হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক স্থাপনে ধর্মীয় মতামত চেয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশনে দুই বছর আগে চিঠি দেওয়া হয়। তবে কোনো সমাধান এখনও দেয়নি ইসলামিক ফাউন্ডেশন।
মা-হারা নবজাতক কিংবা মা থাকলেও বঞ্চিত শিশুদের জন্য মায়ের দুধের ব্যবস্থা করতে ২০১৭ সাল থেকে কাজ শুরু করে ঢাকার মাতুয়াইলের শিশু-মাতৃ স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট (আইসিএমএইচ)।
২০১৯ সালের ১ ডিসেম্বর মিল্ক ব্যাংকের কাজ শুরুর কথা ছিল। এজন্য বিদেশ থেকে আধুনিক যন্ত্রপাতিও আনা হয়।
এই পরিকল্পনা শুনেই হালাল-হারামের বিষয় জড়িয়ে আছে জানিয়ে উদ্যোগের বিরোধিতায় নামেন ওলামাদের একটি অংশ। এতে আইনগত ও ধর্মীয় সমস্যা তৈরি হবে দাবি করে উকিল নোটিসও পাঠানো হয়।
বিষয়টি নিয়ে আলেমদের পক্ষ থেকেও দুই ধরনের মতামত আসে। এক পক্ষ বলছেন, এটা করা হলে ধর্মীয় দিক থেকে জটিলতা তৈরি হবে। আলেমদের আরেকপক্ষের মত, ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে বসে বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধান করা যায়।
এই অবস্থায় হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক সম্পর্কে ধর্মীয় মতামত জানতে চেয়ে ২০১৯ সালের ৩০ অগাস্ট ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালকের কাছে চিঠি পাঠান প্রস্তাবিত ‘হিউম্যান মিল্ক ব্যাংকের’ সমন্বয়ক ডা. মো. মজিবুর রহমান।
এছাড়া যেসব মা মাতৃদুগ্ধ দান করবেন এবং যেসব নবজাতক দুধ পান করবে তাদের সব ধরনের তথ্য কম্পিউটার ও রেজিস্ট্রার খাতায় লিখে রাখা হবে। দুধ দানকারী মা এবং গ্রহণকারী শিশু প্রত্যেকেই একটি করে কার্ড পাবেন। এতে জানা যাবে, কোন বাচ্চা কোন মায়ের দুধ পান করেছিল।
সেই চিঠির জবাব দুই বছরেও আসেনি।
বিষয়টি নিয়ে চাইলে মিল্ক ব্যাংকের উদ্যোক্তা এবং শিশু মাতৃ স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ডা. মজিবুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মতামত না আসায় হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক স্থাপনের প্রক্রিয়াটি ঝুলে আছে।
“এটা (মিল্ক ব্যাংক) যে ‘হালাল’ তা ইসলামিক ফাউন্ডেশন সার্টিফাই করবে। এক পর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ইতিবাচক অবস্থান ছিল। কিন্তু এরমধ্যে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজি মারা গেছেন, সচিব পরিবর্তন হয়েছেন। এরমধ্যে আবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকও চেঞ্জ হয়েছেন। নানা কারণেই এটা আটকে আছে।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুফতি মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ২০১৯ সালে মিল্ক ব্যাংক স্থাপনের বিষয়ে চিঠি পাওয়ার পর কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়নি।
“আমরা এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। এটা জাতীয় বিষয়, এককভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়। কিন্তু যে প্রক্রিয়ায় বলা হচ্ছে, এটা হবে এভাবে বৈধতা দেওয়া যাবে না। এখন পর্যন্ত এটা এভাবেই আছে।”
বিশ্বের অনেক মুসলিম প্রধান দেশে মিল্ক ব্যাংক চালু আছে- একথা বলা হলে তিনি বলেন, “এটা আমাদের দেখার বিষয় না। এখন এত কথা বলার সময় নাই, ব্যস্ত আছি।”
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক মুশফিকুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে তিনি মুফতি আবদুল্লাহর সঙ্গে কথা বলবেন।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিষয়টি তার জানা নেই। তিনি খোঁজ নিয়ে দেখবেন।
“দেখি কী অবস্থায় আছে। সবকিছু জানতে হবে। সে সময় তো ছিলাম না, তাই বলতে পারব না বিষয়টা।”
গবেষণা তথ্যের বরাত দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস ও গাইনি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রেজাউল করিম কাজল বলেন, প্রতিদিন বাংলাদেশে ৮ হাজার বাচ্চা জন্ম নেয়, যার মধ্যে ১৫২ জন নবজাতক মারা যায়। আর প্রতি এক লাখ শিশুর জন্ম দিতে গিয়ে ১৭৩ জন মা মারা যান।
সন্তান মারা গেছে এমন মা এবং মাতৃহীন নবজাতক এবং যেসব মা শারীরিক জটিলতার কারণে নবজাতককে বুকের দুধ খাওয়াতে পারছেন না তাদের জন্য হিউম্যান মিল্কব্যাংক ভালো উপকার বয়ে আনতে পারে। যে মায়ের সন্তান মারা গেছেন তিনি অন্য বাচ্চাকে দুগ্ধ দান করতে চাইলেও মিল্কব্যাংক ভালো উপায় হতে পারে।
তিনি বলেন, “দুধ পান করানো মা কিংবা অন্য মায়ের দুধ পান করা শিশুর পরিচয় পাওয়া যাবে না-এসব কারণ দেখিয়ে মিল্ক ব্যাংক প্রতিষ্ঠা আটকে রাখা ঠিক হবে না।
“এই ডিজিটাল যুগে পরিচয় রাখা যাবে না এমন কিছু নাই। প্রত্যেকটি মায়ের একটি ভোটার আইডি কার্ড আছে। কোন মা অন্যের সন্তানকে মাতৃদুগ্ধ পান করাল, ডেটাবেইজ রাখা কোনো কঠিন বিষয় না। সুতরাং যেসব শিশুর মাতৃদুগ্ধ প্রয়োজন তাদের এই ডিজিটাল সিস্টেমে বৈজ্ঞানিকভাবে একটি পন্থা অবলম্বন করে অবশ্যই মিল্ক ব্যাংক তৈরি করা প্রয়োজন।”