জরায়ুমুখ ক্যান্সার: যা জানতে হবে

জরায়ুমুখ ক্যান্সারের বিস্তার কোথায় ঘটে, তা নামেই স্পষ্ট। বিশ্বে নারীরা যে ধরনের ক্যান্সারে বেশি আক্রান্ত হন, সেই তালিকায় এ রোগ আছে চার নম্বরে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 June 2022, 09:28 AM
Updated : 7 June 2022, 09:28 AM

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বরাতে ভারতের পিডি হিন্দুজা হসপিটাল অ্যান্ড এমআরসির চিকিৎসক সুপর্ণা রাও টাইমস অব ইনডিয়ায় এক নিবন্ধে লিখেছেন, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে ৯০ শতাংশের বেশি নারী জরায়ুমুখ ক্যান্সারের ঝুঁকিতে রয়েছেন। 

অনেক ক্যান্সারই একবারে গোড়ার দিকে শনাক্ত করা সম্ভব হয় না; তবে জরায়ুমুখ ক্যান্সারের বেলায় তা সম্ভব। আর শুরুতেই শনাক্ত করা গেলে চিকিৎসার মাধ্যমে রোগীকে অনেকটাই সারিয়ে তোলা সম্ভব।

জরায়ুমুখ ক্যান্সারের জন্য ৯৫ শতাংশ ক্ষেত্রে দায়ী করা হয় হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসকে (এইচপিভি)। মূলত যৌন সংসর্গের মাধ্যমে এ ভাইরাস ছড়ায়।

এছাড়া অল্প বয়সে বিয়ে, ঘন ঘন সন্তান নেওয়া, প্রজনন অঙ্গের অপরিচ্ছন্নতা, অপুষ্টি, ধূমপান, এইচআইভি সংক্রমণও জরায়ুমুখ ক্যান্সারের কারণ হয়ে উঠতে পারে।       

যোনিপথে সাদাস্রাব, যৌন সংসর্গের পর বা অন্য কোনো সময়ে যোনিপথে রক্তপাত এ ক্যান্সারের সাধারণ উপসর্গ। এছাড়া তলপেটে এবং পিঠের নিচে ব্যথাও হতে পারে; বিশেষ করে রোগ যদি জরায়ুমুখে ছড়িয়ে গিয়ে থাকে।

এর চিকিৎসায় রেডিওথেরাপি, সিসটেমিক থেরাপি বা অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হতে পারে। বিষয়টি নির্ভর করে ক্যান্সার কতটা ছড়িয়েছে তার ওপর।

যদি রোগের প্রাথমিক পর্যায়েই শনাক্ত করা সম্ভব হয়, তাহলে অস্ত্রোপচার এবং রেডিওথেরাপির পাশাপাশি কেমোথেরাপিতে রোগী অনেকটা সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন। তবে কেমোথেরাপির কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে।

আবার কেমোথেরাপির পাশাপাশি ইমিউনোথেরাপি এবং অন্যান্য জরুরি চিকিৎসা চালিয়ে গেলে ছড়িয়ে পড়া ক্যান্সারের ক্ষেত্রেও ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে।     

এই ক্যান্সারের শুরুটা জয় এইচপিভি সংক্রমণ থেকে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শরীর তার স্বাভাবিক নিয়মে এ ধরনের সংক্রমণ সারিয়ে তোলে। তবে দীর্ঘদিন ধরে বা ঘন ঘন এ সংক্রমণ হলে শরীরে ক্যান্সার কোষ তৈরি হওয়া ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। ওই ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়তে দশ বছরও লাগতে পারে।

শরীরের এই বদলগুলো প্যাপ স্মিয়ার পরীক্ষায় ধরা পড়ে। সুতরাং নিয়মিত এ ধরনের পরীক্ষা করে দেখা জরুরি, বিশেষ করে যে বয়সে নারীরা নিয়মিত যৌনসম্পর্কে থাকেন।

দেখা গেছে, নিয়মিত পরীক্ষা করা হলে জরায়ুমুখ ক্যান্সার এড়ানো সম্ভব, তাতে জীবন বাঁচে।

২৫ বছর বয়স থেকেই পরীক্ষা করা শুরু করতে হবে। প্রতি পাঁচ বছর পর পর এইচপিভির পরীক্ষা এবং প্যাপ টেস্ট একসঙ্গে করা যেতে পারে। অথবা তিন বছর পর পর প্যাপ টেস্ট করার পরামর্শ দিচ্ছে আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটি। 

টিকা দিয়ে এইচপিভি সংক্রমণ প্রতিরোধ করা সম্ভব। যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বা এফডিএ তিনটি টিকার অনুমোদন দিয়েছে; সারভেরিক্স (বাইভ্যালেন্ট) এবং গারডাসিল (কোয়াড্রিভ্যালেন্ট এবং নাইন-ভ্যালেন্ট) টিকা এইচপিভির ১৬ ও ১৮ ধরন দুটি প্রতিরোধে কার্যকর। ৭০ শতাংশ জরায়ুমুখ ক্যান্সার ভাইরাসের ওই দুটি ধরনের কারণে থেকে হয়ে থাকে।

যুক্তরাষ্ট্রে সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল বা সিডিসি কৈশোর শুরুর আগেই নিয়মিত এ টিকা নেওয়ার পরামর্শ দেয়। ৯ বছর বয়স থেকেই অন্য টিকার পাশাপাশি এ টিকার ডোজ শুরু করা যায়।

এইচপিভি টিকা এখন বৈশ্বিক টিকা কার্যক্রমেরও অন্তর্ভুক্ত।সিডিসির পরামর্শ হল, যারা ৯ থেকে ১৪ বছর বয়সের মধ্যে টিকা শুরু করেছে, তারা প্রথম ডোজের ছয় থেকে ১২ মাসের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ নেবে।

আর যারা ১৫ থেকে ৪৫ বছর বয়সের মধ্যে টিকা শুরু করেছেন, তারা প্রথম ডোজ নেওয়ার এক থেকে দুই মাস পর দ্বিতীয় ডোজ এবং এর ছয় মাস পর তৃতীয় ডোজ নেবেন।  

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অবশ্য সম্প্রতি নতুন টিকার ঘোষণা দিয়েছে; এ টিকার একটি ডোজই আগের দুই বা তিন ডোজের সমান সুরক্ষা দেবে।

তাতে রোগীর খরচ সাশ্রয় হচ্ছে। সেই সঙ্গে টিকা কার্যক্রম রোগীর কাছে বেশি গ্রহণযোগ্যতা পাবে এবং আরও বেশি করে রোগীর কাছে পৌঁছানো সম্ভব হবে।