কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন

একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের কারণে যাকে মানুষ ‘মিরপুরের কসাই’ নামে চেনে, সেই জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

গোলাম মুজতবা ধ্রুবতানিম আহমেদ ওবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Feb 2013, 10:32 PM
Updated : 17 Sept 2013, 03:58 AM

একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের কারণে যাকে মানুষ ‘মিরপুরের কসাই’ নামে চেনে, সেই জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

কাদের মোল্লার উপস্থিতিতে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল-২ মঙ্গলবার এই রায় ঘোষণা করে।

ট্রাইব্যুনালের সদস্য বিচারপতি মো. শাহীনুর ইসলাম সকাল সাড়ে ১০টায় জনাকীর্ণ আদালতে রায়ের ১৩৫ পৃষ্ঠার সারাংশের প্রথম অংশ পড়া শুরু করেন। ট্রাইব্যুনালের অপর সদস্য বিচারপতি মজিবুর রহমান মিয়া রায়ের দ্বিতীয় অংশ এবং ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান তৃতীয় ও চূড়ান্ত রায়ের অংশ পড়েন।

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের ছয়টি অভিযোগের মধ্যে পাঁচটিতে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লার অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে এই দণ্ড দেয়া হয় বলে জানায় ট্রাইব্যুনাল।

এর মধ্যে মিরপুর বাঙলা কলেজের ছাত্র পল্লবকে গুলি করে হত্যার নির্দেশ, মিরপুরে কবি মেহেরুননিসা, তার মা এবং দুই ভাইকে হত্যা এবং সাংবাদিক খন্দকার আবু তালেবকে আরামবাগ থেকে তুলে নিয়ে জল্লাদখানা পাম্পহাউসে নিয়ে জবাইয়ের ঘটনায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত না হলেও সংশ্লিষ্টতার কারণে কাদের মোল্লার ১৫ বছর করে কারাদণ্ডের আদেশ হয়েছে। 

কেরানীগঞ্জের ভাওয়াল খানবাড়ি এবং ঘাটারচরে শতাধিক গ্রামবাসীকে হত্যার ঘটনায় কাদের মোল্লার সংশ্লিষ্টতা প্রসিকিউশন প্রমাণ করতে পারেনি বলে রায়ে জানানো হয়।

আর মিরপুরের আলোকদী গ্রামে গণহত্যা এবং অন্য এক ঘটনায় হযরত আলী লস্করকে তার স্ত্রী, দুই মেয়ে এবং দুই বছরের এক ছেলেকে হত্যা এবং লস্করের মেয়েকে ধর্ষণের ঘটনায় অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল।

২০১০ সালে ট্রাইব্যুনাল গঠনের মধ্য দিয়ে বহু প্রতীক্ষিত এই বিচার প্রক্রিয়া শুরুর পর এটি হলো যুদ্ধাপরাধের মামলার দ্বিতীয় রায়। রায় ঘোষণার দিন থেকেই তা কার্যকর হবে বলে উল্লেখ করেন বিচারক।

এর আগে গত ২১ জানুয়ারি জামায়াতের সাবেক রুকন আবুল কালাম আযাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসির আদেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল। এছাড়া জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলাটি যুক্তিতর্কের শুনানি শেষে রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রয়েছে।

দুই ট্রাইব্যুনালে জামায়াতের সাবেক ও বর্তমান আমিরসহ আরো ছয় জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের পর শুনানি চলছে।

দুই পক্ষেই ‘হতাশা’

রায়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় প্রসিকিউটর মো. আলী বলেন, “এই রায়ে আমরা খুশি না। আমরা মৃত্যুদণ্ড আশা করেছিলাম।”

সরকারের প্রধান আইন কর্মকর্তা মাহবুবে আলম বলেন, এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে কি না- সে বিষয়ে পরে আলোচনা করে  সিদ্ধান্ত হবে।   

অন্যদিকে আসামি পক্ষের আইনজীবী আব্দুর রাজ্জাক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগই প্রমাণ হয়নি। আমরা এই রায়ের বিরুদ্ধে অবশ্যই আপিল করব।”   

রায় ঘোষণার পর সচিবালয়ে নিজের কার্যালয়ে আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, “এ রায়ে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। জণগণ অন্য কিছু আশা করেছিল। আমরা হতাশ হয়েছি।”

আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ বলেন, “রায়ের বিরুদ্ধে উভয় পক্ষের আপিল করার সুযোগ আছে। প্রসিকিউশন দল যদি মনে করে, তাহলে আপিল করতে পারে। সেটা তাদের মতামতের ওপর নির্ভর করে।”

কাদের মোল্লাকে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে সোমবার রাতেই ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে আসা হয়েছিল। রায় শোনার জন্য মঙ্গলবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে তাকে ট্রাইব্যুনালে নিয়ে আসা হয়।

আদালতে হাজির করার পর এজলাসে দাঁড়িয়ে সাদা পাঞ্জাবী ও কোটি পরিহিত কাদের মোল্লা কিছু বলার অনুমতি চান। তবে বিচারক তাকে অনুমতি না দিয়ে রায় পড়া শুরু করেন।  

বিচারকরা দেড় ঘণ্টা ধরে রায় পড়ার পর কাদের মোল্লা আল্লাহু আকবর বলে উঠে দাঁড়ান এবং বলেন, এই রায়ে তার প্রতি অবিচার করা হয়েছে।

পরে তাকে প্রিজন ভ্যানে করে আবার কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।

কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবি জানানো হয় ট্রাইব্যুনালের সামনে।

‘এ রায় চাইনি’

রায় ঘোষণার আগে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের তিনটি ইউনিট সকাল সাড়ে ১০টার দিকে হাইকোর্ট মাজার সংলগ্ন ফটকে অবস্থান নিয়ে কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে স্লোগান দিতে থাকে। যুদ্ধাপরাধের মামলার অন্য অসামিদের বিচারও দ্রুত সম্পন্ন করার দাবি জানান মুক্তিযোদ্ধারা।    

কিন্তু রায়ে যাবজ্জীবনের ঘোষণা আসায় তাদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে হতাশা। এর প্রতিবাদ জানিয়ে হাই কোর্টের বাইরে বিক্ষোভও করেন তারা।

মুক্তিযোদ্ধা কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি হেলাল মোর্শেদ বলেন, “এ রায় আমরা মেনে নিতে পারি না। কাদের মোল্লার অবশ্যই ফাঁসি হওয়া উচিত ছিল।”

এই রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল করা উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এ রায়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে শহীদ জায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী বলেন, “এটা জাতির জন্যে দুর্ভাগ্য। আমি খুবই দুঃখ পেয়েছি, মর্মাহত।”

“যে কাদের মোল্লা ছিল খুনি, যে মানুষের শরীর দ্বিখণ্ডিত করেছে সেই কসাইয়ের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিল ট্রাইব্যুনাল।... এখন এ কসাই জামাই আদরে থাকবে কারাগারে, ডিভিশন পাবে। আর সরকার পরিবর্তন হলে সংবর্ধনা নিয়ে বেরিয়ে আসবে। এটা জাতির জন্য দুর্ভাগ্য।”

নাট্যব্যক্তিত্ব ও মুক্তিযোদ্ধা নাসিরউদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু বলেন,  “এ রায়ে আসামিকে যে শাস্তি দেয়া হয়েছে তাতে খুশি হতে পারিনি। এ রায় গ্রহণ করা সম্ভব না।”

মুক্তিযোদ্ধা ও  শহীদ পরিবার যে রায় প্রত্যাশা করেছিল এতে তার প্রতিফলন হয়নি বলে মনে করেন তিনি।

ওয়ার ক্রাইম ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটির আহ্বায়ক এমএ হাসান বলেন, “মিরপুরের এ কসাইয়ের হত্যাকাণ্ড যেখানে প্রমাণিত সেখানে মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে কখনো যাবজ্জীবন দণ্ড হতে পারে না। যারা মিরপুরে শহীদ হয়েছেন, যারা ভুক্তভোগী; তাদের কাছে এ রায়ে আশার প্রতিফলন হয়নি।”

রায় শুনে বিস্মিত হলেও এ বিচার হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের সহসভাপতি কে এম সফিউল্লাহ।

তিনি বলেন, “আল্টিমেটলি যুদ্ধাপরাধের যে বিচার হচ্ছে তাতেই আমরা সন্তুষ্ট।”

জামায়াতের প্রত্যাখ্যান

যুদ্ধাপরাধের এই বিচার ঠেকানোর ঘোষণা দিয়ে মঙ্গলবার সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল করার পাশাপাশি রায় প্রত্যাখ্যান করে বুধবারও হরতাল দিয়েছে কাদের মোল্লার দল জামায়াতে ইসলামী।

দলটির ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান দুপুরে এক বিবৃতিতে বলেন, ট্রাইব্যুনাল আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে যে রায় ঘোষণা করেছে তা ‘সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত এবং সরকার নির্দেশিত’।

“এ রায় প্রত্যাখ্যান করার পাশাপাশি সরকারের ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত ও বিচারের নামে অবিচারের প্রতিবাদে আমাদের ঘোষিত গণতান্ত্রিক কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে আগামীকাল বুধবারও সকাল-সন্ধ্যা হরতাল কর্মসূচি পালিত হবে।”

‘আন্দোলনের মাধ্যমে’ আব্দুল কাদের মোল্লাসহ জামায়াতের সব শীর্ষ নেতাকে মুক্ত করে আনা হবে বলেও উল্লেখ করা হয় বিবৃতিতে।

মঙ্গলবার হরালে রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে ঝটিকা মিছিল, বিক্ষিপ্ত বোমাবাজি ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা করে জামায়াত নেতাকর্মীরা। হরতালে চট্টগ্রামে পুলিশ বক্সে হামলার ঘটনায় নিহত হন একজন।

ট্রাইব্যুনাল এলাকায় কড়া নিরাপত্তা

কড়া নিরাপত্তা

রায়ের আগের দিন থেকেই ট্রাইব্যুনাল এলাকায় নেয়া হয় কড়া নিরাপত্তা। সকাল থেকে হরতালের মধ্যে দোয়েল চত্বর, হাই কোর্ট, প্রেসক্লাব, পল্টনে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সতর্ক থাকতে দেখা যায়। হাই কোর্ট মাজার সংলগ্ন ফটকের সামনে র‌্যাব সদস্যরা তিন সারিতে অবস্থান নেন।

পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) বোমা নিস্ক্রিয়করণ দল ও সোয়াত দলও অবস্থান নেয় ট্রাইব্যুনাল এলাকায়। ট্রাইব্যুনালের ভেতর ও বাইরে বসানো হয় অর্ধ শতাধিক ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা।

পুলিশের রমনা বিভাগের উপ কমিশনার সৈয়দ নুরুল ইসলাম বলেন, কোনো ধরণের ‘ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম’ হলে, তা প্রতিহত করতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী পুরোপুরি প্রস্তত।

“ধ্বংসাত্মক কার্যক্রমের সর্বোচ্চ পর্যায় মাথায় রেখেই আমরা প্রস্তুতি নিয়েছি। ট্রাইব্যুনাল, সুপ্রিম কোর্ট এবং এর আশেপাশের এলাকায় নিরাপত্তার আওতায় আনা হয়েছে।”

যুদ্ধাপরাধের মামলার এই বিচার দেখতে আসা সাংবাদিক ও আইনজীবীসহ সবার স্থান সঙ্কুলানের জন্য রায় ঘোষণা করা হয় ট্রাইব্যুনাল-১ এর কক্ষে। এর আগে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে তল্লাশি চালিয়ে তাদের ট্রাইব্যুনালে প্রবেশ করতে দেয়া হয়। বিচারক, অ্যাটর্নি জেনারেল, এমনকি পুলিশের গাড়িও ট্রাইব্যুনালে প্রবেশের আগে পরীক্ষা করে (স্ক্রিনিং) দেখা হয়।

রায় ঘোষণার পর ‘অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি এড়াতে’ পুলিশের সতর্কা আরো বেড়ে যায়।

ট্রাইব্যুনালের ভেতরে আর বাইরে মোতায়েন করা হয় বাড়তি পুলিশ।

এ সময় ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রবেশ পথে দর্শনার্থী ও গণমাধ্যম কর্মীরা কয়েক দফা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের শিকার হন।

ট্রাইব্যুনালের ডেপুটি রেজিস্ট্রার শওকত হোসেন বলেন, অনেকে ট্রাইব্যুনালে প্রবেশের পাশ পেয়ে বাইরে বিক্রি করে দেন।

তাই প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত করতেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী একটু বাড়তি জিজ্ঞাসাবাদ করে।

মামলার ইতিবৃত্ত

মুক্তিযুদ্ধকালে মোস্তফা নামের এক ব্যক্তিকে হত্যার অভিযোগে ২০০৭ সালের ১৭ ডিসেম্বর কাদের মোল্লাসহ কয়েকজন জামায়াত নেতার বিরুদ্ধে কেরানীগঞ্জ থানায় একটি মামলা হয়। এছাড়া ২০০৮ সালে পল্লবী থানায় আরো একটি মামলা হয় কাদেরের বিরুদ্ধে। এ মামলাতেই ২০১০ সালের ১৩ জুলাই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

২০১১ সালের ১ নভেম্বর কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে জমা দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনে হত্যা, খুন, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনে রাষ্ট্রপক্ষ। এরপর ২৮ ডিসেম্বর অভিযোগ আমলে নেয় ট্রাইব্যুনাল।

গতবছর ২৮ মে ট্রাইব্যুনাল-২ কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে খুন, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের ছয়টি ঘটনায় তার বিচার শুরুর আদেশ দেন বিচারক।

দুই পক্ষের যুক্তিতর্কের শুনানি শেষে চলতি বছর ১৭ জানুয়ারি ট্রাইব্যুনাল মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখে।

কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের প্রথম অভিযোগে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ৫ এপ্রিল তার নির্দেশে মিরপুর বাঙলা কলেজের ছাত্র পল্লবকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

দ্বিতীয় অভিযোগ অনুযায়ী, ২৭ মার্চ কাদের মোল্লা সহযোগীদের নিয়ে কবি মেহেরুননিসা, তার মা এবং দুই ভাইকে তাদের মিরপুরের বাসায় গিয়ে হত্যা করেন।

কাদের মোল্লা তার সহযোগীদের নিয়ে একাত্তরের ২৯ মার্চ সাংবাদিক খন্দকার আবু তালেবকে আরামবাগ থেকে তুলে নিয়ে জল্লাদখানা পাম্পহাউসে নিয়ে জবাই করে হত্যা করেন বলে তৃতীয় অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

চতুর্থ অভিযোগে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ২৫ নভেম্বর কাদের মোল্লা রাজাকার বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে কেরানীগঞ্জের ভাওয়াল খানবাড়ি এবং ঘাটারচরে শতাধিক গ্রামবাসীকে হত্যা করেন। এই অভিযোগ প্রসিকিউশন প্রমাণ করতে পারেনি বলে রায়ে জানানো হয়।

কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে পঞ্চম অভিযোগে বলা হয়, তিনি একাত্তরের ২৪ এপ্রিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে নিয়ে মিরপুরের আলোকদী গ্রামে যান এবং রাজাকার সদস্যদের নিয়ে গণহত্যা চালান। ওই ঘটনায় নিহত হন ৩৪৪ জনের বেশি।

ষষ্ঠ অভিযোগে বলা হয়, একাত্তরের ২৬ মার্চ কাদের মোল্লা তার সহযোগীদের নিয়ে মিরপুর ১২ নম্বর সেকশনে হযরত আলী লস্করের বাসায় যান। সেখানে কাদের মোল্লার নির্দেশে লস্করের স্ত্রী, দুই মেয়ে এবং দুই বছরের এক ছেলেকে হত্যা করা হয়। এক মেয়ে হন ধর্ষণের শিকার।