শিশুর জন্য মায়ের দুধ: নীতি-সহায়তায় ‘শীর্ষে’ বাংলাদেশ

শিশুদের মায়ের বুকের দুধ দিতে উৎসাহিত করতে সরকারের নীতি ও কর্মসূচির নিরিখে বিশ্বের ৯৮টি দেশের মধ্যে শীর্ষ রয়েছে বাংলাদেশ।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 August 2021, 08:38 AM
Updated : 24 August 2021, 08:38 AM

ওয়ার্ল্ড ব্রেস্টফিডিং ট্রেন্ডস ইনিশিয়েটিভ (ডব্লিউবিটিআই) ‘মেকিং আ ডিফারেন্স’ শিররোনামে প্রকাশিত ২০২০ সালের প্রতিবেদনে এই বৈশ্বিক সূচক প্রকাশ করেছে, যার লক্ষ্য হল  শিশুদের মাতৃদুগ্ধ দানে কোন দেশ কতটা অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে পারছে, সেই ধারণা পাওয়া।

এ বিষয়ে সরকারের নেওয়া নীতি কাঠামো এবং তার বাস্তবায়নে নেওয়া কর্মসূচির তথ্য বিশ্লেষণ করে দশটি মানদণ্ডের ভিত্তিতে ১০০ ভিত্তিক এই সূচক তৈরি করেছে ডব্লিউবিটিআই।

আর সুপারিশসহ প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে ব্রেস্টফিডিং প্রমোশন নেটওয়ার্ক অব ইনডিয়া (বিপিএনআই) এবং ইন্টারন্যাশনাল বেবি ফুড অ্যাকশন নেটওয়ার্ক (আইবিএফএএন) এর দক্ষিণ এশিয়া শাখা।

সূচকে শীর্ষে থাকা বাংলাদেশের স্কোর সব মিলিয়ে একশর মধ্যে ৯১ দশমিক ৫। আর ৯১ স্কোর নিয়ে শ্রীলঙ্কা রয়েছে দ্বিতীয় অবস্থানে। মাতৃদুগ্ধ দানের অনুকূল পরিস্থিতির বিচারে ৯৮ দেশের মাধ্যে এ দুটি দেশই সূচকে সবুজ তালিকায় রয়েছে। 

দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর মধ্যে ৮৯ স্কোর নিয়ে আফগানিস্তান তালিকার তৃতীয় অবস্থানে, ৬৯ দশমিক ৫ স্কোর নিয়ে মালদ্বীপ ১৯তম অবস্থানে, ৬৪ দশমিক ৫ স্কোর নিয়ে পাকিস্তান ৩৩তম অবস্থানে, ৬৩ স্কোর নিয়ে নেপাল ৩৯তম অবস্থানে, ৫৫ স্কোর নিয়ে ভুটান ৫৯তম অবস্থানে এবং ৪৫ স্কোর নিয়ে ভারত ৭৯তম অবস্থানে রয়েছে।

তালিকার সর্বশেষ, অর্থাৎ ৯৮তম অবস্থানে থাকা লিবিয়ার স্কোর ১৯। যে তিনটি দেশকে সূচকে লাল তালিকায় রাখা হয়েছে, তার মধ্যে লিবিয়া ছাড়াও আছে কেপ ভার্দে আর অস্ট্রেলিয়া।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশুর নানা শারীরিক জটিলতা আর মৃত্যুঝুঁকি কমাতে মাতৃদুগ্ধ হল রক্ষাকবচ। মায়ের দুধই শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে ভবিষ্যত সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারে। তাই কোনো অবস্থাতেই দুই বছর পর্যন্ত শিশুকে বুকের দুধ থেকে বঞ্চিত করা যাবে না।

বিশ্বে প্রতি পাঁচটি শিশুর তিনজনই জন্মের প্রথম ঘণ্টায় মাতৃদুগ্ধ পায় না। দুই বছর পর্যন্ত স্তন্যপান করাতে পারলে বছরে ৮ লাখ ২০ হাজার শিশুর জীবন বাঁচানো সম্ভব।

দুগ্ধদান করে মায়েরাও জীবনসংহারী অনেক রোগ ঠেকিয়ে দিতে পারেন; সেজন্য তাদের আরও উৎসাহিত করতে বলেন চিকিৎসকরা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী, জন্মের প্রথম ঘণ্টাতেই নবজাতককে বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। প্রথম ৬ মাস শুধুমাত্র বুকের দুধই খাবে শিশু, এমনকি পানিও খাওয়ানো যাবে না। এরপর পরিপূরক খাদ্যের সঙ্গে অন্তত দুই বছর বয়স পর্যন্ত মায়ের দুধ চালিয়ে যেতে হবে।

এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে অগাস্টের প্রথম সপ্তাহে ‘বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ’ পালিত হয়ে আসছে সেই ১৯৯২ সাল থেকে। কিন্তু এখনও জন্মের প্রথম ছয় মাস শুধু বুকের দুধ খাওয়ানো হয় বিশ্বের মাত্র ৪১ শতাংশ শিশুকে।

এই হারকে ২০২৫ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছে ওয়ার্ল্ড হেলথ অ্যাসেম্বলি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা বিভাগের পরিচালক ফ্রাপন্সেকো বিয়াঙ্কা বলেন, নীতি নির্ধারকরা যখন দেখবেন যে সামান্য বিনিয়োগ, সঠিক পদক্ষেপ আর পরিকল্পনার বাস্তবায়নেই বড় ধরনের সাফল্য পাওয়া সম্ভব, তারা পরিস্থিতি বদলাতে উদ্যোগী হবেন। ওয়ার্ল্ড ব্রেস্টফিডিং ট্রেন্ডস ইনিশিয়েটিভ সেই গুরুত্বটাই তুলে ধরেছে।”