নোট বদলের ক্ষোভ সহিংসতায়

ভারতে পাঁচশ ও  এক হাজার রুপির নোট তুলে নেওয়ার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঘোষণাকে প্রথমদিকে অনেকে স্বাগত জানালেও তা জমা দিয়ে নতুন নোট ওঠানোর বিড়ম্বনায় পড়ে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে মানুষ, ঘটছে সহিংস ঘ্টনাও।

ভারত প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Nov 2016, 05:33 PM
Updated : 23 Nov 2016, 06:42 AM

বদলে দেওয়ার জন্য নতুন নোট শেষ হয়ে যাওয়ায় মঙ্গলবার বিহারের মুজাফফরপুরে স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার একটি শাখায় ভাংচুর করেছেন গ্রাহকরা।

হায়দ্রাবাদের দক্ষিণ শহরতলীতে নতুন নোটের জন্য লাইনে দাঁড়ানো আড়াই শতাধিক গ্রাহক ব্যাংকের ভিতরে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করলে ভয়ে অফিস বন্ধ করে দেন ব্যাংক কর্মীরা।

আহমেদাবাদের বরোদার একটি ব্যাংকে কয়েকশ বেপরোয়া গ্রাহক নোট বদলে না দিয়ে অফিস বন্ধ করা হলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ‘খারাপ পরিণতি’ হবে বলে হুমকি দিয়েছেন।

এদিন ভারতজুড়ে এ ধরনের নানা ঘটনার খবর শোনা গেছে।

গত ৮ নভেম্বর হঠাৎ এক ঘোষণায় কালো টাকা ও দুনীর্তির বিরুদ্ধে লড়াই ও জাল নোটের প্রভাব কমাতে বাজারে থাকা ৫০০ ও ১০০০ রুপির সব নোট তুলে নেওয়ার ঘোষণা দেন নরেন্দ্র মোদী।

পরিবর্তে যাদের কাছে পুরনো নোট রয়েছে তারা ১০ নভেম্বর থেকে শুরু করে ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে ব্যাংক থেকে তা বদলে নতুন ৫০০ ও ২০০০ রুপির নোট নিতে পারবেন বলে জানানো হয়।

দিনে পুরনো নোটের বিনিময়ে নতুন নোটে রুপি তোলার সর্বোচ্চ সীমা কম হওয়ার পাশাপাশি সব গ্রাহককেও তা সরবরাহ করতে পারছে না ব্যাংকগুলো।

এ প্রেক্ষাপটে অর্থনীতিবিদ ও সরকারি অর্থায়ন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর এ উদ্যোগ অর্থনীতিতে যতোটা সুফল আনবে বলে আশা করা হয়েছিল তার চেয়ে বেশি ক্ষতি করছে।

অর্থনীতিবিদ ও জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক প্রভাত পাটনায়েক বলেন, “দেশের ৮৫ ভাগ অর্থ যেখানে  ৫০০ ও ১০০০ রুপির নোটের সেখানে রাতারাতি এসব নোট তুলে নেওয়ার সরকারের ঘোষণা উদ্ভট।”

পুরনো নোট বদলাতে অন্তত ছয় মাস থেকে এক বছর সময় দেওয়া উচিত ছিল বলে মনে করেন তিনি। সে ঘোষণাও এতো তড়িঘড়ি করে হওয়া উচিত নয় বলে অভিমত তার।

“এই পদক্ষেপ প্রমাণ করে আমাদের সরকার পুঁজিবাদ বোঝে না,” বলেন অর্থনীতির অধ্যাপক প্রভাত।

ভারতের মোট কর্মসংস্থানের প্রায় ৭০ ভাগ যেখানে নিয়োজিত, সেই কৃষিনির্ভর গ্রামীণ অর্থনীতি ও শহরের ক্ষুদ্র ব্যবসায় লেনদেন প্রায় পুরোটাই নগদ অর্থে হয়ে থাকে।

“তাই তারল্যের ৮৫ ভাগ তুলে নেওয়া মানে এক রকম পুরো অর্থনীতিরই অন্ত্যুষ্টিক্রিয়া করার মতো শোনায়,” বলেন দেশটির সাবেক অর্থমন্ত্রী কংগ্রেস নেতা পি চিদাম্বরম।

একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে তিনি বলেন, তাদের সরকার ২০০৫ সালের আগে চালু করা উচ্চ মূল্যের মুদ্রা বদলের উদ্যোগ নিলে বিজেপি তার বিরোধিতা করে। সেসময় তাদের মনে হল এটা ‘গরীববিরোধী’।

“এখন তাদের প্রধানমন্ত্রী আকস্মিক এই ঘোষণা দিলেন, যা অর্থনীততে খুব বিরূপ প্রভাব ফেলবে এবং দরিদ্ররাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”

পরপর তিন বছর খরার পর এবার ভালো বৃষ্টি হলেও নগদ অর্থের অভাবে বীজ ও সার কেনার পাশাপাশি খামারের শ্রমিকদের বেতন দিতে পারছেন না ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় মহারাষ্ট্র রাজ্যের কৃষকরা।

হতাশা প্রকাশ করে নাগপুরের কাছের একটি গ্রামের সয়া কৃষক আচিয়ুত নেনে বলেন, “আমরা এবার ভালো ফলনের আশা করছিলাম, যাতে আমরা ঋণমুক্ত হতে পারি। কিন্তু এখন আমাদের কাছে বীজ-সার কেনা ও শ্রমিকদের বেতন দেওয়ার মতো নগদ অর্থ নেই। আমরা শেষ হয়ে গেছি।”

দেরিতে হলেও এ অবস্থা অনুধাবন করে গত সোমবার ভারত সরকার এক ঘোষণায় পুরনো ৫০০ রুপির নোট দিয়ে কৃষকদের বীজ কেনার সুযোগ দিয়েছে।

“তবে তারা শুধু সরকারি বিক্রয় কেন্দ্রগুলো থেকেই তা কিনতে পারবেন, অন্যরা কেউ পুরনো মুদ্রা নিতে পারবে না,” একটি টিভি চ্যানেলকে বলেন খাদ্য নীতি বিশেষজ্ঞ দেবিন্দার পাঠক।

তিনি বলছেন, এ সুযোগ নিয়ে ভারতের কৃষকরা সরকারের কাছ থেকে প্রয়োজনের মাত্র ৫ থেকে ১০ শতাংশ বীজ কিনতে পারবেন।

কালো টাকা ঠেকানোর নামে নোট প্রত্যাহারে দরিদ্র কৃষকদের এভাবে সমস্যায় পড়তে হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন কমিউনিস্ট পার্টির পার্লামেন্ট সদস্য সিতারাম ইয়েচুরি।

মোদী সরকারকে ‘ধনীদের জন্য, গরীবের দ্বারা নির্বাচিত, ধনীদের সরকার’ বলে আখ্যায়িত করেন তিনি।

সিতারাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন কালো টাকা বিদেশে জমা থাকলেও তারা তাতে হাত দেয়নি। যারা ব্যাংক লোন পরিশোধ করে না সেই কর্পোরেটদেরও থামাতে পারেনি। কিন্তু নোট তুলে নিয়ে তারা গরীব ও মধ্যবিত্তদের ধ্বংস করেছে।”