পুরস্কার পেল ফারহানার ‘পাটের স্যানিটারি ন্যাপকিন বানানোর মেশিন’ প্রস্তাব

সোনালী আঁশ পাটের তন্তু থেকে স্যানিটারি ন্যাপকিন বানানোর মেশিন উদ্ভাবনের প্রস্তাবে এ বছর চতুর্থ বার্ষিক ইনোভেশন পিচ প্রতিযোগিতায় চূড়ান্ত পর্বে পুরস্কার জিতে নিয়েছেন আইসিডিডিআরবির সহকারী বিজ্ঞানী ফারহানা সুলতানা।

আইরিন সুলতানাবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Nov 2021, 05:52 PM
Updated : 26 Nov 2021, 06:26 PM

মঙ্গলবার আইসিডিডিআরবির ভেরিফায়েড ফেইসবুক পাতায় প্রকাশ করা একটি পোস্টে এ কথা জানিয়েছে সংস্থাটি।

‘এ হেলদিয়ার গ্লোবাল কমিউনিটি অ্যাড্রেসিং দ্য টুইন চ্যালেঞ্জেস অফ প্যানডেমিক প্রিপ্রেয়ার্ডনেস অ্যান্ড ইমপ্যাক্ট অফ ক্লাইমেট চেঞ্জ’ প্রতিপাদ্যে এবারের প্রতিযোগিতার আয়োজক ছিল আমেরিকান সোসাইটি ফর ট্রপিকাল মেডিসিন অ্যান্ড হাইজিন (এএসটিএমএইচ)।

দেশে প্রান্তিক ও নিম্ন আয়ের পরিবারের নারীর জন্য স্যানিটারি ন্যাপকিন পণ্যটি সহজলভ্য করার তাগিদে বিজ্ঞানী ফারহানা সুলতানা বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশনের (বিজেএমসি)  বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা মোবারক আহমদ খানের সঙ্গে পাটের তন্তু থেকে বিকল্প স্যানিটারি ন্যাপকিন বানানোর গবেষণা শুরু করেন।

পাটের তন্তু একটি নতুন উপাদান হওয়ার এর প্রক্রিয়াজাত করার কাজে দেশে কোনো বিশেষ মেশিন নেই। এই সংকট কাটিয়ে উঠতে পরে নিজেই মেশিন উদ্ভাবন নিয়ে গবেষণা করেন ফারহানা;  তার সেই প্রস্তাবই পুরস্কার পেল আন্তর্জাতিক আসরে।

ফেইসবুকে দেওয়া  পোস্টে আইসিডিডিআরবি বলছে,  বিজয়ী ফারহানা সুলতানাকে পাঁচ হাজার ডলার পুরস্কার হিসেবে দিয়েছে এএসটিএমএইচ।

এই অর্থ পাট থেকে স্যানিটারি ন্যাপকিন বানানোর গবেষণায় ব্যয় করবেন ফারহানা; এতে ব্যবসায়িক পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করার পাশাপাশি বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন দিক নিয়েও গবেষণা করবেন তিনি। 

বিজ্ঞানী ফারহানা রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্যাড বানানোর আইডিয়াটা আমার ছিল। হাতে বানানোর কাজে সহায়তা করেছেন মোবারক আহমদ স্যার।”

২০১৯ সালের মাঝের দিকে ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের সহায়তায় এই গবেষণা শুরু হয়।পরে  কোভিড পরিস্থিতিতে এই গবেষণার হিউম্যান ট্রায়াল পিছিয়ে দিতে হয়। 

ফারহানা বলেন, “এই প্যাডের শোষণ ক্ষমতা, আরাম বোধ নিয়ে এরমধ্যে আমরা পরীক্ষা করে দেখেছি। সামনে আমরা এর চূড়ান্ত ফলাফল দেখতে পাবো।”

প্রস্তাবিত মেশিন দিয়ে প্রতিদিন প্রায় এক হাজার স্যানিটারি ন্যাপকিন উৎপাদন করা সম্ভব হবে বলে জানালেন এই বিজ্ঞানী।  

তিনি বলেন, “বাণিজ্যিক উৎপাদন করা গেলে বাজারে যে সব স্যানিটারি ন্যাপকিন এখন পাওয়া যায় সেগুলোর চেয়ে খরচ কম পড়বে।”

এই উদ্ভাবনে সোনালী আঁশ পাটের  ‘সুবর্ণ সময়’ ফিরে আসার সম্ভাবনাও দেখছেন ফারহানা। আগামীতে দেশে উৎপাদিত এই স্যানিটারি ন্যাপকিন বিদেশে রপ্তানি করার সম্ভাবনাও দেখছেন তিনি।

তুলনামূলক কম খরচে স্যানিটারি ন্যাপকিন বানানো ছাড়াও পরিবেশের উপর এর প্রভাব নিয়ে ভাবনা এই বিজ্ঞানীকে পাটের তন্তু নিয়ে কাজ করতে উৎসাহিত করে।

আইসিডিডিআরবির এই সহকারী বিজ্ঞানী বলেন, “বায়োডিগ্রেবল বা পচনশীল বলে এ ধরনের পণ্য পরিবেশবান্ধবও।

 “

এর আগে ২০১৬ সালে কাপড় দিয়ে রুমাল আকারের বিশেষ ধরনের স্যানিটারি ন্যাপকিন বানিয়েছিলেন ফারহানা। এরপর হাতের স্পর্শ ছাড়াই পুনরায় ব্যবহার করার এই ধরনের স্যানিটারি ন্যাপকিন ধোয়ার জন্য বিশেষ ধরনের ব্যাগ করেছিলেন।

সামনে নতুন কী উদ্ভাবন নিয়ে ভাবছেন?

বিজ্ঞানী ফারহানা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ আমাদের দেশে মেয়েদের পুষ্টি ঘাটতি আর রক্তাল্পতার প্রবণতা রয়েছে। মাসিকে অনেকের বেশি ক্ষরণ হয়ে আয়রন ঘাটতি দেখা দেয়।

“বিকল্প খাবার হিসেবে আমরা একটা রেসিপি - একটা পুষ্টিবার নিয়ে ভাবছি যেটা নিজেরা বাড়িতেও বানাতে পারবে  বা বাজার থেকেও কেনা যাবে।  স্কুল-কলেজে মিল হিসেবে এটি অন্তর্ভূক্ত করা গেলে আয়রন ও রক্তাল্পতা ঘাটতি কমবে।” 

এছাড়া প্রসবজনিত ফিস্টুলা বা পানি ঝরা সমস্যার ’ম্যানেজমেন্ট’ নিয়ে কাজ করার ইচ্ছে রয়েছে বলেও জানালেন তিনি।    

এবারের বিজয়ী বিজ্ঞানী ফারহানাকে আগামী বছর পঞ্চম বার্ষিক ইনোভেশন পিচ প্রতিযোগিতার আসরে দেখা যাবে বিচারকের আসনে।