গর্ভকালের প্রথম তিন মাসের যত্নআত্তি কেমন হবে?

গর্ভবতী, কেউ এটা জানার পর মনে আনন্দের সঙ্গে প্রশ্নও আসে বানের মতো। গর্ভকালের প্রথম তিন মাসে শরীর ও মনে অনেক বদল ঘটে যায়; তাতে মায়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রভাবিত হয় গর্ভে থাকা সন্তানও।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 July 2022, 03:12 PM
Updated : 2 July 2022, 03:31 PM

আর তাই এই প্রথম তিন মাসে কী করে সুস্থ থাকতে হবে, তা জানা মায়ের নিজের ও সন্তানের জন্য জরুরি।

প্রথম তিন মাস কেন গুরুত্বপূর্ণ?

সন্তানসম্ভবা কি না, তা প্রস্রাব অথবা রক্ত পরীক্ষা থেকে জানা যায়। বাড়িতে প্রেগনেন্সি টেস্টের চেয়ে ওই পরীক্ষা বেশি ভরসাযোগ্য, বলছে প্রেপনেন্সিবার্থঅ্যান্ডবেবি ডট অর্গ ডট এইউ।

সন্তান প্রসব পর্যন্ত গর্ভকাল ৯ মাসের হয়। এই ৯ মাসকে চিকিৎসকরা তিনটি ভাগে ভাগ করেন; যার প্রতি ভাগে থাকছে তিন মাস।

প্রথম তিন মাস গোনা শুরু হয় গর্ভবতী হওয়ার আগে শেষবার মাসিকের প্রথম দিন থেকে। এই তিন মাস মানে ১২ সপ্তাহ।

কোনো কোনো সন্তানসম্ভবা মায়ের বেলায় প্রথম তিন মাসে মাথা ঘোরা বা বমি বমি ভাব দেখা দিতে পারে। একে ’মর্নিং সিকনেস’ বলা হলেও দিনের যে কোনো বেলায় এমন হতে পারে।

গর্ভকাল ভিন্ন ভিন্ন নারীর বেলায় ভিন্ন ভিন্ন শারীরিক ও মানসিক অভিজ্ঞতা নিয়ে আসে। কোনো কোনো নারীর এসময় নানা কিছু খাওয়ার তীব্র ইচ্ছা দেখা দেয়; যাকে ‘ফুড ক্রেভিং’ বলে। আবার কারও কারও খাওয়ার রুচিই থাকে না। তেমনি কোনো কোনো গর্ভবতী আগের মতো স্বাভাবিকভাবেই খাওয়া-দাওয়া করেন। 

গর্ভকালের প্রথম তিন মাসে স্তন বড় ও ভারী হতে থাকে। অন্যদিকে ইউটেরাস বড় হতে থাকে বলে ব্লাডারে চাপ পড়ে; তাতে গর্ভবতী নারীর আগের তুলনায় প্রস্রাবের বেগ বেশি হয়।

প্রথম তিন মাসে হরমোনের ওঠানামার কারণে মানসিক দশায় বড় ধরনের বদল দেখা দিতে পারে যখন তখন। কখনও গর্ভবতী নারী গম্ভীর হতে পারেন, কখনও বিরক্ত বোধ করতে পারেন। আর গোড়ার দিকে ক্লান্তি বোধ করেন সব সন্তানসম্ভবা মায়েরাই।

এই সময় তাই মনের অবস্থা নিয়ে জীবনসঙ্গী অথবা কাছের কোনো বন্ধুর সঙ্গে আলাপ করা ভালো।

যদি অস্থিরতা দেখা দেয়, তবে ডাক্তার অথবা ধাত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে।  

প্রথম তিন মাসের প্রতি চার থেকে ছয় মাস পর পর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হয়। যদিও এটা নির্ভর করছে সম্ভানসম্ভবা মায়ের শরীর কেমন রয়েছে এবং গর্ভস্থ সন্তানের বৃদ্ধির উপর।

১২ সপ্তাহের মাথায় অনেকের বেলাতেই আলট্রাসাউন্ড করতে বলে থাকেন চিকিৎসকরা। ওই সময় পেটের সন্তানের হার্টবিট শোনা যেতে পারে।

এছাড়া পেটে যমজ সন্তান রয়েছে কি না চিকিৎসকরা তাও জানতে পারেন। সেই সঙ্গে প্রসবের তারিখ ও গর্ভবতী কতটুকু সুস্থ আছেন তা বলে দেওয়া যায়।

সুস্থ থাকার উপায়?

গর্ভকালে প্রস্রাবের সংক্রমণ হতে পারে অনেকেরই। যদি তা সময়মত শনাক্ত না করা হয়, তবে অপরিণত প্রসব হতে পারে। তাই প্রস্রাব পরীক্ষা করতে হবে। যদি সংক্রমণ থাকে তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সেরে উঠতে হবে। সাধারণত চিকিৎসা করালেই প্রস্রাবের সংক্রমণ থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা যায়।

আরএইচ বা রেসাস ফ্যাক্টর জানতে রক্তের পরীক্ষা করে দেখতে হবে। সেই সঙ্গে জানতে হবে রক্তে আয়রনের পরিমাণ। গর্ভকালীন ডায়বেটিস নির্ণয়ে রক্ত পরীক্ষা করে দেখতে হবে।

পাশাপাশি রুবেলা, এইচআইভি, হেপাটাইটিস, সিফিলিস রয়েছে কি না, জানতেও চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে রক্ত পরীক্ষা করতে হবে এই সময়।

ধূমপায়ী নারীকে গর্ভকালে অবশ্যই এই অভ্যাস ছাড়তে হবে। এই সময়ে অ্যালকোহল সেবন একেবারেই অনুচিৎ; এতে সন্তানের স্বাস্থ্যের উপর দীর্ঘমেয়াদী বাজে প্রভাব পড়ে।

পুরো গর্ভকালে অবশ্যই পুষ্টিকর খাবার খেতে; তাই প্রথম তিন মাসে তো অবশ্যই।

প্রথম তিন মাসে খাবার পরিমাণ খুব বেশি বাড়াতে হবে না, তবে বেছে বেছে পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। 

খাবার থেকে জরুরি ফলিক অ্যাসিড ও আয়োডিনের চাহিদা পূরণ একটু মুশকিল, তাই সাপ্লিমেন্ট নিতে হবে গর্ভবতীকে। 

শরীরচর্চা গর্ভবতীকে সুস্থ রাখতে। যদি নারী তাতে কোনো অসুবিধা বোধ করেন, তবে চিকিৎসককে জানাতে হবে।

ভালো হয় প্রথম তিন মাসে কোনো সুনির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসকের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখলে। এতে নিজের ও গর্ভের শিশুর সুস্থতায় পুরোপুরো মনোযোগ দেওয়া যাবে।

চিকিৎসকের কাছে একা না গিয়ে পরিবারের কেউ বা কোনো বন্ধুর সঙ্গে যেতে হবে। তাতে মানসিক ভয় ও জড়তা কাটিয়ে ওঠা সহজ হবে গর্ভবতীর।

গর্ভবতীর নারীর জন্য কিছু কিছু টিকা নেওয়া জরুরি। চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে প্রয়োজনমতো সেসব নিতে হবে।