ভারতের এই রাজ্যে সেনাবাহিনীর নিপীড়নের প্রতিবাদে টানা ১৬ বছর অনশনের পর মঙ্গলবার সেই কর্মসূচির অবসান ঘটান ৪৪ বছর বয়সী এই মানবাধিকারকর্মী।
ভারতীয় গণমাধ্যমকে শর্মিলার ভাই ইরম সিংহজিৎ বলেন, “প্রচণ্ড ইচ্ছাশক্তি আর প্রতিদিন যোগ ব্যায়াম করে সে তার শরীরকে সুস্থ রেখেছিল।”
১৯৯৮ সালে শর্মিলা যোগ ব্যায়াম শেখেন বলে জানিয়েছে তার পরিবার। তারপর থেকে প্রতিদিন যোগ ব্যায়াম করতেন তিনি।
২০০০ সালে আসাম রাইফেলসের সদস্যদের গুলিতে মনিপুরে এক বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকা শিশুসহ ১০ জন নিহত হলে শর্মিলার প্রতিবাদের সূচনা হয়।
মনিপুর থেকে সশস্ত্র বাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন প্রত্যাহারের দাবিতে ১ নভেম্বর অনশন শুরু করেন শর্মিলা।
অনশন শুরুর দু’দিনের মাথায় গ্রেপ্তার করা হয় শর্মিলাকে। অনশন করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন, এই ছিল তার বিরুদ্ধে অভিযোগ।
কিছুদিন পরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে সরকারের নির্দেশে নাকে নল ঢুকিয়ে শর্মিলাকে তরল খাবার দেওয়া শুরু হয়। ১৪ বছর জওহরলাল নেহেরু ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্স হাসপাতালে আটকে রেখে ওইভাবে তাকে খাবার নিতে বাধ্য করা হয়। ২০১৪ সালে আদালত তার নাকের নল খুলে ফেলার নির্দেশ দেয়।
অনশনরত অবস্থায় ১৫ দিন পর পর আদালতে হাজিরা দিতে হয়েছে শর্মিলাকে। গত মাসের শেষ দিকে আদালতে হাজির হয়ে ৯ অগাস্ট অনশন ভাঙার ইচ্ছার কথা জানান তিনি। সেইসঙ্গে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে বিয়ে করার এবং রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার ইচ্ছার কথা বলেন।
মঙ্গলবার জামিন নিয়ে আদালত থেকে বেরিয়ে আসার পর সমর্থকদের মাঝে মধু ও গরম পানি দিয়ে পৃথিবীর দীর্ঘতম অনশন ভাঙেন তিনি।
আত্মজীবনী ‘বার্নিং ব্রাইট’ এ লেখক দীপ্তি প্রিয়া মেহরোত্রাকে শর্মিলা বলেন, “যোগ ব্যায়াম ফুটবল খেলার মতো নয়। এটি ভিন্ন কিছু। যদি কেউ প্রতিদিন যোগ ব্যায়াম করেন, তবে এটি তাকে দীর্ঘদিন বেঁচে থাকতে সহায়তা করবে। যোগ ব্যায়াম করে একজন মানুষ একশ বছরের বেশি সময় বেঁচে থাকতে পারে।”
বইতে শর্মিলার বর্ণনায় বলা হয়, তিনি ব্যতিক্রমধর্মী একজন মানুষ যিনি প্রকৃতির খুব ঘনিষ্ঠ। যোগ ব্যায়াম ও হাঁটাহাটি করে তিনি প্রতিনিয়ত নিজের শরীর নিয়ে ‘এক্সপেরিমেন্ট’ চালিয়ে গেছেন।
অনশন ভাঙার পর আগামী কয়েকদিন শর্মিলাকে তরল খাবারই খেতে হবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
জওহরলাল নেহেরু ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেসের এক চিকিৎসক বলেন, “যে মানুষ ১৬ বছর ধরে কোনো শক্ত খাবার খায়নি, সে হঠাৎ করে খাওয়া শুরু করতে পারবে না। তাকে অল্প অল্প করে শুরু করতে হবে।”