি। তদন্তের প্রয়োজনে বেশ কয়েকবার তলব করা হলেও তাতে সাড়া না পেয়ে চলতি বছরের এপ্রিলে মুদ্রা পাচারের মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ১০ কার্যদিবসের মধ্যে পাসপোর্ট নিয়ে হাজির হওয়ার জন্য গত ৩ জুলাই জাকির নায়েকের নামে চিঠি পাঠান মুম্বাই আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পাসপোর্ট কর্মকর্তা (পলিসি)।

২০১৬ সালের ২০ জানুয়ারি ইস্যু করা ১০ বছর মেয়াদী পাসপোর্টটি নিয়ে হাজির না হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ার করা হয় ওই চিঠিতে। 

চিকিৎসা পেশা থেকে ধর্ম প্রচারে আসা নায়েক গত বছর ভারত ছাড়ার পর থেকে সৌদি আরব, মালয়েশিয়াসহ কয়েকটি দেশে যাতায়াত করেছেন। টাইমস অব ইন্ডিয়া লিখেছে, পাসপোর্ট বাতিলের পর তার চলাফেরা সীমিত হয়ে আসবে।

এনডিটিভি জানিয়েছে, সৌদি সরকার নায়েককে নাগরিকত্ব দিয়েছে বলে গত মে মাসে খবর প্রকাশ করে লন্ডনভিত্তিক মিডল ইস্ট মনিটর। তবে সে খবরের সত্যতা যাচাই করা যায়নি।

সৌদি আরব সরকার জাকির নায়েককে ‘ইসলামের সেবক’ বিবেচনা করে ২০১৫ সালে ‘বাদশাহ ফয়সাল আন্তর্জাতিক পুরস্কার’ দেয়।

বিতর্কিত এই টিভি বক্তাকে ‘সৌদি আরবের পৃষ্ঠপোষকতায় ওহাবি মতবাদ প্রচারকারী’ হিসেবে সন্দেহের চোখে দেখেন ভারতের কয়েকজন মুসলমান পণ্ডিত।

নায়েক বিভিন্ন সময়ে ইসলাম ধর্ম, জঙ্গিবাদ, জিহাদ নিয়ে বক্তব্যের জন্য বিতর্কিত হয়েছেন; নিষিদ্ধ হয়েছেন বিভিন্ন দেশে। গত বছর উসকানিমূলক কথাবার্তা বলার অভিযোগে ভারতের কর্নাটক রাজ্যে তাকে নিষিদ্ধ করা হয়৷

১৯৬৫ সালে মুম্বাইয়ে জন্ম নেওয়া জাকির নায়েক কিষানচাঁদ চেলারাম কলেজের পর টোপিওয়ালা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজে মেডিসিন বিষয়ে পড়ালেখা করেন। পরে বিওয়াইএল নায়ার চ্যারিটেবল হাসপাতালেও তিনি লেখাপড়া করেন।

১৯৮৭ সালে ইসলামী বক্তা আহমেদ দিদাতের সংস্পর্শে আসেন নায়েক। এর কয়েকবছর বাদে ১৯৯১ সাল থেকে শুরু করেন ধর্ম প্রচারের কাজ।

তার কিছু বক্তব্যকে জঙ্গিবাদের প্রতি তার সমর্থন হিসেবে চিহ্নিত করেন অনেকে; তরুণদের মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসে ভেড়ানোর অভিযোগে জাকির নায়েকের এক সহযোগীকেও গ্রেপ্তার করে ভারতীয় পুলিশ।

ভারতের আল্লামা সাইয়্যিদ খালিক সাজিদ বোখারী কয়েক বছর আগে জাকির নায়েকের বিপক্ষে একটি বই লেখার পর বাংলাদেশেও হক্কানি আলেমরা তার সমালোচনায় মুখর হন।