নারীর জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ১১ পরামর্শ

শরীরের যত্ন নেওয়ার অর্থ হল নিজেকে যত্ন করা; একই সঙ্গে প্রিয়জনের খেয়াল রাখা। নারীদের নিজের যত্নে যে ১১টি বিষয় নিয়মিত খেয়াল রাখা দরকার তার একটি তালিকা রয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 July 2021, 08:34 AM
Updated : 30 July 2021, 08:48 AM

রক্তচাপ

হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক ও কিডনি রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় উচ্চ রক্তচাপ। নিজের রক্তচাপ কত তা পূর্ণ বয়স্ক সব নারীরই জানা থাকা দরকার। বিশেষ করে বাড়তি মেদ যাদের আছে, তারা হাইপারটেনশনের ঝুঁকিতে থাকেন একটু বেশি। এ কারণে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বছরে অন্তত একবার শারীরিক পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দিচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।    

রক্তে চিনি

অতিরিক্ত ওজন এবং বংশানুক্রমে কারো গর্ভকালীন ডায়বেটিস রোগের ইতিহাস থাকলে তা নারীর স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। ফলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়মিত পরীক্ষা করে দেখতে হবে; সেই সঙ্গে মেনে চলতে হবে চিকিৎসকের পরামর্শ।    

বডি মাস ইনডেক্স

শরীরে অতিরিক্ত মেদ জমছে কি না তা বুঝতে নারীকে নিজের বডি মাস ইনডেক্স বা বিএমআই সম্পর্কে জানতে হবে। কতদিন পর পর এই বিএমআই মেপে দেখতে হবে তার কোনো ধরাবাঁধা নিয়ম নেই। তবে সচেতন থাকাটা জরুরি। কারণ স্থুলতার সমস্যা ডায়বেটিস, হৃদরোগ এবং অনেক ক্ষেত্রে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। 

হাড়ের ঘনত্ব

বয়স ৬৫ বছর হলে নারীকে অবশ্যই অস্টিওপোরোসিস পরীক্ষা করে দেখতে হবে। যদি কারো হাড় ভাঙা অথবা ওজন কম থাকার সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে এই পরীক্ষা আরো আগে থেকেই করে দেখা জরুরি। 

স্তন ক্যান্সার

নারী ক্যান্সার রোগীদের মধ্যে বেশিরভাগই স্তন ক্যান্সারে ভোগেন। স্তন ক্যান্সারে নারীর মৃত্যুঝুঁকিও কম নয়। এক্ষেত্রে গোড়া থেকেই ক্যান্সার শনাক্ত করা গেলে বেঁচে যেতে পারে রোগীর জীবন। স্তনে ও বগলে লাম্প বা পিণ্ড দেখা দেওয়া, স্তনের ত্বক অস্বাভাবিক কুঁচকে যাওয়া, স্তন বৃন্ত থেকে তরল বা কখনও কখনও রক্ত বের হওয়া এ ক্যান্সারের সম্ভাব্য লক্ষণ হয়ে থাকতে পারে। মেমোগ্রাফি পরীক্ষায় স্তন ক্যান্সার ধরা পড়ে। সাধারণত ৫০ বছর বয়স থেকে দুই বছর পর পর স্তন ক্যান্সার পরীক্ষা করানো জরুরি। তবে পরিবারে কারো স্তন ক্যান্সারের ইতিহাস থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আরো আগে থেকেই  স্বাস্থ্য পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যাওয়া যেতে পারে। 

কোলন ক্যান্সার

নারী ক্যান্সার রোগীদের মধ্যে কোলন ক্যান্সার রয়েছে ঝুঁকির তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে। তবে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার মধ্যে থেকে প্রাথমিক অবস্থায় এ ক্যান্সার শনাক্ত করা গেলে মৃত্যুঝুঁকি কমে আসে।  কোলন বা মলাশয়ের কোন জায়গায় ক্যান্সার রয়েছে তার উপর ভিত্তি করে এর উপসর্গের বিভিন্নতা দেখা যায়। পায়খানার সঙ্গে রক্ত যাওয়া, অথবা পেটে ব্যথা, মলত্যাগের ধরন পরিবর্তন (কখনও ডায়রিয়া, কখনও কষা), রক্তশূন্যতা (দুর্বলতা, শ্বাসকষ্ট) ইত্যাদি এ রোগের প্রাথমিক লক্ষণ। অবস্থা গুরুতর হলে অতিরিক্ত ওজনশূন্যতা, পেটে চাকা, পেটে পানি, কাশির সঙ্গে রক্ত আসার মত উপসর্গও দেখা দিতে পারে। এ রোগ প্রাথমিক অবস্থায় যাতে ধরা পড়ে, সেজন্য সাধারণভাবে ৫০ বছর বয়স থেকেই নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষায় আওতায় আসা দরকার। অ্যান্ডোসকপি অথবা পায়খানার সঙ্গে রক্ত যায় কি না তা পরীক্ষা করে দেখা যেতে পারে। বায়োপসি করে ক্যান্সার নির্ণয়ের পর সিটি স্ক্যান, রক্তে অ্যান্টিজেনের পরিমাণ ইত্যাদি বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে ক্যান্সারের ধাপ নির্ণয় করা যায়। যদি জিনগতভাবে এই রোগ হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তাহলে অবশ্যই আগে থেকে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

দাঁত

মুখের স্বাস্থ্যে নজর না দিলে দাঁত ও মাড়ির সংক্রমণে শারীরিক ধকল সইতে হবে বেশ। তাই নিয়মিত ব্রাশ করতে হবে। দাঁত ও মাড়ির সুস্বাস্থ্যের জন্য ধূমপান ও চিনি জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। প্রতি ছয় মাসে একবার দাঁতের চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। এক্স-রে ও অন্যান্য দাঁতের পরীক্ষা থেকে কোনো রোগ সহজেই শনাক্ত করা যেতে পারে। শুরুতেই রোগ ধরা পড়লে চিকিৎসার মাধ্যমে ঝুঁকি কমানো ও সেরে ওঠার সম্ভাবনাও বেশি থাকে।    

লিপিড প্রোফাইল

শরীরে হৃদরোগ অথবা স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ছে কি না জানতে লিপিড প্রোফাইলে চোখ বুলিয়ে নেওয়াটা জরুরি। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে প্রয়োজনে ঘন ঘন এই স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা যেতে পারে। ৪০ পেরোলেই, বিশেষ করে যাদের স্থুলতা বা ডায়বেটিস রয়েছে, তাদের জন্য লিপিড প্রোফাইল পরীক্ষা করে রক্তে কোলেস্টোরেলের পরিমাণ জেনে নেওয়াটা জরুরি। এলডিএল বা খারাপ কোলেস্টেরল এবং এইচডিএল বা ভালো কোলেস্টেরল ছাড়াও ট্রাইগ্লিসারাইড কী পরিমাণে রয়েছে জানা যায় এই পরীক্ষা থেকে।

জরায়ু মুখের ক্যান্সার

জরায়ু বা ইউটেরাসের নিচের দিকের অংশকে জরায়ুমুখ বা সারভিকস বলে। হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস থেকে জরায়ুমুখের ক্যান্সার হতে পারে নারীর। শরীরে জীবাণু প্রবেশের পর ১৫ থেকে ২০ বছরও সময় লাগতে পারে এ ধরনের ক্যান্সার তৈরি হতে। তাই নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করালে এ রোগ সহজে নির্ণয় করে চিকিৎসা শুরু করা যায়। এর পরীক্ষায় একটি বিশেষ ক্যামেরা দিয়ে জরায়ুমুখ ও যোনিপথ অতি সূক্ষ্মভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়। সন্দেহজনক কিছু নজরে এলে প্যাপ স্মেয়ার বা কিছু কোষ বা সেল নিয়ে পরীক্ষা করা হয়। নারীর বয়স ৩০ বছর পেরোলেই জরায়ুমুখের ক্যান্সার পরীক্ষা করানো উচিৎ। একবার পরীক্ষার পর যদি ফল নেগেটিভ আসে, তাহলে পরীক্ষা ৩ থেকে ৫ বছর পর করালেও হয়।

ত্বকের যত্ন

সারা শরীরে যে কোনো অংশে নতুন কোনো তিল দেখা দিলে অথবা আগের তিলে বিশেষ কোনো পরিবর্তন দেখা দিলে তা ত্বকের ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ হতেও পারে। রোদে পোড়া ত্বকেও দেখা দিতে পারে ক্যান্সার। আর তাই ত্বকে যে কোনো পরিবর্তন অস্বাভাবিক মনে হলেই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া দরকার যে কোনো নারীর।

দৃষ্টি ও শ্রবণ জটিলতা

বয়সের সঙ্গে সঙ্গে দৃষ্টি ও শ্রবণশক্তি ক্ষীণ হতে পারে। খুব সহজে রাস্তার নির্দেশনা পড়া অথবা একটা রেস্তোরাঁয় শোরগোলের মধ্যেও চট করে যে কোনো কথা কানে শোনার সেই সক্ষমতা কমে আসতে পারে এক সময়। এক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তাদের ‘হিয়ারহু’ অ্যাপ্লিকেশনটি ডাউনলোড করার পরামর্শ দিচ্ছে।  বিনামূল্যের এই অ্যাপ ব্যবহার করে দৃষ্টি ও শ্রবণশক্তি পরীক্ষা করে দেখা যাবে। সঠিক পাওয়ারের চশমা অথবা কনট্যাক্ট লেন্স ব্যবহার হচ্ছে কি না তাও বোঝা যাবে।

মোট কথা, শরীরে যে কোনো পরিবর্তন যদি নিজের কাছেই অস্বাভাবিক মনে হয়, সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।