মাসিকের আগে আগে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন?

প্রশ্ন: মাসিক চক্রের কোনো এক সময় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কিছুটা কমে যায়? আমি খেয়াল করে দেখেছি, পিরিয়ড শুরু হওয়ার ঠিক আগে আগে আমি অসুস্থ হয়ে যাই।

>> দানি ব্লামনিউ ইয়র্ক টাইমস
Published : 15 May 2022, 08:57 AM
Updated : 15 May 2022, 08:57 AM

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রণিধানযোগ্য কোনো গবেষণাএখন পর্যন্ত নেই, যা থেকে নিশ্চিত ভাবে বলা যায় যে মাসিকের আগে নারী অসুস্থ হতেপারে। তবে কিছু কিছু ইংগিত মিলেছে, যা থেকে বলা যায় যে এমনটা হতে পারে।

সাম্প্রতিক কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, পিরিয়ডেরআগে বা মাঝের কোনো সময় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ওঠা-নামা করতে পারে। আবারদীর্ঘমেয়াদী কোনো পুরনো রোগ থাকলে সেটা হয়ত মাসিকের সময়ই বেড়ে যেতে পারে। তাতে মনেহতে পারে নতুন কোনো অসুখ বুঝি শরীরে বাসা বেঁধেছে।

মাসিক শুরু হওয়ার ঠিক আগে আগে অনেক নারী এমনকিছু উপসর্গ অনুভব করার কথা বলেছেন, যেগুলো অনেকটা ফ্লুর মত। জ্বর জ্বর ভাব, গাব্যথা বা বিষণ্নতা দেখা যায় তাদের।

এনওয়াইইউ ল্যানগোন হেলথের গাইনোকলজিস্টতারানেহ শিরাজিয়ান বললেন, পিরিয়ডের সময় ওই ফ্লুর মত উপসর্গ কোনো জীবাণুর কারণে হয়না। এ সময় জরায়ু সংকুচিত হয়, কোষের মৃত্যু ঘটে। মাসিকের সময় শরীরে যে স্বাভাবিকপ্রদাহ হয়, তার বিপরীতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রতিক্রিয়া দেখায়, সেটাই ফ্লুরউপসর্গের মত মনে হয়।

অবশ্য হরমোনের ওঠানামাও এ ধরনের উপসর্গের কারণহতে পারে বলে জানালেন এই চিকিৎসক।

শরীরে ডিম্বাণু নিঃসৃত হওয়ার ঠিক আগে লিউটিনাইজিং হরমোন বা এলএইচ বেড়ে যায় এবং পিরিয়ডশুরু হলে দ্রুত নেমে যায়। এলএইচের এই পরিবর্তনের কারণেক্লান্তি, ঢেকুর ওঠা, মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব হতে পারে।

ডাক্তার শিরাজিয়ান বলেন, “কোনো কোনো নারীরবেলায় প্রতি পিরিয়ডে, প্রতি মাসে এসব উপসর্গ প্রবলভাবে দেখা দিতে পারে।”

পিরিয়ড ট্র্যাকিং অ্যাপ ক্লু এবং গবেষকদের একযৌথ জরিপে আরো কিছু জটিলতার তথ্য জানা গেছে। যেমন- অন্ত্রের প্রদাহ, মৃগীরোগ বাঅটোইমিউন ডিজঅর্ডারে ভুগছেন- এমন নারীদের ক্ষেত্রে এসব রোগের উপসর্গ ডিম্বাণুনিঃসৃত হওয়ার সময় বেড়ে যেতে পারে। সপ্তাহখানেক পর পরিস্থিতির উন্নতি হলেও মাসিকেরসময় আবার বেড়ে যেতে পারে।

জনস হপকিনস ব্লুমবার্গ স্কুল অফ পাবলিক হেলথেরমাইক্রোবায়োলজিস্ট সাবরা ক্লেইন বলেন, “এসব আসলে পিরিয়ডের দিনগুলোতে হরমোনেরমাত্রায় তারতম্য আর রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় পরিবর্তনের ফল।”

আরেক গবেষণা বলছে, হাঁপানিতে ভোগা নারীদের ১৯থেকে ৪০ শতাংশের ক্ষেত্রে পিরিয়ডের ঠিক আগে আগে বা ওই দিনগুলোতে ঘন ঘন বাতুলনামূলক প্রবলভাবে অ্যাজমার অ্যাটাক হতে দেখা গেছে। চিকিৎসকরা একে বলেন পেরিমেন্সট্রুয়ালঅ্যাজমা।

মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস নামের স্নায়ুরোগেভুগছেন- এমন নারীদেরও পিরিয়ডের সময় অসুস্থতা বেড়ে যেতে পারে বলে ছোট কিছু গবেষণায়দেখা গেছে। অটোইমিউন রোগ লুপুসে ভোগা রোগীরা মাসিকের দিনে প্রচণ্ড গায়ে ব্যথা অনুভবকরার পাশাপাশি ক্লান্ত বোধ করতে পারেন।

সন্তান ধারণের জন্য নারীর শরীরে প্রতি মাসে ডিম্বাণু তৈরিহয় এবং মাসিকের সময় তা ডিম্বাধার থেকে বেরিয়ে আসে।

বস্টনের ব্রিগহ্যাম অ্যান্ড উইমেনস হসপিটালেরগাইনোকোলজিস্ট কিম্বার্লি কিইফি স্মিথ বলেন, রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার স্বাভাবিকপ্রবণতা হল, শরীরে অস্বাভাবিক কিছু পেলে সেটাকে মেরে ফেলতে বা বের করে দিতে চায়। ডিম্বাণুনিষিক্ত হলে ভ্রুণ যেন আক্রান্ত না হয়, সেজন্য মাসিকের সময়টায় স্বাভাবিক রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থার কিছু অংশ নিষ্ক্রিয় থাকে।

মাসিক চলাকালে ডিম্বাশয় ইস্ট্রোজেন ওপ্রোজেস্টেরন হরমোন নিঃসরণ করে। তাতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার বিভিন্ন অংশবিভিন্নভাবে প্রভাবিত হয়। বিশেষ করে গর্ভধারণের সময়টায় প্রোজেস্টেরন হরমোনেরমাত্রা বেড়ে যেতে পারে, যা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে দমিয়ে রাখতে পারে।

তবে ডা. কিইফি স্মিথ বলছেন, মাসিকের সময় রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার বিষয়টি শুধু ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন হরমোন দিয়েব্যাখ্যা করা যায় না।

যারা কোনো রোগের চিকিৎসার জন্য হরমোনের ওষুধ নিচ্ছেনঅথবা জন্মনিয়ন্ত্রণ করছেন, তাদের অসুস্থ হয়ে পড়ার সম্ভাবনা কম।

নারী তার মাসিকের সময় কতটুকু অসুস্থ বোধ করতেপারেন তা নিয়ে কোনো উপযুক্ত তথ্য ছাড়া বিজ্ঞানীরা বিশেষ কোনো দিক নির্দেশনা দিতেঅপারগ।

ক্লেইন বলেন, “আপনার সর্দি লাগবে, নাকি অন্যকোনো সংক্রমণ হবে তা আগে থেকে বলা আমার পক্ষে সত্যিই মুশকিল। কারণ এত বিষদ গবেষণাএখনও হাতে নেই।”

তবে নারী যদি দীর্ঘদিন ধরে বারবার অসুস্থবোধ করেন মাসিকেরদিনে, তবে তা অবহেলা করার সুযোগ নেই।

ক্লেইন বলেন, “পিরিয়ডে অসুস্থবোধ করলে তা নিরাময় করে শরীরকেসুস্থ রাখতে হবে।”

“অবশ্যই পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে, পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে এবং২০ মিনিট ধরে হাত ধুতে হবে। প্রত্যেক নারী নিজেই তার শরীরকে সবচেয়ে ভালোভাবে জানেন।”